দক্ষিণবঙ্গের বাতিঘর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যাপিঠ নানান সিমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে আপন গতিতে এগিয়ে চলছে। বয়সে অনেকটাই নবীন বিদ্যাপিঠ হলেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে দক্ষিণ বাংলার অবলম্বন বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মান ও প্রোগ্রামিং দক্ষতার দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এত সফলতার পরেও নবীন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাথে বিতর্ক যেন ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ, শিক্ষার্থী – বাস শ্রমিকদের সংঘাত, হলের সিট দখল, বহিরাগতদের সঙ্গে ঝামেলা, ইত্যাদি কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি দিনে দিনে বিতর্কিত হয়ে উঠছে।
সর্বশেষ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু হলের কক্ষ পরিবর্তন নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের (নাভিদ গ্রুপ ও সাইদ গ্রুপ) মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের জেরে নাভিদ গ্রুপ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে সাইদ গ্রুপের চারজনকে কুপিয়ে জখম করে। আহতরা হলেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ রাফি ও রুম্মন হোসেন,ভ’তত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের জিদান হোসেন এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের হাফিজুর রহমান। পরবর্তীতে আহতদেরকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর ওইদিন রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের মাস্টার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাহজালালকে ধরে নিয়ে শেরে বাংলা হলের ১০০১ নম্বর রুমে আটকে রেখে বেধড়ক নির্যাতন চালায় সাইদ গ্রুপের শান্ত ও তার সহযোগীরা।নির্যাতনের শিকার শাহজালাল জানান,রুমে ঢোকার পর তারা তাকে হাত, মুখ বেঁধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করতে থাকে। তখন তাদের সকলের হাতে রড ও দেশীয় অস্ত্র ছিল।
এদিকে এই ঘটনাকে কন্দ্রে করে পরদিন বুধবার উভয় পক্ষের সহপাঠিরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। কিন্তু সব শিক্ষার্থীদের মূল দাবি দাবি ছিল নিরাপদ ও সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস চাই।
শিক্ষার্থীদের এ হামলার ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে দুই ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ববি প্রসাশন। বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থী হলো ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের তাহমিদ জাহান নাভিদ এবং ভ’তত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আল সামাদ শান্ত। এছাড়া এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ক্যাম্পাসের হলে এমন ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে এবং হলে নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। শেরে বাংলা হলের শিক্ষার্থী ওবায়দুর রহমান বলেন, হলে প্রায়শ এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত।বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বহিরাগতদের হামলা এটি সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। হলে সিসি ক্যামেরা না থাকায় এসব কর্মকান্ড সহজেই হচ্ছে। সিসি ক্যামেরা থাকলে হয়ত এমন ঘটনা ঘটতো না। সি সি ক্যামেরা স্থাপন এখন সময়ের দাবি।
হলে নিরাপত্তা কর্মীদের তৎপরতা বৃদ্ধি ও ক্যাম্পাসে যেসব স্থানে সি সি ক্যামেরা নাই সেসব স্থানে সি সি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ববি শিক্ষার্থী সোহেল রানা বলেন, এই নৃশংস হামলার সুষ্ঠ তদন্ত করে সঠিক বিচার করতে হবে ববি প্রশাসনকে।এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সোহেল রানা, লিখন রায়, ফয়সাল মিয়া, সুদেব মল্লিক, আনছিুর রহমান, তানভীন কবির তুহিনসহ আরও একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসের অবস্থা দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। ছোট ছোট ঘটনার জের ধরে এখন মারামারি হচ্ছে। ক্রমেই ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ববি প্রশাসনের কাছে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস বলেন,ঘটনাটি তদন্ত চলছে এবং তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। বর্তমান ক্যাম্পাস শান্ত রয়েছে এবং ক্যাম্পাস শান্ত রাখার জন্য যত ধরনের ব্যাবস্থা নেয়া দরকার আমাদের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের উপাচার্য স্যার এ বিষয়ে খুবই সর্তক যেন ক্যাম্পাসে কোন ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় এবং আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি সবসময় সক্রিয়। সতর্কতামূলক যত ব্যাবস্থা নেওয়া দরকার সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি যেন ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয়।
আনন্দবাজার/শাহী