শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুরে বন্ধ ১১ শিল্পপ্রতিষ্ঠান

  • সমস্যায় জর্জরিত বিসিক শিল্পনগরী
  • উত্যক্তের শিকার নারী শ্রমিকরা
  • বখাটে ও নেশাখোরদের উৎপাত
  • পানি ও বিদ্যুৎ সংকট

চাঁদপুরে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন শিল্পনগরী (বিসিক) নানা সমস্যায় জর্জরিত। নাজুক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পানি সংকটে শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতের কারণে উত্যক্তের শিকার হচ্ছেন কর্মরত নারী শ্রমিকরা। এতে শংকিত প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও। তবে বিসিক কর্তৃপক্ষ বলছেন, শিগগিরই সমস্যার সমাধান করা হবে।

চাঁদপুর বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক রুহুল আমিন বলেন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চাঁদপুর শহরের বাবুরহাট এলাকায় ১৯৯৯ সালে ১০ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিসিক শিল্পনগরী। শিল্প উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করতে স্বল্পমূল্যে বরাদ্দ দেয়া হয় ৬৮টি প্লট। শুরুতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের এখানে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কিন্তু পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যা দেখা দেয় এখানে গড়ে উঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। বাবুরহাটে বিসিক শিল্পনগরীর ৩৫টি শিল্প ইউনিটে কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক হাজার নারী-পুরুষের।

মেঘনা ফুড এর ব্যবস্থাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, এখানকার রাস্তা-ঘাট ও ড্রেনের করুণ অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চলমান থাকলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এছাড়া এখানে সরবরাহকৃত পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে একাধীকবার অবহিত করা হলেও, কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ড্রেনগুলো সংস্কার করা হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা জমে মুখ বন্ধ হয়ে রয়েছে।

দেলোয়ার আরও বলেন, বিভিন্ন সময় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। ওই সময় শ্রমিকরা অলস সময় পড়ে থাকে। পুরো কারখানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
তাসনিম ড্রিংকিং ওয়াটার এর পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, এখানকার পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। শিল্পকারখানা এলাকায় শিল্পের কাজে যে ধরনের পানি প্রয়োজন, সে ধরনের পানি এখানে সরবরাহ করা হয়না। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নাজুক। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা গেলে, ব্যবসায়ীরা অনেক উপকৃত হতো।

আরও পড়ুনঃ  সূচকের বড় উত্থানে শুরু হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন

মুনলাইট প্লাস্টিক এর ব্যবস্থাপক মো. ইলিয়াছ আহমেদ বলেন, এখানকার শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন। বিশেষ করে বহিরাগত বখাটে ও নেশাখোর যুবকরা নারীদের ইভটিজিং করে। বিষয়টি আমরা স্থানীয় বিসিক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। পুরো এলাকার নিরাপত্তা জোরদারসহ সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছে।

ইলিয়াছ আরও বলেন, এখানে কর্মরত শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা যাতে স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারেন, সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। করোনাকালীন অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। এখন আমরা নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। এতে দৃশ্যমান সমস্যাগুলো দূর করতে হবে।

ব্যবসায়ী মানিক বলেন, এখানে ব্যবসার কাজে মালপত্র কেনা-কাটার জন্য আসতে হয়। কিন্তু, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সমস্যায় থাকলেও, তা নিরসনে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

মো. আলমগীর ও আবুল খায়ের নামে দুই ব্যবসায়ী বলেন, বিসিক শিল্পনগরীর সীমানা প্রাচীর নেই। এতে করে বহিরাগত লোকজন এখানে অনায়াসে আসা-যাওয়া করে। ফলে কর্মরত নারী শ্রমিকদের ইভটিজিং এর শিকার হতে হয়। বখাটে যুবকরা এখানে এসে নেশা করে। ফলে ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন। বিসিক এলাকায় বর্তমানে ২৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান টিকে রয়েছে। বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠান করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক সংকটে দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে।

বিসিকের তথ্যমতে, প্রতিবছর গড়ে এখানকার শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। পাশাপাশি এখানকার গার্মেন্টেসের তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিসিক কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, অচিরেই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে। পানি সমস্যার সমাধান ও রাস্তা-ঘাট সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি কর্মরত নারীদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুনঃ  মৃত্যু নয় ১১ জেব্রা হত্যা অভিযোগ

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন