শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তরুণদের বড় অংশই সংকটে

তরুণদের বড় অংশই সংকটে

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। এই তরুণরাই বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে। এ দেশের কর্মসংস্থানেও তারুণ্যের ভূমিকা রয়েছে অসামান্য। তবে দেশের তরুণ সমাজের একটা বড় অংশই আজ নানাভাবে সংকটে নিমজ্জিত। তদের অনেকেই পড়াশোনা শেষে উপযুক্ত কাজের সন্ধান পাচ্ছে না। বাংলাদেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা নিয়ে বরাবরই একটি ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। সরকার দেয় একরকম হিসাব। আর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশের বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাব হয় আরেক রকম।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ ২০২২ সালে বেকার থাকবে। যা মহামারি-পূর্ব সময়ের তুলনায় অন্তত ৫ লাখ বেশি। এছাড়া, দেশে বেকারত্বের হার ২০২২ সালে বেড়ে ৫ শতাংশে দাঁড়াবে। যা মহামারি-পূর্ব সময়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আইএলওর মতে, বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রবণতা ধনী দেশগুলোর অর্থনীতির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। মূলত কম টিকা দেওয়ার হার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর কঠোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণেই এমন হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, তরুণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ভারতে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ, চীনে ২৬ কোটি ৯০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬ কোটি ৭০ লাখ, যুক্তরাষ্ট্র ৬ কোটি ৫০ লাখ, পাকিস্তানে ৫ কোটি ৯০ লাখ এবং বাংলাদেশে রয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব মতে, দেশে কর্মক্ষম ৫ কোটি ৬৭ লাখ লোকের মধ্যে কাজ করছে ৫ কোটি ৫১ লাখ। তার অর্থ, বেকারের সংখ্যা মাত্র ২৬ লাখ। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। অর্থাৎ প্রতি দুইজনে একজনের নাম বেকারের খাতায় অন্তর্ভূক্ত।

আরও পড়ুনঃ  রাত পোহালেই মিয়ানমারে নির্বাচন, ভোটাধিকার থেকে বাদ রোহিঙ্গারা

বিশ্ব কর্মসংস্থান এবং সামাজিক আউটলুক: ট্রেন্ডস (ডব্লিউইএসও) রিপোর্ট ২০২২-এর তথ্যানুযায়ী, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর মহামারির প্রভাব বিশেষ। কেননা এই দেশগুলো মহামারির আগে থেকেই উচ্চস্তরের বৈষম্য, বিচ্ছিন্ন কাজের পরিস্থিতি এবং দুর্বল সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক কর্মসংস্থান পরিস্থিতি অন্তত ২০২৩ সাল পর্যন্ত পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নেই। জাতিসংঘের শ্রম সংস্থা মনে করে, ২০২১ সালের তুলনায় কর্মঘণ্টার কিছুটা উন্নতি হলেও, বিশ্বব্যাপী কাজ করা ঘণ্টা করোনাভাইরাসের আগের মোট কর্মঘণ্টার তুলনায় ২% নিচে থাকবে।

আইএলও মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, বিশ্ব শ্রমবাজার ধীর এবং অনিশ্চিত পথের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ইতোমধ্যেই দারিদ্র্য এবং বৈষম্য বৃদ্ধির সঙ্গে শ্রম বাজারের একটি সম্ভাব্য দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি দেখতে পাচ্ছি। রাইডার আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং পর্যটনে দীর্ঘায়িত মন্দা পরিস্থিতির কথা তুলে বলেন, অনেক কর্মীকে নতুন ধরনের কাজে সরিয়ে ফেলতে হবে। বিস্তৃত শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার ছাড়া এই মহামারি থেকে প্রকৃতভাবে বের হয়ে আসা সম্ভব নয়। আর এই পুনরুদ্ধারটি অবশ্যই শালীন কাজের নীতির ওপর ভিত্তি করে হতে হবে, যার মধ্যে স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা, সাম্য, সামাজিক সুরক্ষা এবং সামাজিক সংলাপ রয়েছে।

আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সাফল্য দেখিয়েছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান শ্রমবাজারগুলো সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে। চাকরি এবং জীবিকার ওপর মহামারির ক্ষতিকর প্রভাব, যদি দ্রুত প্রত্যাবর্তন না করা হয়, তাহলে শ্রম বাজারের জন্য স্থায়ী বিরূপ প্রভাবসহ দীর্ঘমেয়াদী কাঠামোগত পরিবর্তন প্ররোচিত করার ঝুঁকি বাড়বে।

আরও পড়ুনঃ  জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে মোদির শ্রদ্ধা

জাতিসংঘের সংস্থাটি নারীদের কর্মসংস্থান এবং স্কুল বন্ধের বিষয়েও আলোচনা করেছে। তারা জানিয়েছে, তরুণদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ওপর মহামারি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে যাদের অনলাইনে শিক্ষার সুযোগ সীমিত বা একদমই নেই। প্রতিবেদনে জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অন্যান্য চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি পদ্ধতিগত এবং কাঠামোগত বৈষম্য মোকাবিলার উপায়ে অর্থনীতির পুনর্গঠনেরও সুপারিশ করা হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন