রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডুবল বোরো চাষির স্বপ্ন

ডুবল বোরো চাষির স্বপ্ন
  • উত্তরে টানাবৃষ্টি

টানা বৃষ্টিতে উত্তরের চাষিদের নিচু এলাকার ধানক্ষেত ডুবে গেছে। এছাড়া বৃষ্টিতে ক্ষতির শঙ্কায় অনেক কৃষক আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন। কৃষি দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বৃষ্টিপাতে উত্তরের ১৬ জেলার প্রায় ১৭ হাজার ৬৫৪ হেক্টও জমির আধা পাকা, পাকাসহ সদ্য শীষ থেকে বের হওয়া ধান ডুবে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ডুবে যাওয়া আধাপাকা ধানগাছ চড়া মজুরিতে শ্রমিক দিয়ে কেটে ঘরে তুলছেন কৃষকরা।

রংপুর আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগার জানায়, গত শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ অঞ্চলে ২৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কৃষকদের অভিযোগ, ধান কাটতে দ্বিগুণ মজুরিতেও মিলছে না কৃষিশ্রমিক। শ্রমিক-সংকটের কারণে নিজেরাই নেমেছেন ধান কাটার কাজে। ডুবে যাওয়া ধান কেটে নৌকাসহ বিভিন্ন উপায়ে তুলছেন রাস্তার ধারে ও উঁচু জায়গায়।

উত্তরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেক কৃষক পানিতে থাকা ধান কাটলেও মাড়াই করতে পারছেন না। এতে গাদায় নষ্ট হচ্ছে এসব ধান। উত্তরের বিভিন্ন খাল-বিল, নদ-নদীর চরসহ বেশ কিছু এলাকার খাল-বিলের পানিতে আধা ডোবা অবস্থায় রয়েছে শত শত বিঘা জমির ধান। অপরদিকে নিচু এলাকার ধান একেবারে ডুবে গেছে।

রংপুরের কৃষক আব্দুল কাদের জানান, তিনি আমতলা বিলে তিন বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। সব ধান এখন পানির নিচে। কুড়িগ্রামের দেলবর আলী জানান, তাঁর পাঁচ বিঘা জমির বোরো পানিতে ডুবে গেছে। এতে তিনি আধা পাকা ধান কাটছেন।

আরও পড়ুনঃ  আগাম লাউয়ে লাভ বেশি

উত্তরাঞ্চলের  কিছু কিছু এলাকায় শিলাবৃষ্টি আর ঝড়ের কারণে ফলন কিছুটা কম হলেও বেশির ভাগ অঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলনে এসব কৃষক পরিবার খুশি থাকলেও বৈরী আবহাওয়া ও দাম নিয়ে শঙ্কা রয়েছেন তাঁরা।

কৃষকরা জানান, বীজ, সার, সেচ ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে। শ্রমিক মজুরিও বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই বোরো ধানে উৎপাদন খরচও বেড়েছে। অপরদিকে বৈরী আবহাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। পাকা ধান শিলাবৃষ্টি বা কালবৈশাখীর কবলে পড়লে নষ্ট হবে। এ কারণে অনেকে আধা পাকা ধান মাড়াই শুরু করেছেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছের আমজাদ হোসেন বলেন, এবার শিলাবৃষ্টি হলে একটা ধানও ঘরে তোলা যাবে না। তাই ধান পাকা শুরু হতেই কাটা শুরু করেছি। বাকি দিনগুলো আবহাওয়া ভালো থাকলে সব ধান ঘরে তোলা যাবে। না হলে লোকসান গুনতে হবে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কিশামত হারাটি গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার মানু বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এখন বৃষ্টি ও ঝড় হচ্ছে। ধান আধা পাকা হওয়ায় কেটে বাড়িতে এনে মাড়াই করছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে  উত্তরের ১৬ জেলায় ১ লক্ষ্য ৪৭ হাজার ৩০৫ হেক্টর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্জিত হয়েছে ১ লক্ষ্য ৫২ হাজার ৮১৫ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বাড়বে ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এমদাদ হোসেন জানান, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও বোরোর ফলন মোটামুটি ভালোই হয়েছে। ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। মাড়াই করার উপযুক্ত ধান খেতে না রেখে দ্রুত ঘরে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন