শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পণ্যের মূল্যতালিকা দিয়ে কি সংসার চলে?

পণ্যের মূল্যতালিকা দিয়ে কি সংসার চলে?
  • অফিসার আসলে টাঙ্গামু
  • দামশুনে জামাই হাটার হোটেলের দিকে রওয়ানা দিলেন ক্রেতা
  • দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা স্বল্প আয়ের মানুষ

খাদ্যদ্রব্য মুরগি, ডিম, পেঁয়াজ, চিনি, গ্যাস, ময়দা, দুধ, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনী জিনিসের দাম হু হু করে বেড়েই চলছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সবজির দামও। দ্রব্যমূল্যের এ উর্ধ্বগতির প্রভাবে দিশেহারা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নিম্নআয়ের মানুষগুলো।

গুরুদাসপুর বাজারের একটি হোটেলে ৫ টাকার পরোটা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায় ১০ টাকা প্লেট খিচুড়ি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। পরোটা-খিচুড়ির দাম সর্ম্পকে হোটেল মালিক সানোয়ার বলেন, ২৬ টাকা কেজির আটা কিনতে হচ্ছে ৩৬ টাকায়, ৫০ টাকার চাল কিনতে হচ্ছে ৭০ টাকায়, ডিমের হালি ৩২ থেকে ৪০ টাকা। সয়াবিন, গ্যাস, ঘরভাড়া আর শ্রমিকের কথা না হয় নাই বললাম। তাহলে পরোটা আর খিচুড়ির দাম না বাড়িয়ে উপায় কী?  বাধ্য হয়েই একটু দাম বাড়িয়েছি। পণ্যের মূল্য তালিকা সর্ম্পকে তিনি বলেন, রাখেন আপনার তালিকা। ওসব তালিকা দিয়ে কি সংসার চলবো? যখন অফিসার আসবো তখন তালিকা টাঙ্গাবো।

শুধু পরোটা আর খিচুড়িই নয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় মুরগি, ডিম, পেঁয়াজ, চিনি, গ্যাস, ময়দা, দুধ ইত্যাদির দাম হু হু করে বেড়েই চলছে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবজিসহ সব কিছুর দামও। দ্রব্যমূলের এ ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে এখন দিশেহারা নিম্নআয়ের মানুষগুলো।

উপজেলার প্রাণকেন্দ্র বন্দরনগরী চাঁচকৈড় হাটের এক হোটেলে দুপুরে খেতে এসেছেন ভ্যানচালক মজিবর। হোটল মালিকের কাছে মাছ ৭০ টাকা, মাংস গরু পিচ ১০০, খাসি ১২০ ডিম প্রতিটা ২০ টাকা আর সবজির দাম শুনেই তরিঘড়ি করে বের হয়ে জামাই হাটার (ভ্রম্যমাণ খাবারের হোটেল) দিকে রওয়ানা হলেন। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ভাই জামাই হাটায় অন্তত ৫০ থেকে ৬০ টাকায় পেট পুরে খেতে পরবো।

আরও পড়ুনঃ  শব্দ দূষণেও সেরা ঢাকা

উপজেলা চত্বরের সোনার হোটেল ম্যানেজার  বাবলু বলেন, সব কিছুই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই আমরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি, সরকার জিনিসপত্রের দাম কমালে আমরা দাম কমাতে পারবো।

তিনি জানান, গত চার-পাঁচ দিন থেকে কাচাঁমাল কিনতে দৈনিক ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে। ১০ দিন আগে যে ময়দার বস্তা ১৮শ’ টাকা ছিল এখন ২৩০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে, পেঁয়াজের দামও বেশি; তাই খাবারের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন স্কুল শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসেরই দাম বেড়ে গেছে। ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকা থেকে বেড়ে ১৬৫ টাকা, সয়াবিন তেল ২০০ টাকা, মোটা মসুরির ডাল ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা ডিম ২৮ থেকে ৪০ টাকাসহ সব ধরনের সবজিতেই ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে গেছে! অথচ বেতন ভাতা আগের মতোই রয়ে গেছে। যে টাকা বেতন পাই তা দিয়ে ১৫ দিনও চলে না। কিযে কষ্টে আছি মানুষের সামনে বলতেও কষ্ট লাগে। ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে বাসা ভাড়া, খাওয়া-দাওয়াসহ সব মিলিয়ে আমার হিমশিম খেতে হচ্ছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের সামনের দিনে না খেয়ে থাকা ছাড়া উপায় দেখছি না।

জানতে চাইলে গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন বলেন, ভোক্তাধিকার আইনে বেশ কয়েকটি দোকানে অভিযান পরিচালনা জরিমানা করেছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন