ঢাকা | সোমবার
২৪শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টানা চারদিন ধরে ধস

টানা চারদিন ধরে ধস

তেলের ধাক্কা সামলাতে পারছে না পুঁজিবাজার

জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পর টানা চতুর্থ কার্যদিবস ধরে পতন চলছে পুঁজিবাজারে। কমেছে সব ধরনের সূচক। চলছে লেনদেনে মন্দা। হারিয়েছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর।

স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গত চারকার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের পতন হয়েছে ১৬৪ পয়েন্ট। পাশাপাশি সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআইয়ের পতন হয়েছে ৪১৩ পয়েন্ট। এসময় ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি থেকে কমে ৬শ কোটি টাকায় অবস্থান করেছে। পাশাপাশি সিএসইর লেনদেন কমে ১৬ কোটি টাকায় অবস্থান করেছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত ৩১ জুলাই (রবিবার) পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছিল। ওইদিন ক্রেতা বহুগুনে বেড়েছিল। রবিবারের মতো পরেরদিন সোমবারে পুঁজিবাজার উত্থান ছিল। ওইদিন ক্রেতার চাপ বেশি ছিল। এরপর তিন কার্যদিবস (মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার) উত্থান ধারা অব্যাহত ছিল। উত্থান কারনে স্বস্তিতে ছিলো বিনিয়োগকারীরা। সেই স্বস্তি পরের চার কার্যদিবসের মন্দায় পুঁজিবাজারের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। টানা পতনে ক্রেতার সংখ্যা বহুগুনে হারায়। ক্রেতার সংক্রট তৈরি হয়েছে। অপরদিকে বিক্রেতার চাপ বহুগুন বৃদ্ধি পায়। ক্রেতার অভাবে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরের ব্যাপক পতন হয়েছে। জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে পুঁজিবাজারে এ ধরনের পতন বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, ২৭ ও ২৮ জুলাই দুই কার্যদিবস বড় পতন পরের পাঁচ কার্যদিবস উত্থানে পুঁজিবাজার। সেই উত্থান পরের বা গত চার কার্যদিবসে ফের পতনে ফিরে আসে।

এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৮৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবস বুধবার লেনদেন হয়েছিল ৭৯৯ কোটি টাকা, সোমবার ১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা এবং ১ হাজার ১৭৩ কোটি টাকার শেয়ার। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৯৬টি এবং কমেছে ১৬৬টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ১১৬টির। আগের কার্যদিবস বুধবারে দর বেড়েছে ২৬টি এবং কমেছে ২৭৯টির। সোমবার দর বেড়েছে ১০৩টি এবং কমেছে ২১১টির। রবিবার দর বেড়েছে ১২৪টি এবং কমেছে ১৮৭টির।

এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩২ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১৪৮ দশমিক ৭৬ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ১৬ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৮ দশমিক ৭০ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯৪ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ৩৪৫ দশমিক ৭১ পয়েন্টে। সূচক ডিএসইএক্স এর আগে বুধবার ৭৮ পয়েন্ট, সোমবার ৪৫ পয়েন্ট এবং  রবিবার ৮ পয়েন্ট কমেছে।

অপরদিকে, সিএসইতে গতকাল বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস বুধবার ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা, সোমবার ১৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং রবিবার ২১ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৫৪টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৫৫টি, কমেছে ১১৫টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৮৪টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১০৫ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১২৭ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ৮ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৯৩ দশমিক ৮০ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৬৩ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট এবং সিএসইআই সূচক ৯ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩২৫ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ২৬৩ দশমিক ২৯ পয়েন্টে, ১০ হাজার ৮৫৯ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ১৪৮ দশমিক ৮৯ পয়েন্টে। সূচক সিএএসপিআই এর আগে বুধবার ২০৫ পয়েন্ট, সোমবার ৯৬ পয়েন্ট এবং  রবিবার ৬ পয়েন্ট কমেছে।

গত ২৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের পর থেকেই পুঁজিবাজার উত্থানমুখী ছিলো জানিয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এর ফলে টানা পাঁচ কার্যদিবস পুঁজিবাজারের সূচক বাড়ে। লেনদেনসহ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ে। এর সঙ্গে যোগ হলো ২ আগস্ট পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হবে ক্রয়মূল্যের সিদ্ধান্ত। খবরটির পর লেনদেন ১২শ কোটি টাকার ঘরে চলে আসে। সব মিলিয়ে উত্থানে ছিলো পুঁজিবাজার। কিন্তু গত চার কার্যদিবস (রবিবার ও বৃহস্পতিবার) ফের ফিরে আসলো উল্টোমুখীতে। তলিয়ে গেল পুঁজিবাজার পুরো মন্দায়। পতনের কারন হিসেবে জ্বালানি তেল অস্বাভাবিক বৃদ্ধির দিকেই আঙ্গুল তুললেন সবাই।

তারা বললেন, রেগুলেটরদের বেশকিছু সিদ্ধান্ত এবং বিভিন্ন মহলে চেষ্টায় ঘুরে দাঁড়িয়েছিল পুঁজিবাজার। কিন্তু ৫ আগস্ট হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। নতুন নিয়মে, জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ (পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন এবং ডিজেল) বাড়ে। এরপর থেকে পুঁজিবাজারে চলছে পতন। এনিয়ে টানা চার কার্যদিবস ধরেই পতন। বিযয়টি নিয়ে চিন্তার ভাজ পড়েছে সবার। এটি পুঁজিবাজারের জন্য সুখবর নয়। এবিযয়ে রেগুলেটরদের দ্রুত পদক্ষেপ নেবার ওপরে পরামর্শ দেন তারা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভিন্ন সমস্যায় ঈদের (ঈদুল আযহা) পর থেকেই পুঁজিবাজার নিম্নমুখী ছিল। ঈদের পরে টানা ৯ কার্যদিবস ধরে পুঁজিবাজার পতন। সেই পতন হঠাৎ করেই দুই কার্যদিবস সামান্য উত্থানে ফিরেছিল। সেই উত্থান ধরে রাখা যায়নি। ফের নেমে আসলো পুঁজিবাজারে পতন। দীর্ঘ পতন পর হঠাৎ উত্থানে আসায় শান্তি পেয়েছিল বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু পরের দুই কার্যদিবসে (২৭ ও ২৮ জুলাই)) বড় ধরনের পতনে তাদের সেই শান্তিতে বড় ধরনের ছেদ পড়েছিল। এই পতন বিষয়টি চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল বিএসইসিকে।

ওইদিন বা ২৮ জুলাই পতন থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে শেয়ার দর পতনের  ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ঠিক তার পরের দুই কার্যদিবস (৩১ জুলাই ও ১ আগস্ট) বড় উত্থান হয়েছিল পুঁজিবাজারে। এছাড়া দীর্ঘ বিতর্কের পর গত মঙ্গলবার নির্ধারণ হলো পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হবে ক্রয়মূল্যে। এটা নির্ধারণ পর থেকে লেনদেন ওঠে এসেছে হাজার কোটি টাকার ওপরে। এসব কারনের উত্থান ধারা অব্যাহত ছিল গত সপ্তাহে। ফ্লোর প্রাইস ও বিনিয়োগ ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ পর থেকে সব ধরনের সূচক উত্থানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছিলেন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু গত চার কার্যদিবস ধরে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) পুঁজিবাজার ফের পতন। এ ধরনের মন্দায় অনেকেটা মুখ থুবড়ে পড়েছে পুঁজিবাজার।

সংবাদটি শেয়ার করুন