শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাঙা খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

ভাঙা খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ
  • পানি প্রবাহ বন্ধে সেচ সংকট
  • বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় ফসলের ক্ষতি
  • মিঠাপানি সংকটে তরমুজের আবাদ

গত বছর রাঙ্গাবালিতে ৭ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। এতে উৎপাদন খরচ হয় ১১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫০ টন। বিক্রি হয় ৩২০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালিতে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সরকারি খালের প্রায় দুই কিলোমিটার দখল হয়ে গেছে। দখলদাররা দখল নেওয়া খালের অন্তত ১৫টি স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। বাঁধের কারণে খালে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় বীজতলাসহ ফসল আবাদে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন চাষিরা। অপরদিকে শুকনো মৌসুমেও এ খালের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করতে না পারায় তরমুজ আবাদে বিঘ্ন হচ্ছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া  ইউনিয়নের কোড়ালিয়া  গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটি। ‘ভাঙা খাল’ হিসেবে পরিচিত এ খালটি এক সময়ের খরস্রোতা ছিল। খালে বাঁধ দেওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে খালের দুই পাড়ের চাষিরা। 

স্থানীয়রা জানান, উপকূলীয় এ এলাকায় লবনাক্ততার কারণে তরমুজ আবাদে চাষিদের মিঠাপানির প্রয়োজনীয়তা মেটাতো এ খাল। তবে খাল দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার ফলে মিঠা পানির সংকটে ভূগছেন চাষিরা। এ অবস্থায় বাঁধ কেটে দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করার জন্য স্থানীয় কৃষকরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। 

সরেজমিন রাঙ্গাবালীর কোড়ালিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা  খালে ১৫টি স্থানে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। দাড়ছিড়া নদীর পাড় থেকে পূর্বে  আড়াই কিলোমিটার অংশ বাঁধ দেওয়ায় খালটির ১৫টির মতো পুকুরে পরিনত হয়েছে এবং পুকুরগুলো প্রস্থে কোথাও ৪০ ফুট কোথায় ৬০ ফুট পর্যন্ত আর দৈঘ্যে ৮০ ফুট থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত। খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার ক্ষেতে সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক কৃষক জমি প্রস্তুত করলেও মিঠা পানি সংকটের কারণে তরমুজ চাষে আগ্রহ পাচ্ছেন না। 

আরও পড়ুনঃ  হোটেল সী প্রিন্সেস এখন আইসোলেশন সেন্টার

চাষি আবুল গাজী জানান, তার ৫ একর কৃষিজমি থাকলেও মাত্র ২ একর জমিতে তরমুজ চাষ করছেন। জমিতে গাছ বেরিয়েছে। এখন প্রয়োজন মিঠা পানি, ওষুধ, সার। তবে সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ চলতে, সেখান থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে তার তিন একর জমি তরমুজ চাষের আওতায় আনতে পারেন নি।

কৃষক দুদা কাজী ও খলির কাজী জানান, খালের পাড়ে তাদের বাড়ি হলেও প্রভাবশালীদের খাল দখলের কারণে তারা কয়েক বছর ধরে তরমুজ আবাদ করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় বীজতলা ক্ষতি হয়ে আসছে। বিষয়টি তারা কৃষি বিভাগকে জানিয়েছেন।

এদিকে ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন জানান, ভাঙা খালের দুই পাড়ে অন্তত ২৫০ হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ হেক্টর জমি তরমুজ চাষের আওতায় এসেছে। মিঠা পানির সংকটে  তরমুজ আবাদ কম হচ্ছে।

এদিকে স্থানীয় রাকিব হাওলাদার খালের তিনটি স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। খাল দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে রাকিব হাওলাদার বলেন, আসলে বাড়িতে যাতায়াতের  রাস্তা করার জন্য বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। পরে সেখানে মাছ চাষ করেছেন। তবে কৃষকের সেচ কাজে প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহে কেউ বাঁধা দিচ্ছেনা বলে দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় রিয়াজ দফাদার নামে আরেক ব্যক্তি বাড়ির সামনে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন।  তিনি বলেন,  খালে অনেকেই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছে। তবে বাঁধ কেটে খাল উন্মুক্ত করে দিলে কৃষকের উপকারই হবে ।

আরও পড়ুনঃ  পূজার ছুটিতে দুই দিন বন্ধ বেনাপোল-পেট্রাপোলের কার্যক্রম

উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের তিল্লা মৌজার ভাঙা খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। খালের পশ্চিমে দাড়ছিড়া নদী ও পূর্বে গহিনখালী হয়ে হরিদ্রাখালী নদীতে মিলেছে। খালের  গহিনখালী এলাকায় একটি জলকপাট রয়েছে এবং সেখান থেকেই পানি ওঠা-নামা করছে। তবে পশ্চিমে দাড়ছিড়া নদীর পাড়ে কোড়ালিয়া এলাকায় বাঁধ নির্মিত হওয়া খালের মুখ বন্ধ রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম  বলেন, গত বছর মৌসুমে উপজেলায় ৭ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল। এতে উৎপাদন খরচ হয় ১১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তরমুজ উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬৭ হাজার ৫০ টন। বিক্রি হয়েছিল ৩২০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

তরমুজ ফসল আবাদে মিঠা পানির প্রয়োজনে খালের দুই প্রান্তে বাঁধ দেওয়া হয়। এ সুযোগে অনেকেই এখন খালে একাধিক বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় কৃষক ভোগান্তিতে পড়েছে। অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে। আবার তরমুজের মৌসুমে মিঠা পানির সংকট বাড়ছে। কৃষি কাজের সুবিধার্থে অবৈধ দখলে নেয়া খালের বাঁধ অপসারণ করে খাস খালগুলো উন্মুক্ত রাখা প্রয়োজন। এতে করে তরমুজসহ ফসলের উৎপাদন বাড়কে, লাভবান হবে কৃষক । 

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, কোনো ভাবেই সরকারি খালে বাঁধ দিয়ে পানির স্বভাবিক প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয়  ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন