শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেরপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি

শেরপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবি

প্রতিষ্ঠার ৬৫ বছর পর শেরপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার দাবি উঠেছে। স্বাধীনতার পর থেকেই শোনা যাচ্ছে এখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হবে। কিন্ত রাজনৈতিক ঐক্যের সিদ্ধান্তহীনতায় তা আজো হয়নি। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি সারা দেশে বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান হলেও শেরপুরে সেটা হয়নি । তাই শেরপুরের এই কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে বঙ্গবন্ধু অথবা তার পরিবারের যে কারোর নামে কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হোক।

শেরপুর এক সময় জমিদার অধ্যুসিত অঞ্চল ছিল। জমিদার প্রথার অবসান হলে তৎকালীন শেরপুরের পনে তিনআনি বাড়ীর দুই জমিদার সহোদর সতেন্দ্র মোহন চৌধুরী ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরী দেশ ছাড়েন। রেখে যান তাদের বিশাল ভূসম্পদ। ১৯৫৭ সালে ওই সম্পদের (৪৩ একর জমি) ওপর তৎকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এটিআই)। শেরপুর শহরের নারায়ণপুর-বটতলা এলকায় প্রতিষ্ঠিত এই কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে চালু করা হয় এক বছর মেয়াদী কৃষি প্রশিক্ষণ ।

এরপর ১৯৮৭ সালে দুই বছর মেয়াদী, ১৯৮৯ সালে তিন বছর মেয়াদী এবং সর্বশেষ ২০১১ সাল থেকে সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয়। এখানের কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করতেই ডিপ্লোমা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এরমধ্যে কেটে গেছে ৬৫ বছর। জেলাবাসীর দাবি এই প্রতিষ্ঠানটিকে কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হোক।

জানা গেছে, অনগ্রসর সীমান্তবর্তী ও চরাঞ্চলে ঘেরা জেলা শেরপুরের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও রেল লাইন। বিভিন্ন সময়ে এগুলোর প্রতিশ্রুতিও কম দেওয়া হয়নি। দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলায় বিশেষ উন্নয়ন হলেও এর ছিঁটে ফোটাও এই পিছিয়ে থাকা জেলায় লাগেনি। জেলাবাসীর দাবি এই কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটকে কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হোক। এখানে রয়েছে অব্যবহৃত বিপুল পরিমান সরকারি জমি।

আরও পড়ুনঃ  কুবিতে গালা নাইটে শেষ হল ফিন ফেস্ট

সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কিছু ভবন। আরও কিছু ভবন নির্মিত হচ্ছে। রয়েছে বড় বড় সাতটি নান্দনিক ঘাট বাঁধানো পুকুর। স্থানটি শহরে হলেও প্রতিষ্ঠানের ভিতরে গ্রামীণ পরিবেশ। প্রতিষ্ঠানের ৪৩ একর জমিসহ সকল স্থাপনা বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘেরা। এখানে রয়েছে জমিদারদের পরিত্যাক্ত আবাসনের কারুকাজমণ্ডিত বিশাল অট্রালিকাসহ জমিদারি পরিচালনার এজলাসহ নানা প্রত্নতত্ত্ব। রয়েছে নৃত্যশালা আর জমিদারদের ব্যবহৃত নানা উপকরণ। আছে বিশাল খেলার মাঠ। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে শ্যামল ছায়া আর নির্মল বায়ু, সব মিলিয়ে অবস্থানগত দৃষ্টিতে স্থানটি অনেকটা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যায়য়ের মতো।

এত সম্ভবনা থাকার পরও শুধুমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিষ্ঠানটির কোনো উন্নয়ন হয়নি। নাগরিক সমাজের দাবী এই কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট বিশ্ববিদ্যায়ে রূপান্তর হলে এখানকার গরীব শিক্ষার্থীরা পড়তে পারবেন। সেইসাথে শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা শেরপুরের যুবসমাজ উচ্চ শিক্ষার আলো দেখতে পারবেন। ভৌগলিক কারণে সুবিধা পাবে প্রতিষ্ঠানটির চারপাশে থাকা পাশ্ববর্তী রংপর, কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার বেশ কিছু অনুন্নত উপজেলা। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে সরকার জমি ও স্থাপনাসহ অনেক কিছুই রেডিমেট পাবে। বাঁচবে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক জেলা কমান্ডার নূরল ইসলাম হিরো, জেলা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আখরুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চন্দন কুমার পাল, জনউদ্যোগ সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ অসংখ্য নাগরিকরা বলেছেন, বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে আছে ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরল ইসলাম হিরো বলেন, যার নামে দেশ হলো তার (বঙ্গবন্ধু) বা তার পরিবারের নামে এখানে কিছুই হয়নি। এটিআইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করেত রাষ্ট প্রধানের কাছে চিঠি দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ কৃষিবিদ ড. মো মঈন উদ্দিন বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে বাঁধা নেই। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ার সব সুযোগ এখানে রয়েছে। পাশাপাশি ডিপ্লোমার শাখাটি রাখলে ভাল হবে।

আরও পড়ুনঃ  পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য পেছাল এসএসসি পরীক্ষা: শিক্ষামন্ত্রী

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন