ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভর্তি পরীক্ষায় সক্রিয় সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র

ভর্তি পরীক্ষায় সক্রিয় সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র

প্রশাসন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নেওয়ার চেষ্টা করলেও বিভিন্ন সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের কারণে তা বারবার ব্যহত হচ্ছে। ফলে মোটা অংকের টাকার কাছে হেরে যাচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থীরা।

জাতির কর্ণধার গড়ার প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ভর্তি জালিয়াতির কারণে মেধাবীদের স্থলে সুযোগ পাচ্ছে অপরাধের মধ্য দিয়ে উচ্চশিক্ষা শুরু করতে যাচ্ছে এমন জালিয়াত চক্রে জড়িত শিক্ষার্থীরা। যার প্রভাবে রাষ্ট্র ও সমাজে দীর্ঘ মেয়াদী বিশৃঙ্খলা তৈরী হচ্ছে।

সর্বশেষ শেষ হতে যাওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালেয়র (জাবি) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বিভিন্ন অনুষদভুক্ত ইউনিটের ফলাফলকে কেন্দ্র করে অনলাইনে-অফলাইনে দেখা গেছে সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র।

জাবির ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় এবার বিভিন্ন ইউনিটে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৬০৬ জন ভর্তিচ্ছু পরীক্ষায় অংশ নেয়। এই ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে একাধিক জালিয়াতি চক্র সক্রিয় হয়েছে। তবে জালিয়াতি রোধে তৎপর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ইতোমধ্যে পরীক্ষার হল থেকে ডিজিটাল ডিভাইসসহ জালিয়াত চক্রের কয়েক সদস্য আটক হয়েছে।

তথ্যমতে, ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে জালিয়াত চক্রের বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চক্রের সদস্যরা প্রক্সি ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে অসদুপায়ে ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষায় চান্স পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।

দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত কয়েক দশকে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে এখানে ভর্তি জালিয়াতির অন্যতম প্রক্রিয়া হচ্ছে ‘প্রক্সি’ বা ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তার জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে পাঠানো হয়।

এক্ষেত্রে বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রবেশপত্রের ছবি পরিবর্তন করা হয়। এছাড়া ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের হলে প্রশ্নপত্রের সমাধান দিচ্ছে জালিয়াত চক্র। পরীক্ষার্থী বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্রের ছবি পাঠিয়ে দেয় বা জালিয়াত চক্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে অন্য কোন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে হলে পরীক্ষার্থীর কাছে সমাধান পাঠিয়ে দেয়।

একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে মোবাইল নম্বরসহ পোস্ট দিয়ে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন ইউনিটে শতভাগ চান্স পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছে একটি চক্র।এছাড়া ভর্তিচ্ছু শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা। গ্রুপে ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর হলো ০১৯৯৬১২০৪৮৭। নম্বরটিতে যোগাযোগ করলে বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল-হাসান বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছি। জড়িতদের শনাক্ত করতে খোঁজখবর নিচ্ছি। শনাক্ত করতে পারলে আইনের আশ্রয় নেবো। ইতোমধ্যে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি জালিয়াতি কঠোর হস্তে দমন করছে। এর মধ্যে জালিয়াতিতে জড়িত দুজনকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।

জাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন,‘ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতি রোধে মনিটরিং বাড়াতে হবে ও সাইবার অভিজ্ঞদের পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করা ও সিকিউরিটি সিস্টেমকে বাড়াতে হবে। এসব রোধের একমাত্র উপায় হতে পারে প্রশ্নের ধরণে পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা। পরীক্ষা শুধু মাত্র এমসিকিউ পদ্ধতি নির্ভর না করে লিখিত ও বর্ণানামূলক প্রশ্নপত্র যুক্ত করা। এতে করে ডিজিটাল জালিয়াতির সম্ভবনা কমে যাবে। জালিয়াতির মাধ্যমে মেধাবীদের ঠকিয়ে জালিয়াত চক্রে জড়িত শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদী বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। শুধু বিশ^বিদ্যালয়ে নয়, এ বিষয়ে জাতীয় সচেতনতা তৈরি হওয়া উচিত।’

প্রসঙ্গত, গত ১৪ নভেম্বর জাবির ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বিশ হাজার টাকা চুক্তিতে অন্যের হয়ে (প্রক্সি) অংশগ্রহণ করায় কথিত এক বুয়েট ছাত্রকে আটক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া গত ১৮ নভেম্বর জাবির সি ইউনিটের পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতি করায় এক ভর্তি পরীক্ষার্থীকে ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আনন্দবাজার/এজে

সংবাদটি শেয়ার করুন