শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেচ সংকটে অনিশ্চয়তায় বোরোচাষ

সেচ সংকটে অনিশ্চয়তায় বোরোচাষ

বিল তৈরিতে অনিয়ম, জটিলতা আর বিনা নোটিশে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিরুদ্ধে। ফলে গাইবান্ধায় চলতি বোরো মৌসুমে দুই হাজার একর জমিতে বোরো চাষাবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। জমি তৈরি করলেও পানির অভাবে তাদের অনেকেই সেচ দিতে পারছেন না। সাধারণ কৃষক ও সেচ পাম্প মালিক সমিতির পক্ষে এমন অভিযোগ এসেছে। সংকট নিরসনে দফায় দফায় মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেও কোনো সমাধান পাননি সেচ মালিকরা। তবে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড-২ এর গাইবান্ধার বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যারা অনিয়ম করছে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

কৃষিবিভাগ সূত্রমতে, গাইবান্ধায় এবার এক লাখ ২৭ হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিল লেনদেনে জটিলতায় চলতি মৌসুমে জেলায় এক হাজার দুইশ একর জমিতে ইতোমধ্যে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। জমি প্রস্তুতসহ চারা রোপন করার পর এসব জমির সেচের পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। ফলে জমিতে সেচ দিতে না পারায় বোরোর জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আবার অনেক কৃষক বোরোর জন্য জমি প্রস্তুত করেও শুধু সেচ সংকটে চারা রোপন করতে পারছেন না। ফলে এক্ষেত্রে দুই হাজার একর জমিতে চারা রোপনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার খোলাহাড়ী, কুপতলা, বোয়ালী, বামচন্দ্রপুর এবং ফুলছড়ি, সাঘাটা, সাদুল্লাপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে এখনো প্রস্তুত করা জমি পড়ে আছে। যেসব জমিতে বোরো চাষবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন চাষিরা সেগুলোতে এখন কোনো চাষিরা দেখা নেই। গত কয়েকদিন ধরে বোরোচাষিসহ সেচ পাম্প মালিকরা শহরে গিয়ে সেচের জন্য মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  ঈদের দিনে বৃষ্টির সম্ভাবনা

আন্দোলনকারী চাষিদের দেয়া তথ্যমতে, ২০১৪-২০১৫ ও ২০১৬ সালে পিডিবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, ওই তিন বছরে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকদের ওপর চাপানো হয়েছে। এসব বিল প্রস্তুতকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তদন্ত কমিটির সুপারিশও ছিলো। তবে তা বাস্তবায়ন না করায় এ সময়ে গ্রাহকদের প্রতি অতিরিক্ত বিল করার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা সেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, ২০১১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ১০ কোটি টাকার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব বিল সংশোধনের নামে কর্তৃপক্ষ নানা টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করছে।

খোলাহাড়ী ইউনিয়েনের বোরোচাষি কামরুল ইসলাম বলেন, আমার ১০ বিঘা জমি আছে। গত কয়েকদিন থেকে পাম্প মালিকের বাড়িতে গিয়ে বসে থাকি কখন বিদ্যুতের লাইন সচল হবে তার জন্য অপেক্ষা করি। তবে কোনো সমাধান না পাওয়ায় বিপদে পড়েছি। অথচ ওই ফসল দিয়ে পরিবাবের লোকজন খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকি। অন্যসব জমিতে চারা রোপণ করা শেষ। অথচ এখনও আমরা জমিই তৈরি করতে পারিনি। এবার জমিতে ধান না হলে মরণ ছাড়া গতি নেই।

একই ইউনিয়ের বোরোচাষি হামিদুল ইসলাম বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্পের পানিতে জমি রোপন শুরু করছি আমরা। তবে হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা নাকি আগের বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে লাইন দেবে না। এখন তো জমিতে পানি নাই। চারা রোপন করার আগেই যদি এমন হয় তাহলে কীভাবে আমরা বোরো চাষ করবো।

আরও পড়ুনঃ  বড় উত্থানের পথে পুঁজিবাজার

বামচন্দ্রপুর ইউনিয়ের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, বিদ্যুৎ বিল পাবে সেচ পাম্প মালিকদের কাছে, আমাদের কাছ থেকে তো নয়। আমরা তো মাসের বিল পরিশোধ করে দেই। তারপরও আমাদের জমিতে পানি নেই। আমরা এর বিচার চাই সরকারের কাছে।

সেচ পাম্প মালিক সমিতির নেতা মাসুদার রহমান বলেন, বিদ্যুৎ গ্রাহক এবং সেচ মালিকদের ওপর অতিরিক্ত বিল চাপিয়ে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করে বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে অনেককে। এসব হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি আমরা।

চাষি ও সেচ পাম্প মালিকদের অভিযোগ, অতিরিক্ত বিল সংশোধন না করে সেচপাম্প মালিকদের বিরুদ্ধে হয়রানি মামলার প্রতিবাদ করাতেই বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রাহকদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছে। তারা অনেককে সেচ পাম্প চালাতে দিচ্ছে না। বিল সংশোধনের জন্য হাইকোর্টে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও বিল অনাদায়ের নামে সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ হয়রানিমূলক মামলা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, সময়মত সেচ পাম্প মালিকরা সংযোগ না পাওয়ায় বোরো সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এতে জেলার কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড-২ এর গাইবান্ধার বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন বলেন, মিটার ছাড়া সংযোগ নিলে তাদের সংযোগ তো কাটাই হবে। যারা অনিয়ম করছে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন