শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাত্র ৬০০ রুপির জন্য ক্রিকেটার হওয়া হয়ে ওঠেনি ইরফানের

বলিউডের অন্যতম শক্তিধর অভিনেতা ইরফান খান আর নেই। মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। তার অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারত তথা আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি অঙ্গনে।

ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলেও মাত্র ৬০০ রুপির জন্য স্বপ্ন ভাঙ্গে ইরফানের

কীর্তিমান এই অভিনেতা শুধু বলিউডের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। কাজ করেছেন হলিউডের মতো বড় মাধ্যমে। বাংলাদেশের ‘ডুব’ চলচ্চিত্রে দারুণ অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান ইরফান।

প্রয়াত এই গুণী অভিনেতাকে একসাথে যেন সব গুণ দিয়েই পাঠিয়েছিলেন সৃষ্টিকর্তা। অনেকেই হয়তো জানেন না, একটা সময় ভালো ক্রিকেটও খেলতেন ইরফান। হতে পারতেন বড় ক্রিকেটারও, কিন্তু সে গল্পটা আরও বেশি ট্রাজেডিময়।

অভিনয়ের আগে ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়ার চেষ্টা করেছিলেন ইরফান। ছিলেন অলরাউন্ডার। আস্তে আস্তে বড় পর্যায়ে উঠে আসার সুযোগ ছিল তার। কিন্তু অর্থাভাবে সে স্বপ্নটার পরিণতি পায়নি। মাত্র ৬০০ রুপি জোগাড় করতে না পেরে ক্রিকেটের ব্যাট ছাড়তে হয় সদ্য প্রয়াত এই অভিনেতাকে।

ইরফান ‘টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া’র সাথে এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন সেই গল্পটা। খেলোয়াড়ি জীবনের স্মৃতি টানতে গিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, ‌‌‘দলের অধিনায়ক আমার বোলিং পছন্দ করতেন, তাই আমাকে বোলার হিসেবেই দেখতে চাইতেন তিনি। তিনি প্রায়ই আমাকে বলতেন, ভালো একটা বল করে দেখাও। আমি শুধু বল থ্রো করতাম এবং যেকোনোভাবেই হোক উইকেট পেয়ে যেতাম।’

ইরফানের ভাষায়, ‘খেলার প্রতি আমার আলাদা একটা নেশা ছিল। ক্যারিয়ারও এখানেই গড়তে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিবার এতটাই অর্থকষ্টে ছিল, ক্রিকেট তখন রীতিমত বিলাসিতা। বাধ্য হয়েই মিথ্যা কথা বলতে হতো আমাকে। একটা সময় ভারতের সিকে নাইডু টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব-২৩ দলে ডাকও পেয়ে যান তিনি। কিন্তু ৬০০ রুপি জোগাড় করবো, সেই অবস্থাও ছিল না। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম আর ক্রিকেট নয়।’

আরও পড়ুনঃ  ঢাকাই জামদানিতে বাঙালি সাজে রানী মুখার্জী!

কিন্তু ইরফান এখানেই থেমে যাননি। ক্রিকেট ছাড়ার পর ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেন। অর্থকষ্টে সেটাও হয়তো হতো না, যদিনা তার বোন ভর্তির ৩০০ রুপির ব্যবস্থা করে দিতেন।

ক্রিকেট ছাড়ার সিদ্ধান্তটা বুঝেশুনেই নিয়েছিলেন জানিয়ে ইরফান জানান, ‘ক্রিকেটে সারা দেশ থেকে মাত্র ১১ জন্য খেলোয়াড় খেলার সুযোগ পায়। কিন্তু অভিনেতাদের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। এখানে কোনো বয়সসীমা নেই। যত পরিশ্রম করবেন ততই এগিয়ে যাবেন। আপনি নিজেই এখানে নিজের অস্ত্র।’

শেষ পর্যন্ত এই অভিনয় পেশাই তাকে নিয়ে গিয়েছিল খ্যাতির চূড়ান্ত পর্যায়ে। কিন্তু জীবনযুদ্ধে জয়ী ইরফান প্রাণঘাতী ক্যানসারের সাথে পেরে উঠলেন না। হাজারো ভক্তের হৃদয় কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন