ঢাকা | শনিবার
৭ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইন জুয়ায় বুঁদ লাখো তরুণ

অনলাইন জুয়ায়

রূপপুর প্রকল্পে চাকরিরত অনেকেই পড়েছে জড়িয়ে

  • জড়িতরা খোয়াচ্ছেন অর্জিত অর্থ
  • জুয়ারুদের সংসারে বিরূপ প্রভাব
  • মাসের বেতন পেয়েই জুয়ার আড্ডা
  • অনলাইনে লুডুতেও চলছে জুয়া

সারাদেশের ন্যায় ঈশ্বরদীর যুবসমাজ, শিক্ষার্থী, উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণি আসক্ত অনলাইন জুয়া এবং অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন গেমস এ। নষ্ট হচ্ছে লেখাপড়া। বাড়ছে পারিবারিক কলহ। ঘটছে না নানা দুর্ঘটনা। কিশোর-কিশোরীদের এনড্রয়েড মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনাও দেশে কম ঘটেনি।

অনলাইন জুয়ার ভয়াবহতা পৌঁছে গেছে ইটপাথরে গড়া শহর থেকে শুরু করে গ্রামের আনাচে-কানাচে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে, সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে প্রযুক্তির। এমন সর্বনাশা নেশায় সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন অনেকে। অনলাইন জুয়াচক্রের সদস্যরা মাসে লেনদেন করছে কোটি কোটি টাকা। আর এ টাকা চলে যাচ্ছে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে বিদেশিচক্রের হাতে।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা এ নেশায় আশক্ত। উপজেলার মুলাডুলি, দাশুড়িয়া, মাড়মী, দরগাবাজার, পাকশী, কালিকাপুর, পারমানবিক এলাকা, ভেড়ামারা লালন শাহ সেতুর পশ্চিম দিকে, পদ্মা নদীর মাঝে নৌকাযোগে বসে জুয়ার আড্ডা। সন্ধ্যা রাত থেকে শুরু করে পাড়ার দোকান পাটে বসে চলে গভীর রাত পর্যন্ত এ আড্ডা। চলে পাপজি, ফ্রি ফায়ার গেম খেলা। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল যুগে গ্রামেও রয়েছে ইন্টারনেট ব্যবস্থা, রয়েছে ওয়াইফাই সংযোগ। ঘরে বসেও চলছে জুয়ার আড্ডা। আবার পূর্ব পদ্ধতি তাশের মাধ্যমেও চলে এ আড্ডা। জুয়ার টাকার যোগান দিতে অনেকেই আবার জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। বাড়ছে মাদকসেবী ও কিশোর গ্যাং এর সংখ্যা।

সূত্র জানিয়েছে, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে চাকুরিরত অনেকেই অনলাইন জুয়ার নেশায় খোয়াচ্ছে তাদের অর্জিত অর্থ। সংসারে নেমে আসছে তার বিরুপ প্রভাব। মাসের বেতন পেলেই এ চক্র বিভিন্ন স্থানে চালায় অনলাইন জুয়ার আড্ডা। আবার অনলাইনে লুডু খেলার মাধ্যমেও চলছে জুয়া।

উপজেলার দরগাবাজার এলাকার এক যুবক নাম ঠিাকনা প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জুলাইয়ের ১ তারিখে ইমদাদ (৩০) নামে এক যুবককে অনলাইনে জুয়া খেলার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে পুলিশ পরিচয়ে রাতে উঠিয়ে নিয়ে যায় এবং গভীর রাত পর্যন্ত অজ্ঞাতস্থানে রেখে ঐ রাতেই চল্লিশ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।

অনলাইন জুয়ার আসর অ্যাপস এর মাধ্যমে এ সাইটে ই-মেইল দিয়ে রেজিস্ট্রশন বেটিং দুনিয়ার প্রবেশদ্বার। তারপরই শুরু হয় টাকার খেলা। এটি বাংলাদেশি টাকায় রকেট, বিকাশ বা এ জাতীয় মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে নিজ একাউন্টে টাকা জমা নিশ্চিত হওয়ার পরই শুরু হয় খেলা।
অন্য আরেকটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ব্যাটিং কোম্পানির সাইটে অবশ্য টাকাকে বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে প্রথমে ডলারে রূপান্তর করে নিজ একাউন্টে আনা হয়। তারপরই শুরু হয় খেলা। টাকা দিয়ে পয়েন্ট কেনা। তা দিয়েই বাজি। নেশায় পড়েই লাখ টাকা খোয়াচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। আর কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র।

জুয়ার রাজ্যে যাদের পরিচয় মাস্টার এজেন্ট, সুপার এজেন্ট, লোকাল এজেন্ট নামে। এখানে জুয়া খেলতে লাগে পিবিইউ বা পার বেটিং ইউনিট। যার এক ইউনিটের দাম একশ টাকা। ব্যবহারকারী মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দেয় লোকাল এজেন্টকে। তার কাছ থেকে পায় মাস্টার এজেন্ট। তারপর সুপার এজেন্টের হাত হয়ে টাকা পাচার হয় দেশের বাইরে থাকা সুপার অ্যাডমিনের কাছে। ফিরতি পথে পিবিইউ পৌঁছায় ব্যবহারকারী হাতে। শুরু হয় জুয়া। যোগাযোগ চলে বিদেশি নাম্বারের হোয়াটস্যাপে। ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই তরুণ।

সামনের বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা ঘিরে জুয়ার মাষ্টার মাইন্ডরা আরও ব্যাপক হারে সকল শ্রেণি, পেশা ও বয়সীদের তাদের এ জুয়ার আড্ডায় সম্পৃক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন লোভনীয় অফারও রয়েছে।

গত ১ জুলাইয়ের গ্রেপ্তার ও পরবর্তীতে টাকা নিয়ে আসামি ছাড়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ অরবিন্দ সরকার বলেন, অত্র থানার কোনো টিম সেই সময় কোনো অনলাইনে জুয়া খেলার অপরাধে কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। তিনি আরও বলেন, অনলাইন জুয়ার নেশায় পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন অনেকেই। এক্ষেত্রে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। আমারা আমাদের সাধ্যমত আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার আড্ডা বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি সচেতন হতে হবে অভিভাবক ও ব্যবহারকারীদের।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন