শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সল্পদামে বিদেশী পোশাক মেলে‘সান্তাহার গাউনপট্টি’তে

সল্পদামে বিদেশী পোশাক মেলে‘সান্তাহার গাউনপট্টি’তে
  • শতাধীক দোকানে দৈনিক গড়ে ৫ লাখ টাকা বিক্রি
  • শীত মৌসুমে ৪০০-৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান
  • কোরিয়া, তাইওয়ান ও জাপানের পাশাপাশি আসছে চায়না কাপড়ও

বিত্তশালীরা অভিজাত বিপণি বিতান থেকে কেনাকাটা করলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা ছুটছে বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌর শহরের রেলগেট এলাকায় স্বাধীনতামঞ্চ ঘেঁষে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে। স্থানিয়ভাবে মার্কেটটি সবার কাছে ‘গাউনপট্টি’ নামেই পরিচিত। এই পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এখানে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ পুরাতন কাপড় কিনে থাকেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও এসেছে স্বল্প দামে গরম কাপড় কিনতে। স্বাধীনতা মঞ্চের উত্তর পাশের্^ রেললাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা এসব দোকানে কোরিয়া, তাইওয়ান, জাপান ও চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের পুরাতন বেøজার, জ্যাকেট, সোয়েটার, টাউজার, মাফলার, টুপি, ফুলহাতা গেঞ্জি ও কম্বলসহ নানা ধরনের শীতবস্ত্র বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে জানা গেছে, প্রতি শীত মৌসুমে নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রæয়ারি মাস পর্যন্ত চলে পুরাতন শীতের কাপড়ের বেচা-কেনা। শীত মৌসুমে প্রতিটি দোকানে প্রতিদিন কমপক্ষে গড়ে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি হয়। সেই হিসেবে শতাধীক দোকানে প্রতিদিন প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো কাপড় বিক্রি হয়ে থাকে।

পুরাতন মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করেন গোলজার মৃধা। তিনি বলেন, আমি শীত মৌসুমে এই গাউনপট্টিতে শীতের জামাকাপড় বিক্রি করি। এখানে সাধারণ নিন্মবিত্ত ও স্বল্প আয়ের লোকজন আসে। আবার মধ্যবিত্ত লোকেরাও আসেন। কমদামি কাপড়গুলো ১০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে, মাঝারি ধরনের গুলো ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা আর কিছু দামী কাপড় ও কম্বল ১ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়ে থাকে।
আরেক ব্যবসায়ী জুয়েল হোসেন বলেন, এই গাউনপট্টিতে কম টাকায় সাধ্যের মধ্যে শীতের কাপড় কিনতে অনেকেই আসেন। শীত বাড়লেই আমাদের বেচাবিক্রি ভালো হয়। তখন দৈনিক গড়ে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার জামাকাপড় বিক্রি হয়। কোনো কোনো দিন ১০ হাজার টাকা পার হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ  ভুট্টা চাষে ফলনে বেজার, দামে খুশি

অটোভ্যান চালক নয়ন আলী জানান, শীতের সকালে গাড়ী চালাতে কষ্ট হয়। তাই কম দামে শীতের গরম জ্যাকেট কিনতে এখানে এসেছি। নতুন পোশাকের দোকানে একটি জ্যাকেট কিনতে গেলে দেড় থেকে দুই হাজার টাকার বেশি প্রয়োজন হয়। আর এখানে আমি মাত্র চার’শ টাকায় মোটা কাপড়ের টুপিওয়ালা জ্যাকেট কিনতে পেরেছি।

নওগাঁর মহাদেবপুর থেকে শীতের সোয়েটার কিনতে এসেছেন তাসলিমা বেগম। তিনি বলেন, এখানে কম দামে ভালো ভালো সোয়েটার পাওয়া যাচ্ছে। যাদের বাজেট কম তারা এখান থেকে কিনতে পারেন। আমি আমার জন্য ৩০০ টাকা দিয়ে একটা সোয়েটার কিনেছি ও মেয়ের জন্য ৪৫০ টাকা দিয়ে একটা জ্যাকেট কিনেছি।

সান্তাহার পুরাতন কাপড় মার্কেটের ব্যবসায়ী নিজামুল আমিন বৃত্তি জানান, প্রায় ৩০-৩২ বছর যাবৎ আমাদের এই মার্কেটটি নিন্ম ও মধ্যবিত্তদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। বেল্ট বেঁধে বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে কাপড়গুলো আসে। প্রতি বেল্ট ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে নানা দামে কিনতে হয়। বেল্ট ভাঙার পর কাপড়গুলো বাছাই করে দোকানে সাজানো হয়। খদ্দেরের পছন্দের জিনিসের দাম মিটলে তা বিক্রি করে দেওয়া হয়। এসব দোকান ঘিরে শীত মৌসুমের চার মাস এখানে ৪০০-৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন