শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লোভের ফাঁদে দূরপাল্লার বাস

লোভের ফাঁদে দূরপাল্লার বাস

চার দশকের রেকর্ড ভেঙে ঈদে যাত্রী সংকট

  • বিপরীতচিত্র
  • ভরা মৌসুমেও বাস কাউন্টার ফাঁকা
  • কমলাপুরের রেলস্টেশন ভিড়ে ঠাসা

প্রতিবছর ঈদকে ঘিরে দৌরাত্ম্য বাড়ে পরিবহন সিন্ডিকেটের। ঈদ এলেই বেড়ে যায় টিকিটের দাম। কখনো কখনো দাম বাড়িয়ে দেয়া হয় দ্বিগুণেরও বেশি। বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়ায় যেতে হয় যাত্রীদের। প্রতিবছর ঈদের আগে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে থাকে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। তবে এবারের চিত্রটা একেবারেই উল্টো। বাস কাউন্টারগুলোর নেই চিরছেনা ভিড়। তীব্র যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। যাতে বিলম্ব হচ্ছে বাসের সিডিউল।  প্রতিটি বাসই ছাড়ছে দেরিতে। তবুও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত যাত্রী। যদিও বিপরীত চিত্র কমলাপুর রেল স্টেশনে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকিয়ে নিজেদের পাতা ফাঁদেই পড়তে হয়েছে বাস মালিকদের। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে ঈদের আগে এমন যাত্রী সংকট গত ৪০ বছরেও হয়নি।

এবার ঈদের আগেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর বাসমালিকদের চাপে ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। ফলে বিগত বছরের তুলনায় এমনিতে বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে যাত্রীদের। তার ওপরে ঈদকে ঘিরে নির্ধারিতের দ্বিগুণ ভাড়া চাওয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছে। ঈদের অগ্রিম টিকিটে এ বাড়তি অর্থ চাচ্ছেন তারা। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। বাধ্য হয়েই অধিকাংশ মানুষ ছুটছেন ট্রেনের টিকিটের পেছনে। বাসমালিকদের দাবি, তারা সরকার নির্ধারিত বাসভাড়াই নিচ্ছেন যাত্রীদের কাছ থেকে। অন্য সময় সরকারনির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের ছাড় দেওয়া হয়। এবার ঈদে সেটা হচ্ছে না। তাই যাত্রীরা ভাবছেন, বর্ধিত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করেন মালিকরা।

আরও পড়ুনঃ  তিস্তা ব্যারেজের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণাঞ্চলগামী বেশির ভাগ বাসের টিকিট বিক্রি হয় রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুরে। এই দুটি বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীদের খুব একটা ভিড় নেই।  যাত্রীদের অভিযোগ, এসি বাসগুলোর ভাড়া তুলনামূলক বেশি রাখা হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এসি বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ। আশফাক হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, স্বাভাবিক সময়ে রংপুর পর্যন্ত এসি বিজনেস ক্লাসের টিকিটের দাম ছিলো ১ হাজার ৪০০ টাকা। এখন সহজ ডটকমে এসি বিজনেস ক্লাসে এস আর ট্রাভেলস, নাবিল পরিবহন, শাহ আলী পরিবহনে ভাড়া দেখাচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঝিনাইদহ যাবেন জহিরুল ইসলাম তামিম। তিনি বলেন, আগে ভাড়া ছিলো ৫০০ টাকা, এখন ঈদকে ঘিরে ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা।  অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে কিছু বলতে গেলেই তারা বলেন এটা নাকি সরকার নির্ধারিত ভাড়া। যে কারণে অনেকেই এখন ভিড় করছেন রেলস্টেশনে। আমিও ভাবতেছি ট্রেনের টিকিটের জন্য চেষ্টা করবো। না ফেলে বাড়তি ভাড়া দিয়েই বাসে যেতে হবে।

গাবতলী কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সকাল সাড়ে ৯টার বাস সাড়ে ১১টায়ও ছাড়েনি।  কখন ছাড়বে তাও কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে না। এ বিষয়ে শ্যামলী কাউন্টারের এক টিকিট বিক্রেতা বলেন, যাত্রীসংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে বাস ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না।  দেরি করে ছাড়লেও সিট খালি রেখে যেতে হচ্ছে। দু’একজন যাত্রী যদি পাওয়া যায়, সে আশায় দেরি করে বাস ছাড়া হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  শুরু হয়েছে ওমএস’র চাল-আটা বিক্রি

এবিষয়ে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, স্বাভাবিক সময়ে নির্ধারিত এলাকার বাসে চলাচলের সময় আগে নেমে গেলে সে অনুসারেই ভাড়া রাখা হতো। কিন্তু নির্ধারিত অঞ্চলের বাসে চড়লে যাত্রী যেখানেই নামুক, পুরো ভাড়া রাখা হচ্ছে। তাছাড়া ঢাকা ফেরার সময় যাত্রী পাওয়া যায় না। এছাড়া বাসমালিকেরা সারা বছরে যে নানা রকম ছাড় দিয়ে থাকেন। ঈদে সেই ছাড় আর দেন না। যে কারণে সবাই মনে করেন অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। আসলে সরকারের বেঁধে দেয়া ভাড়াই নেয়া হচ্ছে বলে দাবি তার। তবে এসি বাসে সরকারনির্ধারিত ভাড়া নেই।  মালিকেরা নিজেদের মতো ভাড়া ঠিক করে নেন বলেও জানান তিনি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, গাবতলীসহ অন্যান্য বাস টার্মিনালে এখনই যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। এর পুরোপুরি দায় বাস মালিকদের। তারা ঈদকে কেন্দ্র করে ভাড়া অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে।  এমনিতে করোনার কারণে মানুষের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা চলছে। এরমধ্যে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার কারণে মানুষ ভিন্ন চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ ট্রেনের ছাদে করে বাড়ি যাওয়ার চিন্তা করছেন কেউ আবার ফিটনেসবিহীন বাসে কেউবা ট্রাকে করে বাড়ি ফেরার চিন্তা করছেন। এখনই যদি তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার ঘোষণা না দেয় তাহলে সংকট আরো বেশি ঘণীভুত হবে।

ঈদের আগে ভাড়া কম নিয়েছিলো এখন সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছে এমন বক্তব্যের বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, বাসমালিকদের এমন বক্তব্য যাত্রীদের সাথে প্রতারণার সামিল। বাংলাদেশে এমন কোনো ইতিহাস নেই যে সরকারের বেঁধে দেয়া ভাড়া চাইতে কেউ কম নিয়েছে। বরং যত পারে তত বাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তাছাড়া অন্যান্য সময়ের তুলনায় উৎসবের সময়ে ভাড়া কম হওয়ার কথা। কারণ তখন যাত্রী বেশি থাকে। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা। সরকারকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে তা না হলে সংকট বাড়বে।

সংবাদটি শেয়ার করুন