দুই দশক পূর্বেও সাতক্ষীরার আশাশুনির তেঁতুলিয়া গ্রামের ৯০ শতাংশ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হতো হাতে তৈরি মাদুর বিক্রি করে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে এখন গ্রামটিতে এ কাজের সাথে যুক্ত রয়েছে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি পরিবার। যারা এখনো মাদুর তৈরি করছেন, কাঁচামাল সংকট এবং বাজারে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় তারাও এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। খাতসংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে জেলার ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্পটি অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এক সময় পুরো সাতক্ষীরা জুড়ে তৈরি হতো মেলের মাদুর। কিন্তু সবচাইতে বেশি হতো আশাশুনিতে। চাহিদা ভালো থাকার কারনে মাদুরের মূল কাঁচামাল মেলে ঘাস উৎপাদন করত বহু কৃষক। কিন্তু মাদুরের চাহিদা এবং দাম কমতে থাকায় কৃষকরা বর্তমানে আর তেমন মেলে উৎপাদন করেন না। আর তাই মাদুর শিল্পীদের কাছে কাঁচামালটি হয়ে পড়েছে দুর্লভ।
তেতুলিয়া গ্রামের গোবিন্দ মণ্ডল (৫৫) জানান, বর্তমানে মাদুর তৈরি করে আর তেমন লাভ হয় না। এছাড়া কাঁচামাল মেলে ঘাস এখন আর ঠিকমতো পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায়, তার দাম অনেক বেশি। অন্যদিকে এক জোড়া বড় আকারের মাদুর তৈরিতে ৫০০ টাকা খরচ হলেও বাজারে এর সর্বোচ্চ দাম পাওয়া যায় ৬০০ টাকা। সারা দিনে এখন বেশি হলে দুই থেকে তিনি জোড়া মাদুর তৈরি করা যায়। এ থেকে যা লাভ হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। শুধুমাত্র বংশপরম্পরার কারণেই তিনি এখনো এ পেশা ধরে রেখেছি। গোবিন্দ মণ্ডল আরো জানান, পূর্বে তেতুলিয়ার অন্তত ৫০০ পরিবার মাদুর তৈরি করত। কিন্তু লোকসানের কারণে এ পেশায় বর্তমানে ৫০টি পরিবারও যুক্ত নেই।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু জানান, মেলে দিয়ে তৈরি মাদুর এ জেলার ঐতিহ্য। আশাশুনিতে একসময় মাদুর তৈরির সাথে যুক্ত ছিল অন্ততপক্ষে চার হাজার পরিবার। বর্তমানে এই সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এখানকার মাদুর একসময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হতো। তবে বর্তমানে এ শিল্প চরম সংকটে পড়েছে। এর সাথে জড়িতরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তবে এ শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে হলে খাতসংশ্লিষ্টদের সহজ শর্তে ঋণের সাথেসাথে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। আর না হলে শিল্পটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব।
আনন্দবাজার/এফআইবি