শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রপ্তানিকে টপকাচ্ছে আমদানি

রপ্তানিকে টপকাচ্ছে আমদানি

বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৮০ ভাগ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর দেশে দ্রুতগতিতে বাড়ছে আমদানি। তবে যে হারে আমদানি বাড়ছে সে হারে বাড়ছে না রপ্তানি। আর এতে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ।  যা অতিতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।  অতীতে কখনো এত বড় ঘাটতিতে পড়তে হয়নি। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য ‍উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৩০ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময় ছিল এক হাজার ২৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে প্রায় ৩০ শতাংশ রপ্তানির বিপরীতে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ। আলোচিত আট মাসে রফতানি থেকে দেশ আয় করেছে তিন হাজার ২০৭ কোটি ডলার। পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৩৮ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রফতানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় দুই হাজার ২৩০ কোটি ডলার। এই আট মাসে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে।  চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬১৪ কোটি ডলার।  অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ৮৬৪ কোটি ডলার। সেই হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৭৩ কোটি ডলার।

আরও পড়ুনঃ  পদ্মাপাড়ে আনন্দের ঢেউ

চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে এ ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৮৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতির বিপরীতে উদ্বৃত্ত ছিল ৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সামগ্রিক লেনেদেনে ঘাটতি ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। সামগ্রিক লেনেদেনে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২২ কোটি ২০ লাখ (২ দশমিক ২২ বিলিয়ন) ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ সূচকে ৬৮৮ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৩৭৮ কোটি ডলার। যা ছিল এক অর্থবছরে ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮৫৭ কোটি ডলারের ঘাটতি দেখা দেয়।  সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের বাকি চার মাসে একই ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সঙ্কা রয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক হাজার ৩৪৪ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।  যা ছিল আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ কম। দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ বেড়েছে।  গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ২৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ।  চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ২৫৩ কোটি ৩০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। অর্থবছরের প্রথমার্ধে মাসে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে ১১৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১০৪ কোটি ডলার।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন