শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের অস্থিতিশীলতা বাড়ছে

অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে অস্থিতিশীলতা। সরবরাহ সংকটের উদ্বেগ ও ক্রমবর্ধমান চাহিদায় একের পর এক রেকর্ড ভাঙছে জ্বালানি পণ্যটির দাম। ফলে বিপাকে পড়ছে জ্বালানি তেল আমদানিনির্ভর দেশগুলো। হুমকির মুখে রয়েছে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার।

ব্রিটিশ বহুজাতিক জ্বালানি তেল ও গ্যাস কোম্পানি বিপি জানায়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা চলতি বছর মহামারীপূর্ব অবস্থায় ফিরেছে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দৈনিক ১০ কোটি ব্যারেলে। কিন্তু সে অনুপাতে বাড়েনি সরবরাহ। এ কারণে ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়ছে। এদিকে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রাক-মহামারী পর্যায়ে পৌঁছানোয় উত্তোলন বৃদ্ধির অনুরোধ জানায় মার্কিন প্রশাসন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এ অনুরোধ রাখতে অস্বীকৃতি জানায় ওপেক প্লাস।

সম্প্রতি এক বৈঠক শেষে ওপেক প্লাস জানায়, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন চার লাখ ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে একমত হয়েছে জোটের দেশগুলো। এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে না তারা। ওপেক প্লাসের এমন সিদ্ধান্তের পরই দাম বেড়ে যায়। সর্বশেষ কার্যদিবসে আগামী বছরের জানুয়ারিতে সরবরাহের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের চুক্তিমূল্য প্রতি ব্যারেলে ২ ডলার ২০ সেন্ট বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ ডলার ৭৪ সেন্টে। পাশাপাশি চলতি বছরের ডিসেম্বরে সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) চুক্তিমূল্য ২ ডলার ৪৬ সেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি ব্যারেলে দাম ৮১ ডলার ২৭ সেন্টে উন্নীত হয়েছে।

ওপেক প্লাসের একটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র যদি মনে করে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরো বেশি জ্বালানি শক্তির প্রয়োজন রয়েছে তাহলে তারা নিজেরাই সে পরিমাণ তেল উত্তোলন করার সক্ষমতা রাখে।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় তেলের বৈশ্বিক চাহিদা সর্বনিম্নে নামার শঙ্কা

জাপানভিত্তিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান মিজোহুর জ্বালানি তেলের ফিউচার মার্কেট-বিষয়ক পরিচালক বব ইয়াওগার বলেন, ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তে অটল থাকা এবং বাইডেন প্রশাসনের যথাযথ প্রতিক্রিয়ার অভাবে এ পরিস্থিতি চলমান থাকবে। চীন ও অন্যান্য দেশের সমন্বিত উদ্যোগ বাজারে চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে।

এদিকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সংকট মোকাবেলায় সাশ্রয়ী জ্বালানি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে হোয়াইট হাউজ। তারা জানায়, সাশ্রয়ী জ্বালানি সংকট নিষ্পত্তিতে নিজেদের সব সামর্থ্য বিবেচনা করা হবে। এ সময় মার্কিন কৌশলগত পেট্রোলিয়াম মজুদ (এসপিআর) উন্মুক্ত করার সম্ভাবনার কথাও জানায় হোয়াইট হাউজ। এ সংক্রান্ত মার্কিন বিবৃতিতে দেখা যায় চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থানগুলোতে নিয়োগের হারও প্রত্যাশার তুলনায় যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।

নরওয়েভিত্তিক জ্বালানি তেল গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিস্ট্যাড এনার্জির তেল বাজার বিভাগের প্রধান বিজোর্নার টেনহাউগেন জানান, কৌশলগত মজুদ থেকে জ্বালানি উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত তেলের বাজারে তাত্ক্ষণিক মূল্যের ওপর একটি অস্থায়ী প্রভাব রাখতে পারে। তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে যে ভারসাম্যহীন অবস্থা বিরাজ করছে তা সমাধানে এ সিদ্ধান্ত কোনো ভূমিকা রাখবে না।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন