শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমদানিতে মিটছে চাহিদার ৯৫ শতাংশ চিনি

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর চিনির চাহিদা কম-বেশি প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে কর্পোরেশনের ছাউনির নিচে থাকা চিনিকলগুলো থেকে উৎপাদন হয় মাত্র ৮০ হাজার মেট্রিক টনের মত। অর্থাৎ মোট চাহিদার ৪.৪৪ শতাংশ। বাকি প্রায় ১৭ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টনের মত বিদেশ থেকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি করা হয়। যা মোট চাহিদার ৯৫.৪৬ শতাংশ। গত শুক্রবার চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় কেরু এ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড পরিদর্শন এবং দর্শনা সুগারমিলে ২০২১-২২ মৌসুমে আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, এ এসব তথ্য জানান শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।

পরে তিনি কেরুজ ট্রেনিং কমপ্লেক্স এর সম্মেলন কক্ষে আখ চাষী এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের আওতাধীন সুগার মিলের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।

শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, একটি জাতিকে উন্নত সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে শিল্প-কারখানার যে বিকল্প নেই তা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নেওয়া উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় সরকারি ও বেসরকারি খাতে দক্ষতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি শিল্পসমৃদ্ধ উন্নত দেশ বিনির্মাণে শিল্প মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, বেশিরভাগ চিনিকলের যন্ত্রপাতি বেশ পুরনো, কিছুর মেয়াদ শেষ হয়েছে আরো ৩০-৪০ বছর আগেই। এখানে প্রায় প্রাচীন পদ্ধতিতে আখ সংগ্রহ, বাছাই, মাড়াই করা হয়। সময় এবং জনবল লাগে বেশি, সে তুলনায় উৎপাদন কম। আখচাষের জন্য দরকার বিপুল শারীরিক শ্রম। একই অবস্থা আখ সংগ্রহ থেকে মাড়াই প্রতিটি ধাপে। দেশে আখ উৎপাদন এবং মাড়াই বা চিনিকল-দুই জায়গাতেই আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। যদি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ে, তাহলে আখ চাষ লাভজনক হবে। বিএসআরআই উদ্ভাবিত উন্নত জাতের সঙ্গে সাথী ফসল চাষ করলে আখ চাষ লাভজনক হবে। কৃষকরা আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হবে। চিনিকলগুলোকে লাভজনক করতে পণ্যের বহুমুখীকরণের উপর জোর দিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, চিনির পাশাপাশি চিনিকলগুলো থেকে বাণিজ্যিকভাবে অ্যালকোহল, ভিনেগার, জৈব দ্রাবক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সহ রাসায়নিক সামগ্রী সহ-উৎপাদ হিসেবে পাওয়া সম্ভব। আখ মাড়াইয়ের পর সেখানের অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরি করা যায় জৈব সার।

আরও পড়ুনঃ  কমলার কেজি ৩০০

অবকাঠামোগুলোকে আধুনিকায়ন এবং শক্তিশালী করে চিনিকলের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে হবে। কম খরচে উচ্চফলনশীল জাতের আখ চাষ, উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা এবং পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে। পাশাপাশি চিনিকলগুলোতে দক্ষ প্রশাসন ও অর্থনৈতিক কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের চিনিকলের সুদিন ফিরে আসবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, কেরু এ্যান্ড কোম্পানি নিয়ে সরকার কিছু করতে চাচ্ছে। চিনির পাশাপাশি এখানে উৎপাদিত অন্যান্য পণ্যের চাহিদা আছে। কাজেই আমরা কেরুর সক্ষমতা দ্বিগুন করার জন্য এখানে দ্বিতীয় একটি ইউনিট করার চিন্তা করছি। সেটা বিয়ার হতে পারে বা জুস ফ্যক্টরী হতে পারে।
শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, লোকসানী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক করতে চাই। উচ্চফলনশীল জাতের আখ উদ্ভাবনের চেষ্টা করছি। আখের সাথে সাথী ফসল করতে হবে। প্রয়োজনে রিফাইন সুগার কিনে বন্ধ মিল চালু করা হবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, চুয়াডাঙ্গা ১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (ছেলুন), চুয়াডাঙ্গা ২ আসনের সংসদ সদস্য মো. আলী আসগার টগর, বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো: আরিফুর রহমান অপু, মন্ত্রণালয় ও কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ এবং স্থানীয় আখ চাষীবৃন্দ।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন