রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন অভিভাবকরা। অনেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানকে পাঠাতে অনীহা দেখাচ্ছেন। বাসার আশপাশে এডিস মশার বিস্তার রোধ করতে সচেতন সাধারণ মানুষ।
তবে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশ। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানগুলোরও কোনো পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের। ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বলছেন, বাসায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিয়েছি। বাড়ির আশপাশ পরিস্কার রাখছি। কোথাও পানি জমে আছি কীনা নজরে রাখছি। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো আমরা নজরদারি করতে পারি না। ধারণা করা হচ্ছে, ওখান থেকেই এডিস মশা কামড়েছে। কেননা অনেক ক্যাম্পাসই এডিস মশার অভয়ারণ্য।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির কাজটা আসলে কী? সংকটকালীন সময়ে এসব কমিটি কোন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারেনি। উল্টো বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধেই রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় এদের বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে কিছু বলতে ভয় পাচ্ছে।
রাজধানীর বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মশক নিধনের কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেই। শরীরের খোলা অংশ ঢেকে কিংবা মশা প্রতিরোধী ক্রিম মেখে সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন অনেকেই। অনেক শিশু মশার অত্যাচারে ক্লাসে যেতে চাইছে না। অভিভাবকরাও স্কুল-কলেজে সন্তানদের পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলার মাঠ ও ভবনগুলোর মধ্যে পানি জমে থাকে। এছাড়া ফুলের টবে জমে থাকা পানি এডিস মশার উপযুক্ত প্রজননক্ষেত্র। এসব বিষয় মাথায় রেখে ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্কতা দিয়েছে।’
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবকের অভিযোগ, ক্লাসে মশার অত্যাচারে তার মেয়েটি স্কুলে যেতে অনাগ্রহী হওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির বলেন, মশক নিধনের কাজটি করে সিটি করপোরেশন। আমরা শুধু প্রতিটি বিদ্যালয় পরিচ্ছন্ন রাখতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের সচেতন করার কথা বলছি।
কেবল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাই নয়, বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ুয়ারাও আক্রান্ত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে। কেউ যেনো আক্রান্ত না হয় এবং আক্রান্ত হলেও যেনো সহজেই রক্ষা পায় এজন্য আমাদের সকল প্রয়াস অব্যাহত আছে। হলগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মেডিকেল সেন্টারকে সতর্ক রাখা হয়েছে, পরিষ্কার অভিযানও অব্যাহত রাখা হয়েছে।’
৩২ স্কুলকে অ্যারোসল দিলেন মেয়র সাঈদ খোকন:
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মশক নিধনে ৩২ স্কুলে বিনামূল্যে অ্যারোসল স্প্রে ক্যান বিতরণ করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এ সময় তিনি বলেন, আমরা সবাই এ শহরটাকে সুন্দর করে সাজাবো। যেটা হবে সুন্দর, সুস্থ এবং বাসযোগ্য নগরী। তবে এজন্য সবাইকে সচেতন করতে হবে।
মেয়র বলেন, সম্প্রতি রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। অনেকেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমরা প্রতিটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানকে মশামুক্ত করবো। যাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিরাপদে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারেন। এরই অংশ হিসেবে আমরা কোতোয়ালি থানার ৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে অ্যারোসল স্প্রে ক্যান বিতরণ করেছি।