শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নীরব লড়াইয়ে মিল-করপোরেটরা

নীরব লড়াইয়ে মিল-করপোরেটরা

ভরা মৌসুম। প্রন্তিক কৃষকের ধান যাচ্ছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বাজারগুলোর আড়তে। সেখান থেকে প্রতিদিনই শত শত ট্রাক ধান আড়তগুলো থেকে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। ধানের এমন ভরা মৌসুমে সাধারণত চালের বাজার থাকে নিম্নমুখী। কিন্তু এবারের চিত্র উল্টো। নতুন ধান চালের বাজারে প্রভাব ফেলতে পারছে না। উৎপাদিত ধান গেল কোথায়?

ধানের বাজার দখল নিতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে চাল উৎপাদনকারী মিলার ও বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের স্বার্থের রশি টানাটানিতে গলায় ফাঁস লেগে মরতে বসার উপক্রম জনতার। ভারসাম্য হারিয়েছে ধান ও চালের বাজার। এমন ভারসাম্যহীনতায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন জনতা। লাভের গুঁড় খাচ্ছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

স্থানীয় মিলারদের দাবি, বাজারে ধান উঠার পরপরই অনেক ধান মজুত করেছে বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। দাম বেশি দিয়ে বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধান কিনে মজুত করে। তাদের চাহিদা শেষ হয়ে গেলে ধানের বাজার পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। দাম করে গেলে কৃষকদের মনে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে চাল উৎপাদন করা মিলারগুলো বেশি দামে ধান কিনতে পারে না। কারণ, বেশি দামে ধান কিনলে চালের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। এতে বাজারে চালের দাম বেড়ে যাবে। সবকিছুর মধ্যে সমম্বয়হীনতার কারণেই মাঠে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন হলেও চালের দাম বাড়ছে।

স্থানীয় মিলাররা আরো দাবি করেন, বড় বড় কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন বাজার থেকে ধান প্রচুর ধান কিনেছেন। তাদের হাঁকানো দামের কাছে মিলাররা ধান কেনার সাহসই করছে না। বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন ধান কেনা বন্ধ হয়ে যাবে তখন যেসব কৃষক ধান বিক্রি করেননি তারা পড়বেন লোকসানে। এ জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে প্রথম থেকেই।

আরও পড়ুনঃ  ভোটের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণার নির্দেশ ইসির

সরেজমিনে নওগাঁর মহাদেবপুর, মাতাজি, মান্দা হাটের কয়েকজন আড়ৎদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছরই কৃষক পর্যায়ে ধান ক্রয় করে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ ধান দেশের বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরবরাহ করা হয়। এবার ধান উৎপাদন কম হয়েছে। সে কারণে উৎপাদনের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ ভাগ ধান বেশি দামে বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। এসব প্রতিষ্ঠান মজুত করে পরবর্তীতে প্যাকেটজাতের মাধ্যমে বেশি দামে বাজারে সরবরাহ করে থাকে বলেও আড়ৎদাররা জানান।

ধান বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে চলে যাচ্ছে বলে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না মিলাগুলো। মিলাররা সাধারণত ধান কিনে চাল উৎপাদন করে। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার সুযোগে মিলাররাও তাদের কাছে থাকা চালের (নতুন ও পুরাতন) বাজারে বাড়িয়ে দিয়েছে। বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও মিলারদের স্বার্থের রশিতে ফাঁস আটকে সাধারণ জনতার হাঁসফাঁস অবস্থা।

গত ৩০ মে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে নির্দেশনা দেয়া হয় অবৈধ মজুতদারদের আইনের আওতায় আনার। এমন ঘোষণার পরেই ধানের বাজার কিছুটা কমেছে। দুইদিনের ব্যবধানে ধানের বাজারমূল্য মণে ১০০ টাকা কমেছে। একদিন আগে বাজারে যে ধান এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকা ছিল সেই বাজার কমে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকায় নেমেছে। মণপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে।

দেশের বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দেশের ধান চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে বলে জানিয়েছেন নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ধানের বাজারে সামঞ্জস্যতা না আসলে চালের বাজারে উত্তাপ বাড়বে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আগে সরকারের শক্ত পদক্ষেপের প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ  টিকা সংরক্ষণের জন্য দেশে এলো ২৬টি ফ্রিজার

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন