শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শর্ত পূরণ না করেই নিয়োগ

শর্ত পূরণ না করেই নিয়োগ
  • বেরোবিতে শিক্ষক নিয়োগ
  • পদ শূন্য নেই, তারপরও বিজ্ঞপ্তি

শর্তভঙ্গ করে ৮ বিভাগে ১২টি পদে শিক্ষক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষক নিয়োগের শর্ত সংশোধন না করেই বিধিভঙ্গ করে এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যার স্মারক নং- বেরোবি/রেজি/শিক্ষকনিয়োগ-বিজ্ঞপ্তি/২০২১/১৬২২। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রার্থীদের আবেদন করার শেষ দিন ছিল গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২১। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণিত বিভাগে একজন অধ্যাপক (স্থায়ী) ও একজন সহকারি অধ্যাপক (স্থায়ী), ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে দুইজন সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী) এবং একজন সহকারী অধ্যাপক (স্থায়ী), ইলেকট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ (ইইই) বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী), পরিসংখ্যান বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক (স্থায়ী), লোক প্রশাসন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের বিপরীতে একজন প্রভাষক (অস্থায়ী) ও শিক্ষা ছুটির বিপরীতে একজন প্রভাষক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে একজন প্রভাষক (স্থায়ী) এবং ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে শিক্ষাছুটির বিপরীতে একজন প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গণিত বিভাগে একজন অধ্যাপক (স্থায়ী) ও একজন সহকারী অধ্যাপক (স্থায়ী) পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে।

আবেদনের শর্তে প্রতিটি স্তরে বলা হয়েছে, ‘অভ্যন্তরীণ প্রার্থীর ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা যেতে পারে’। তবে, একজন প্রার্থীর ক্ষেত্রে কয়টি বিষয় বা কী কী বিষয়ের উপর শর্ত শিথিল হবে তা উল্লেখ নেই। আর ‘কনসিকোয়েন্সি ভেকান্সি উইথ ফিলাপ এর মাধ্যমে শূন্য হওয়া পদ’ এই পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগের কোন বিধান রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই বলেও দাবী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুনঃ  লক্ষ্যমাত্রা বেশি সংগ্রহ কম

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আটটি বিভাগের অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে যে সব বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগ পদের বিপরীতে কেউ কেউ কর্মরত আছেন। এছাড়াও, অনেক শিক্ষকের অর্জিত ছুটি দিয়ে সেগুলো পদ শূন্য করার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ একজন শিক্ষক অর্জিত ছুটি নিলেই ওই পদ শূন্য হয় এমন কোনো বিধান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিতে উল্লেখ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অধ্যাপক পদে শিক্ষক না থাকায় ওই পদের বিপরীতে ২০১৭ সালের ১৯ ডিসেম্বর মোছা. আইরিন আকতারকে প্রভাষক (অস্থায়ী) পদে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি বর্তমানে কর্মরত আছেন। আইরিন আকতার চলতি বছরের ৫ অক্টোবর পরবর্তী তিন মাসের জন্য অর্জিত ছুটির আবেদন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ২২ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত তার ছুটির আবেদন মঞ্জুর করেন। এদিকে, ওই বিভাগে সহকারি অধ্যাপকের স্থায়ী পদে কমলেশ চন্দ্র রায় কর্মরত থাকলেও (পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক) এ বিভাগে সহকারী অধ্যাপকের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা’ অনুযায়ী প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পদ পর্যন্ত নিয়োগের বিষয়ে কোথাও শর্ত শিথিল করার কোন বিষয় উল্লেখ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘কনসিকোয়েন্সি ভ্যাকেন্সি উইথ ফিলাপ এর মাধ্যমে শূন্য হওয়া পদ’ এমন পদ্ধতি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধানের কোথাও উল্লেখ নেই। এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চাকরি প্রত্যাশি জানিয়েছেন, এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি লোক দেখানো। যেভাবে ছক কষে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে আগে থেকেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। নিজস্ব প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে এ ছক কষেছেন। নামমাত্র পরীক্ষা নেয়া হবে। আমরা মনে করি, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের সব আইন মানা প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ  সূচকের উত্থানে চলছে পুঁজিবাজারের লেনদেন

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ এই আইন ব্যবহার করা হচ্ছে। আরেকটা বিজ্ঞাপন দিতে গিয়ে সময় এবং খরচের ক্ষতি কমানোর জন্য আসলে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এটা আইনের কোথাও লেখা নাই।

সংবাদটি শেয়ার করুন