শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবৈধ ইটভাটায় পরিবেশ বিপর্যয়

অবৈধ ইটভাটায় পরিবেশ বিপর্যয়

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নে অবৈধ ইটভাটায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। উজাড় হচ্ছে বনজ সম্পদ। পরিবেশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার মালিকরা বাড়ি-ঘর ও রাস্তার পাশে নির্মাণ করছে ইটভাটা ও টিনের চিমনি। মানা হচ্ছে না সরকারি নিয়মকানুন। ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘরের আশেপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে এ অবৈধ ইটভাটা। সরকারের নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি আইন অমান্য করে ইটভাটা গুলোতে কয়লার বদলে কাঠের স্তুপ রেখে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে বনজসম্পদ উজাড় করে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। রবি শস্য, আমের মুকুলসহ বিভিন্ন ফলনশীল ফলের সবকিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনকি ইট ব্যবসায়ীরা সরকারের কয়েক লাখ টাকা ভ্যাট আয়কর ফাঁকি দিয়ে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

ফরিদপুর এক ব্যবসায়ী জানান, বাড়ি-ঘরের ভিতর এবং রাস্তা থেকে ইটভাটা সরানো না হলে ফসলাদি ও শিশুরা বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রশাসন ও রাজনৈতিক অসাধু ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ইটভাটার মালিকরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছর অনেকে ড্রাম চিমনি ইটভাটা দেখা যায়।

ফরিদপুর ইউনিয়নে উল্লেখযোগ্য ইটভাটাগুলো হচ্ছে টু স্টার ব্রিকস, মীম ব্রিকস, এমএমবিসি ব্রিকস, এমএমবিসি ২ ব্রিকস, এনএমবিব্রিকস, এসটি ২ এবং এমএমবি ব্রিকসসহ মোট ১২টি ড্রাম চিমনি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। তারা নদীর চর থেকে মাটি কেটে ইট তৈরি করছে। তবে টু স্টার ব্রিকসের মালিক মাসুদ হাওলাদার অদৃশ্য শক্তির উৎস ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ইটভাটা। তোয়াক্কা করছেন না কোনো নিয়মকানুন।

আরও পড়ুনঃ  লকডাউনে খোলা থাকবে শিল্পকারখানা

জানা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মাসোহারা দিয়ে চালাচ্ছে ড্রাম চিমনি অবৈধ ইটভাটা গুলো।

ফরিদপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ ইটভাটার মালিক এখনও বাড়ি ঘরের মধ্যে জোর করে ইট পোড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের ছাড়পত্র অনুযায়ী অনুমোদন নিয়ে কয়লার মাধ্যমে ইট পোড়ানোর অনুমতি থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কাঠ পুড়িয়ে। এছাড়াও বাড়ি-ঘরের মধ্যে ইটভাটা তৈরি করে পরিবেশ নষ্ট এবং বনজ সম্পদ ও ফলফলাদির গাছ নষ্ট হচ্ছে। তাছাড়াও, কাগজপত্রবিহীন অবৈধ ক্ষমতার বলে অধিকাংশ ইটভাটার মালিকেরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গড়ে তুলেছেন অবৈধ ইটভাটা।

অপরদিকে, ভাটার অবৈধ যান্ত্রিক ট্রলি রাস্তার পাশ দিয়ে চলাচলের কারণে রাস্তা ধুলায় একাকার হয়ে যায়। জনজীবন হয়ে পড়ে বিপন্ন। সেই কারণে রাস্তা দিয়ে মানুষ চলাচল করতে গেলে ধুলো দিয়ে সারা শরীর ডেকে যায়। একটু বৃষ্টি হলেই কাঁদায় রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। এছাড়া ইট উৎপাদনের জন্য জমির টপসয়েল কেটে নেয়া হচ্ছে। জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। আবাদি জমি এখন পতিত পড়ে রয়েছে। ইটভাটার পাশেই নদী। সেই নদী থেকে এক শ্রেণির অসাধু মাটি খেকো ব্যবসায়ী ট্রলারের মাধ্যমে নদী থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে ইটভাটাগুলোতে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন (২০১) ধারায় সম্পূর্ণভাবে উল্লেখ আছে, জেলা প্রশাসকের লাইসেন্স ব্যতিত কোন ব্যক্তি ইটভাটা প্রস্তুত করতে পারবে না। ওই আইনে আরও উল্লেখ করা আছে যে তিন কিলোমিটারের মধ্যে বাড়িঘর ও বসতি এলাকা ফলজ ও বনজ-বাগান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলে ইটভাটা অনুমোদন হবে না। তবে, সেই আইনের তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা। যেগুলো মানুষের বসতবাড়ি, ফলজ ও বনজ বাগানের নিকটে গড়ে উঠেছে। এতে মানুষ ও ফসলিজমি হুমকির মুখে পড়েছে। অধিকাংশ ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রসাশকের লাইসেন্সবিহীন গড়ে তোলে।

আরও পড়ুনঃ  আগামী ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব ট্রেন চলাচল বন্ধ

এ বিষয় পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশালের উপ-পরিচালক মো. আবদুল হালিম বলেন, ফরিদপুর ইউনিয়নের অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবেশ দূষণ করে কোনো প্রকার অবৈধ ইটভাটা রাখার সুযোগ নেই।

এবিষয় বাকেরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সজল চন্দ্র শীল বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে আমরা অচিরেই ব্যবস্থা নিবো।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন