শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে জৈব সারেই ভরসা

বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে জৈব সারেই ভরসা

উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসাবে কেঁচোর বিষ্ঠা বা মলের ব্যবহার নতুন নয়। এর মাধ্যমে যে জৈব সার তৈরী করা হয়, তার কেতাবি নাম ভার্মি কম্পোষ্ট। সেই ভার্মি কম্পোষ্ট বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের প্রস্তুতি চলছে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায়। স্থানীয়ভাবে এর পরিচিতি কেঁচো কম্পোষ্ট বা কেঁচো সার নামে। কৃষি কর্মকর্তার দেখানো পথ ধরে এ জৈব সার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যুক্ত প্রায় ১০০ জনের বেশি কৃষক লাভের মুখও দেখছেন। এদিকে, বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনে জৈব সার বড় ভূমিকা রাখছে। ক্রমেই প্রান্তিক কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে এ সার ব্যবহার। নওগাঁ জেলাতে তো বটেই, আশেপাশে জেলাগুলোতেও এ সারের চাহিদা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে বিষমুক্ত শাক-সবজি তারা উপহার দিতে পারবেন সাধারণ মানুষকে। কৃষি বিভাগ বলছে, শাকসবজির ফেলে দেওয়া অংশ, অর্ধ পঁচা গোবর, কালাগাছ ও কচুরিপানা একসঙ্গে মিশিয়ে যেখানে কেঁচো ছেড়ে দেওয়া হয়। কেঁচো সেসব ময়লা খেয়ে মলত্যাগ করে পঁচিয়ে ফেলে ও বংশবিস্তার করতে থাকে। কেঁচোর পঁচিয় ফেলা দ্রব্যই মূলত জৈব সারে পরিণত হয়। প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে এ জৈব স্যার উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কেঁচো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকা দরে।

যেসব কৃষক বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক স্যার ব্যবহার করে অধিক উৎপাদনের বিপরীতে ধিরে ধিরে নিজ জমির উর্বরতা- শক্তি হারাচ্ছেন তাদের জন্য কেঁচো স্যার নিসন্দেহে একটি শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হিসাবে প্রমাণিত হতে পারে।

পত্নীতলা য় কয়েকজন কৃষক শুরুতেই এ সার উৎপাদনে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও বর্তমান তাঁরাই কেঁচো সারকেই উত্তম জৈব সার বলে দাবি করছেন এবং নিজের উৎপাদিত ফসলে এ সার প্রয়োগ করে সন্তোষজনক উৎপাদনের প্রমাণও পেয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  নীরব লড়াইয়ে মিল-করপোরেটরা

এদিকে নার্সারি ব্যবসা দিয়ে শুরু করে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সার উৎপাদনেও সফলতার পথে হাঁটছেন। নিজের নার্সারিতে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট ব্যবহারের পাশাপাশি বাজারজাত শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমনই এক উদ্যোক্তা। বলছিলাম নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের জাঙ্গিরাপাড়ার স্বপ্নবাজ যুবক ফারাজ আলীর কথা। ফারাজ আলীর বসতবাড়িতে কেঁচো স্যার উৎপাদনের প্লান্ট রয়েছে।

কৃষক ফারাজ আলী আনন্দবাজারকে বলেন, ৭ থেকে ৮ মাস আগে পত্নীতলা কৃষি অফিসের সহযোগীতায় কেঁচো কম্পোষ্ট চাষ শুরু করি। এখন আমি রাসায়নিক সার ব্যবহার কমে দিয়ে জৈব স্যার ব্যবহার করছি। এমনো কিছু জমিতে আছে যেখানে আমি রাসয়নিক সার ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছি। সেই জমিগুলোতে দেখা যাচ্ছে সন্তোষজনক ফলন হচ্ছে।

এ বিষয়ে পত্নীতলা  উপজেলা কৃষি কর্মতকর্তা কৃষিবিদ প্রকাশ চন্দ্র সরকার বলেন,  পত্নীতলা য় কেঁচো কম্পোষ্ট ছিলোনা। আমি পত্নীতলা য় আসার পরে বেশ কিছু কৃষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে অফিসিয়ালভাবে কেঁচো ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে পরীক্ষামূলক কেঁচো চাষ শুরু করি। কৃষকরা বর্তমানে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা কমে দিয়ে নির্দিষ্ট পরিমানে জৈব সার ব্যবহার করে বিষমুক্ত ফসল ফলাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে হলে জৈব সার ব্যবহারের বিকল্প নেই। এখন আমাদের এ পত্নীতলা  উপজেলাতে সন্তোষজনক বিষমুক্ত আম, ধান ও শাকসবজি চাষ হচ্ছে। এ জৈব সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ সার ব্যবহার করলে মাটির উর্বরতা শক্তিও বাড়ে। পত্নীতলা র কৃষকরা এ জৈব সার ব্যবহারের মাধমে উদাহরণ তৈরী করেছেন। আমরা চাইব অন্যরাও এ জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার করবে এবং তাদের জন্য আমরা সার্বিক সহযোগীতা করব।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন