শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেঁয়াজে গর্বিত বাজার

পেঁয়াজে গর্বিত বাজার

প্রতি বছর রমজান মাসকে ঘিরে বেড়ে যায় ভোগ্যপণ্যের দাম। তবে এবার রমজানের আগেই কয়েক দফা দাম বৃদ্ধিতে অস্থির হয়ে উঠেছে বাজার। প্রতিনিয়ত নানা অজুহাতে বাজারে পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। ঊর্ধমুখী নিত্যপণ্যের বাজারে অস্বস্তি বাড়ছে মানুষের। চাল, ডাল, গম, তেল, পেঁয়াজ, আটা, গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। এমন পরিস্থিতিতেও আবারও বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের দাম। তবে দাম কিছুটা কমেছে পেঁয়াজের।

গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবধরণের চালের দাম বেড়ে গেছে। মাসখানেক আগেও মান অনুযায়ী ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া মোটা চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৪ টাকা। প্রতি কেজি চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকায়। কিছুদিন আগেও এ চালের কেজি ছিল ৬৪ থেকে ৬৮ টাকা। আর মাসখানেক আগে ছিল ৬২ থেকে ৬৬ টাকা। এছাড়া মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, যা মাসখানেক আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। বাংলামোটরের পাম্পের গলির ব্যবসায়ী আরফি হোসেন দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, এক মাস ধরেই চালের বাজার বাড়তি। কিছুদিন আগে রশিদের মিনিকেটের ২৫ কেজির বস্তা ছিলো এক হাজার ৬০০ টাকা। এখন তা বেড়ে এক হাজার ৬৫০ টাকা হয়েছে। অন্যান্য কোম্পানির মিনিকেট চালের দামও বেড়েছে।

টিসিবির তথ্যমতে, এক বছরের ব্যবধানে গড়ে চালের দাম বেড়েছে ১ থেকে ৬ শতাংশ। তবে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ১০ টাকার ওপরে। খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। আর আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকা ও ভালো মানের আমাদনি করা পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা ছিল। এ হিসেবে এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ১০ টাকা। কাওরান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, এবার পেঁয়াজের আমদানি বেশি। এ কারণে পেঁয়াজের দাম কমেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবার রোজার মধ্যে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং দাম আরও কমতে পারে।

পেঁয়াজ কিনতে আসা সুহেল আহমেদ বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। এটা আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির। তবে অন্যান্য জিনিসের দামে তো অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে। এভাবে যদি সবকিছুর দাম কমতো তাহলে পরিবার নিয়ে কোনোরকম সংসার চালানো যেত। বাজার মনিটরিং বাড়িয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কিছুটা কমানো গেলে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পেত।

আরও পড়ুনঃ  রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার

গত কয়েক দিনে দাম বেড়েছে ছোলা, বুটের ডাল, মসুরের ডালসহ বেসনের দাম। এক সপ্তাহের মধ্যে ছোলার দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এলাকা বেধে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে শুরু করে ৯০ টাকা পর্যন্ত। কারওয়ান বাজারের মুদিদোকানি জয়নাল মুনশি জানান, রোজাকে সামনে রেখে ছোলার দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি কেজি ছোলা এখন ৭০-৭৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। কাল-পরশু থেকে রোজার বাজারের চাপ শুরু হলে দাম কিছুটা বাড়বে।

টিসিবির তথ্য বলছে, গত এক বছরের তুলনায় ছোলার দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত বছর যে ছোলা ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেটি এ বছর ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মসুর ডাল ১৬ থেকে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছর দেশি মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকা। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫-১৩০ টাকা। বড় দানার মসুর ডাল ছিল ৬৫-৭০ টাকা। এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকা।

বুটের ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে এখন ৮০ টাকা। ১০০-১০৫ টাকা কেজির ছোট দানার মশুর ডাল এখন ১২০-১৩০ টাকা। মাঝারি দানার মশুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা, যা কিছুদিন আগেও বিক্রি হয়েছিলো ৮০-৯০ টাকায়। বুটের ডালের বেসনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। আর খেসারির ডালের বেসনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ৭০ টাকার মধ্যে।

গত এক বছরে ভোজ্য তেলের দাম ১৬ থেকে ২২ শতাংশ দাম বেড়েছে। গত বছর সয়াবিন তেলের ১ লিটারের বোতল বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। পাঁচ লিটারের সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৬৩০ থেকে ৬৫০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ থেকে ৮০০ টাকা এবং এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৮০ টাকা দরে। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত চিনির দাম ছিল ৭৮ টাকা। এ বছর ২ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা।

আরও পড়ুনঃ  স্থগিত পণ্য পরিবহন ধর্মঘট

খেজুরের দামও নতুন করে বেড়েছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে খেজুরের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। মান অনুযায়ী, খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এ বিষয়ে বাদমতলী বাজারের ব্যবসায়ী শামছুল আলম বলেন, এক মাস ধরেই খেজুরের দাম বাড়ছে। রোজাকে সামনে রেখে গত কদিনে কেজিতে বেড়েছে আরও ১০-১৫ টাকা। ১০-১৫ রোজা পর্যন্ত খেজুরের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে। ১৫ রোজার পর দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, রমজান শুরু হওয়ার আগেই খুচরা ও পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে জিরা, দারুচিনি, এলাচ, আদা, শুকনা মরিচের। গত কয়েকদিনে জিরার দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০-৫০ টাকা, দারুচিনি ১০-১৫ টাকা, এলাচ ১০০-১২০ টাকা, আদা ১০-২০ টাকা ও শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে ২০-২৩০ টাকা। একইভাবে দেশি আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। ৬০ থেকে ৭০ টাকার আদা এখন কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। মসলার দামের বিষয়ে কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী মো. আরফান বলেন, কয়েকদিন ধরে পাইকারিতে মসলার দাম বাড়তি। রোজার কারণেই এই দাম বেড়েছে। জিরা ও দারুচিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫০ টাকা। আদা, শুকনা, মরিচের দামও বেড়েছ।

তবে পাইকাররা বলছেন, বাজারে প্রচুর পরিমাণে জিরা, দারুচিনি, এলাচের সরবরাহ রয়েছে। এসব পণ্যের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং রোজার ভেতরে এসব পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা কম জানিয়ে তারা বলছেন, জিরার দাম একমাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। এলাচের দাম বাড়ার বদলে কেজিতে ১০০ টাকার মতো কমেছে। তবে দারুচিনির দাম কেজিতে ৫-৭ টাকা করে বেড়েছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে রসুনের দাম বেড়েছে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ, আদার ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ, শুকনা মরিচের ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, জিরার ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ, লবঙ্গের ২ দশমিক ২৭ শতাংশ, ধনের ৮ শতাংশ।

আরও পড়ুনঃ  সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চালক-পথচারী উভয়কেই সচেতন হতে হবে

গত এক বছরে সব ধরনের মাংসর দাম বেড়েছে। এই বৃদ্ধির হার কেজিপ্রতি ৪ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত। গত বছর প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৫৬০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়ে এলাকা ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। একইভাবে দাম বেড়েছে ব্রয়লার ও দেশি মুরগির। এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ।

এদিকে কয়েকগুন দাম বেড়ে বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুনের দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। সজনের ডাঁটার দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। যার কেজি গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিলো দুশ টাকা। দাম কমার এ তালিকায় রয়েছে পাকা টমেটো। গত সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো এখন ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, শালগম (ওলকপি) ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউয়ের পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লালশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, পালংশাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।

মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। শিং ও টাকি মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। ছোট ইলিশ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। নলামাছ ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। চিংড়ি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন