ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জবির বুকে নেমে এসেছে আঠারো

নবীনদের পদচারনায় মুখরিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। রবিবার থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (২০২২ -২০২৩) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের শ্রেনী কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। সংকোচ, উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে

নবীনদের পদচারনায় মুখরিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। রবিবার থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (২০২২ -২০২৩) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের শ্রেনী কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। সংকোচ, উৎসাহ আর উদ্দীপনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীরা মুখিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিনকে স্মরনীয় করে রাখতে। তাদের এই উৎসাহ ও উদ্দীপনার কথা এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তাদের আশা – আকাঙ্খার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

জবি আমাকে শেখাবে নেতৃত্ব দানের গুণাবলী

যদি বাংলাদেশের সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করা হয়, তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই সেরা দশের ভিতরে থাকবে। ছোট থেকেই ঐতিহাসিক জিনিসের প্রতি আমার একটা ভালো লাগা কাজ করে। যদিও আগে কখনও আমাকে জবি সম্পর্কে তেমন ইতিহাস কেউ বলেনি। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার জন্য যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি , তখন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে শুরু করি। জবির ইতিহাস আমাকে মুগ্ধ করেছে, আমাকে শিখিয়েছে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে কিভাবে সফলতার শীর্ষে উঠা যায়। একটি পাঠশালা থেকে কলেজ, এরপর দেশ সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আহা! শুনেই মনে শান্তি পায় । এ প্রতিষ্ঠান সাক্ষী অখন্ড ভারতের, সাক্ষী ভাষা আন্দোলনের, সাক্ষী মহান মুক্তিযুদ্ধের। হ্যা , আমি এই প্রতিষ্ঠানেরই গর্বিত শিক্ষার্থী । অনেক কষ্টের বিনিময়ে আমি আজ এই প্রতিষ্ঠানের অংশ, এর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্যবার ধন্যবাদ জানাই, আলহামদুলিল্লাহ্।কষ্টতো হয়েছে বটে , কিন্তু দিন শেষে আজ আমি সফল , নিজেকে পরিচয় দিতে পারি একজন গর্বিত জবিয়ান হিসেবে। ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ায় আমাকে পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য দক্ষতা অর্জন করতেই হবে, যার জন্য বেছে নিয়েছি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে । ভেবেছি নেতৃত্বদানের ক্ষমতা অর্জন করার জন্য জবি একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে আমার জীবনে ‌। ছোট থেকে যেসব স্বপ্ন ভেবে এসেছি ,বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সবই পূরণ করার ইচ্ছা আমার। । আশাকরি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ, সুশিক্ষিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠেতে সাহায্য করবে।

মোবাশ্বির আলম সেজান, ব্যবস্থাপনা বিভাগ

কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরনের মাধ্যম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছে যেন এক স্বপ্নের নাম। আমার বেলাতেও এর ব্যতিক্রম ছিলনা। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকেই ইচ্ছে ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব। আমার পছন্দের শীর্ষ তালিকাতেই ছিল প্রাণের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এর জন্য আমাকে অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে। একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে প্রথমবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য না হলেও দ্বিতীয়বারে স্রষ্টার অশেষ রহমত ও বাবা মার অনুপ্রেরণায় আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দের অন্যতম কারন ছিলো এটি পুরান ঢাকার মধ্যে অবস্থিত এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে মিশে আছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ও গর্ব। এর পাশাপাশি ঢাকাতে থাকার সুযোগ সুবিধা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ ও পড়াশোনার মান আমাকে সবসময়ই বিমোহিত করেছে। একজন নবীন শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রত্যাশা থাকবে শিক্ষকদের সাথে সুহৃদয় সম্পর্ক ও বড় ভাই ও বোনদের সাথে স্নেহময় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবো । জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আগামীর পথ চলা হবে আরো গতিময় এই আশা রেখে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায় শুরু করতে চাই।

সোহানা চৌধুরী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ

স্বপ্ন যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া কে বলা হয়ে থাকে উচ্চশিক্ষা গ্রহনের স্বপ্নের আঙ্গিনা।প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর স্বপ্ন থাকে বাংলাদেশের যে কোন একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া বা পড়া।তাই লাখ লাখ শিক্ষার্থী তাদের এই স্বপ্নকে জয় করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যায়।আর এরকম স্বপ্নবাজদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম।স্বপ্নকে জয় করার অবিরাম প্রচেষ্টায় ঘুমকে নির্ঘুম করায় মগ্ন ছিলাম।ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া নিয়ে কষ্টের যে দিনগুলো ছিল সে সময় গুলো এক মুহূর্তে সুখে পরিণত হয়েছিল যখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়ে যাই।তাছাড়া মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল বাসগুলো।যে বাস গুলোতে লাখ টাকার মালিক হলেও যোগ্যতা না থাকলে কেউ চড়তে পারবে না।আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের একজন গর্বিত সদস্য এবং সেই লাল বাসগুলো হবে আমার নিত্যদিনের চলার সঙ্গী।

মো:ফাহিম হাসনাত, দর্শন বিভাগ

জীবনের সেরা সময়ের অপেক্ষায় আমি

উচ্চ মাধ্যমিকের পর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যেন হঠাৎ করে ছোট একটা জলাশয় থেকে অথৈ সমুদ্রে পড়ার মতো ব্যাপার। একটু এদিক- সেদিক হলে লাখো মানুষের পেছনে পড়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু না। রাতের পর রাত বইয়ে মুখ গুঁজে থাকা, নিজেকে ধরে রেখে এতসব বাঁধা অতিক্রম করে যারা পাবলিকিয়ান হওয়ার সোনার হরিণ লাভ করে নিঃসন্দেহে তারা বেশ ভাগ্যবান। স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্নকে যারা ছুঁতে পারে, ক্যাম্পাসে প্রথম দিন যেন তাদের কাছে আকাশ ছোঁয়ার সমান, চির স্মরণীয়। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ১৬ বছরের গৌরব ও সাফল্যমন্ডিত এ দেশ সেরা প্রতিষ্ঠানটি। খুব সম্ভবত জীবনের সেরা সময়গুলো আমরা এখানে কাটাতে যাচ্ছি। বর্তমানে আমি পড়ছি মনোবিজ্ঞান বিভাগে। মানুষের চেতন/অবচেতন মন, চরিত্র বিশ্লেষণ, মানসিক সুস্বাস্থ্য -এসব নিয়ে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার ইচ্ছা রয়েছে। ইনশাআল্লাহ নিজেকে একজন আদৰ্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো। শিক্ষক -সহপাঠী কিংবা সিনিয়র ভাইয়া-আপুদের সহযোগিতায় আগামীর পথচলা সুন্দর হবে আমাদের এই স্বপ্নের বিদ্যাপীঠে এই কামনা করি। প্ৰিয় ক্যাফেটারিয়া,শান্ত চত্বর, লাল বাস, কৃষ্ণচূড়া- সবকিছু এখন নতুন জবিয়ান দের অপেক্ষায়।

আনিকা রহমান, মনোবিজ্ঞান বিভাগ (১৮তম আবর্তন )

আমার চৌচির হওয়া মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

১৬৫ বছর ধরে নানান ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। যুগে -যুগে কতো রথী-মহারথীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে এই প্রাঙ্গন। ২০২২ সালের কোন এক ক্ষণে আমার মনের কোণে প্রোথিত হয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার স্বপ্ন। সেই থেকেই আমার মনে স্বপ্ন জেগেছিলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার তারপর আমি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাধ্যমে জবিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। আমি জবিতে ভর্তি যোগ্য জানতে পারার পরে, যেন শত বছর ধরে গ্রীষ্মের রৌদ্র তাপে ফেটে চৌচির হওয়া আমার হৃদয় ভূমিতে এক পশলা বৃষ্টির পরশে নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি হাজারো স্বপ্ন,আশা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। আমি নব্য জবিয়ান হিসেবে চাই আমাদের শিক্ষকরা যেন আমাদের সাথে পিতৃসুলভ আচরণ করেন এবং আলোকবর্তিকা হয়ে আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন।সেই সাথে আমাদের জ্যেষ্ঠদের নির্মল চিত্তে নিবেদন করি তাঁরা যেন আমাদের উপর র‌্যাগিং নামক অভিশাপ বর্ষণ না করে যেন আমাদের উপর স্নেহের দৃষ্টি পতিত করেন।প্রায় আমার মনের মাঝে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেরানীগঞ্জের সবুজে ঘেরা নতুন প্রাঙ্গনের চিত্র ফুটে উঠে।যেই প্রাঙ্গন মুখোরিত থাকবে হাজারো মেধাবীদের পদচারণায়।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কে ঘিরে আমার নানাবিধ স্বপ্নের মধ্যে সবচেয়ে বড় স্বপ্নটি হলো- জবি একদিন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ব পরিমণ্ডলে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের আসনে স্থান করে নিবে।আর সেদিন আমরা বিশ্বমঞ্চে দাঁড়িয়ে তর্জনী উঁচিয়ে জবির দিকে ইঙ্গিত করে বলতে পারবো,
“এই মোদের বিদ্যাপীঠ এই মোদের গর্ব
বিশ্ব জুড়ে জ্ঞান সাধনাই নয়কো মোরা খর্ব।”

রবিউল আওয়াল, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

জবি হোক মোদের উত্তম জীবন গঠনের হাতিয়ার

আধুনিকতার এই যুগে জ্ঞান চর্চায় বিশ্ববিদ্যালয় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ববিদ্যালয় একজন ছাত্রের জীবনে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়তা করে। তাই জ্ঞান চর্চার জন্য মাধ্যমিকে অধ্যয়নের সময় থেকেই মনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার স্বপ্ন বুনতে থাকি। আমি মূলত একাদশ শ্রেণি থেকেই একটু একটু করে এডমিশনের প্রস্তুতি নিতে থাকি। কিন্তু, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর আমি আর্থিক সমস্যা দরুন ভালো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারি নি। তাই মনে সাহস নিয়ে ঘরে বসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির প্রস্তুতি নিতে সিদ্ধান্ত নিই। সঠিক সময়ে সঠিক পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং মহান আল্লাহ তা’লার রহমত আমাকে আজ জবি ঢাবি,রাবি,চবি,জাবি এবং সাত কলেজের মতো দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পড়ার সুযোগ করে দেয়। মেধাতালিকাভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিষয়প্রাপ্তি ও সার্বিক সুবিধার চিন্তা করে উত্তম জীবন গঠনের হাতিয়ার এবং জ্ঞান চর্চার উত্তম মাধ্যম হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কেই আমি বেছে নিয়েছি। সাহিত্যের মাধ্যমেই একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানা যায় । তাই বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছি বাংলা সাহিত্য। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা নিয়ে সমৃদ্ধ জবির বাংলা বিভাগকে বর্তমান শিক্ষকগণ এবং অগ্রজগণের সহায়তায় অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সবার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন হোক সুখময় ।

রুহুল আমিন, বাংলা বিভাগ

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন