বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানির অভাবে উৎপাদন বন্ধ

পানির অভাবে উৎপাদন বন্ধ

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র–

লেকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন সংকট

  • জলবিদ্যুতের ৫ ইউনিটের ৪টিই বন্ধ
  • উৎপাদন ২৪০ থেকে কমে ৪০ মেগাওয়াট
  • ৬০ বছরেও খনন হয়নি কাপ্তাই লেক
  • পলি ও বর্জ্য জমে ভরাট হচ্ছে তলদেশ

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ১৯৬০ সালে নির্মিত কাপ্তাই বাঁধের কারণেই সৃষ্টি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই লেক

দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। কাপ্তাই লেকে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনের একমাত্র অনুষঙ্গ কাপ্তাই লেকের পানি স্বল্পতায় কেন্দ্রের পাঁচটি উৎপাদন ইউনিটের মধ্যে মাত্র একটি ইউনিট চালু রয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে চারটি ইউনিট।

সূত্রমতে, ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এখন দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট। সৃষ্টির পর এ পর্যন্ত একবারও ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি কাপ্তাই লেক। ফলে দিন দিন পলি ও বর্জ্য জমতে জমতে দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। দেশে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেখানে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ পড়ে ২০-২২ টাকা সেখানে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ মাত্র ২৫-৩৫ পয়সা। এত কম খরচে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন সম্ভব হলেও এ কেন্দ্রের ওপর বিশেষ কোনো সুনজর নেই সংশ্রিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

আরও পড়ুনঃ  বিএনপি অতীতে মানুষকে কিছু দিতে পারেনি, কোনোদিন দিতেও পারবে না -খাদ্যমন্ত্রী

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ১৯৬০ সালে নির্মিত হয় কাপ্তাই বাঁধ। এতে সৃষ্টি হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই লেক। তবে সৃষ্টির পর এ পর্যন্ত একবারও ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি কাপ্তাই লেক। ফলে দিন দিন পলি ও বর্জ্য জমতে জমতে দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। এছাড়া প্রতিনিয়ত দখল ও দূষণের কবলে পড়ে ক্রমশ নাব্যতা হারিয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে লেকে দ্রুত পানি ধারণ ক্ষমতা কমছে। এতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।

দেশে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেখানে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ পড়ে ২০-২২ টাকা সেখানে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ মাত্র ২৫-৩৫ পয়সা। এত কম খরচে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন সম্ভব হলেও এ কেন্দ্রের ওপর বিশেষ কোনো সুনজর নেই সংশ্রিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এর কয়েক বছর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এই কেন্দ্রের আধুনিকায়ন এবং ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটি ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। নানা কারণে তা আলোর মুখ দেখছে না।

কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পানি সংকট কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনে মারাত্মক ধস নেমেছে। কেন্দ্রে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় কাপ্তাই লেকের পানি। বর্তমান শুষ্ক মৌসুমে লেকের পানি নিম্ন স্তরে নেমে যাওয়ায় পানির সংকট তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়াতে পাহাড়ি ঝর্ণা থেকেও নামছে না পানির প্রবাহ। পানির অভাবে বিশাল কাপ্তাই লেকে পানির স্তর দিন দিন কমে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত পানির প্রবাহ না থাকায় কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন।

আরও পড়ুনঃ  অনলাইন জুয়ায় বুঁদ লাখো তরুণ

রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী এই মুহূর্তে কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ৯৩.৭০ ফুট মিন সি লেভেল (এমএসএল)। কিন্তু এখন লেকে পানি রয়েছে ৯০.২০ ফুট এমএসএল। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত লেকে প্রতিনিয়ত পানির স্তর কমতে থাকবে। পানি কম থাকায় বর্তমানে একটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সচল রাখা হয়েছে যেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে৪০ হতে ৪৫ মেগাওয়াট। এর পুরোটাই জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালন করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুত্রে প্রকাশ, কাপ্তাই লেকে বর্তমানে পানি রুলকার্ভের নিচে রয়েছে। লেকে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কেন্দ্রের সবকটি ইউনিট চালানো যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে যাতে পানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন একেবারে বন্ধ করতে না হয়, সেটি বিবেচনায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের পরামর্শে বর্তমানে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সীমিত পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে শুষ্ক মৌসুম হলেও যেকোনো মুহূর্তে পাহাড়ি অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক হবে।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, পাহাড়ি এলাকা হলেও কাপ্তাই ও রাঙামাটিতে সাধারণত মার্চ মাসে বৃষ্টিপাত হয় না। বৃষ্টি না হওয়ায় লেকে পানির স্তর দিন দিন কমছে। ভারতে অবস্থিত আসামের লুসাই পাহাড়েও এখন বৃষ্টি হচ্ছে না। সেখানে বৃষ্টি হলে কাপ্তাই লেকে এসে পানি জমা হয়। আশা করি অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেখানে বৃষ্টিপাত হবে।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বর্তমানে একটিমাত্র উৎপাদন ইউনিট সচল রাখা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারটি ইউনিট। খুব সহসা ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেন বৃষ্টি হলেই এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংকট কেটে যাবে।

আরও পড়ুনঃ  ফিলিস্তিনে বঙ্গবন্ধুর নামে সড়ক

স্বাভাবিক অবস্থায় দেশের একমাত্র কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪০ মেগাওয়াট। ভারী বৃষ্টিপাত ও কাপ্তাই লেকে অতিরিক্ত পরিমাণে পানি থাকলে এই উৎপাদন ২৫০ মেগাওয়াটেও উন্নীত হয়। তবে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় চারটি ইউনিট বন্ধ রেখে একটি ইউনিট সচল রাখার কারণে এই কেন্দ্রের উৎপাদনে ধস নেমেছে। দৈনিক এই কেন্দ্র থেকে ৪০ থেকে ৪৫ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ মিলছে না।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন