গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এক মাসে ১১টি জেব্রা মারা যায়নি বরং হত্যা করা হয়েছে। নিজেদের মতবিরোধ থাকায় দায়িত্বশীলরা একে অন্যকে ফাঁসাতে জেব্রাগুলোকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ।
রবিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার দীপংকর করের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। জেব্রাগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলাকারীদের সনাক্তকরণ এবং করণীয় বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয়ের এই তদন্ত কমিটি সাফারি পার্ক পরিদর্শন করেছে বলে জানানো হয়।
সবুজ তদন্ত কমিটিকে বলেন, যাদের তত্ত্বাবধানে জেব্রা মারা গেছে তাদের স্বপদে বহাল রেখে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয়। এতে পার্কের অন্য কর্মচারীরা মুখ খুলতে সাহস পাবেন না। তিনি পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবির ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমানকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে বলেন।
তিনি বলেন, গত মাসে সাফারি পার্কে একটি বাঘও মারা গেছে। এটা কেউ জানে না। এত মূল্যবান প্রাণী মারা যাচ্ছে অথচ পার্ক কর্তৃপক্ষ তথ্য গোপন রাখছে। পার্কে দশটি বাঘ ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সীমানা প্রাচীরের ভেতর থেকে হাতির খাবার পাচার হয়।
পরে পার্কে গত ১২ জানুয়ারি একটি পুরুষ বাঘ মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির জানান, ওই বাঘের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদন এখনও পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জেব্রাগুলোর এ ধরনের মৃত্যু প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ দেশের বাইরে অভিজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। বিশেষ করে যে দেশ থেকে জেব্রাগুলো আনা হয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার খামার মালিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। রোগের বিস্তারিত লক্ষণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল ইমেইলের মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হয়েছে।
জেব্রাগুলোর মৃত্যু প্রতিরোধে জরুরি চিকিৎসা প্রদান এবং এ ধরনের অসুস্থতার কারণ উদঘাটনে ইতোপূর্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা ২৫ ও ২৯ জানুয়ারি সাফারি পার্কে সভায় মিলিত হন। ২৫ জানুয়ারি বিশেষজ্ঞ টিমের দেওয়া ১০ দফা সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয় সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।
জেব্রাগুলোর মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৪ জানুয়ারি একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ৯টি জেব্রার মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার আরও দুটি জ্রেবার মৃত্যু হয়। ৯টি জেব্রার মৃত্যুর পর সাফারি পার্ক প্রকল্পের পরিচালক মো. জাহিদুল কবির বলেন, হঠাৎ তারা দল থেকে আলাদা হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। পেট ফুলে গিয়ে মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে। এক সময় মারা যাচ্ছে। করোনা সন্দেহে পিসিআর ল্যাবে মৃত জেব্রাগুলোর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্টগুলো নেগেটিভ এসেছে। এছাড়াও খাবারে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হতে পারে- এমন সন্দেহে খাবারগুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। মৃত জেব্রাগুলোর ফুসফুস, লিভার, মৃত্যুর পর পেটে থাকা অর্ধগলিত খাবারগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে। যার রিপোর্ট সভার আগেই আমাদের কাছে চলে আসে।
প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশে গঠিত ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ বোর্ড সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, অতিরিক্ত কাঁচা ঘাস ছাড়াও স্ট্রেপ্টোকক্কাস, ই-কোলাই, ক্লস্টোডিয়াম, সালমোনিলা ও পাস্টুরেলা নামে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পাঁচটি এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আরও চারটি জেব্রা মারা গেছে।
জাহিদুল কবির বলেন, হঠাৎ করেই এই প্রাণীগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। মারা যাওয়া জেব্রাগুলোর সিংহভাগই হচ্ছে মাদি। সাফারি পার্কের বিশাল এলাকাজুড়ে জেব্রার বসতি। জেব্রার জন্য রয়েছে কৃত্রিম লেক ও চারণ ভূমি। উন্মুক্ত অবস্থায় বিচরণ করে জেব্রা। তাদের সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীরও বিচরণ রয়েছে। প্রতি বছর প্রজননের সময় হলে জেব্রাগুলো একে অপরের সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এ সময় বড় ধরনের ইনজুরিতে কয়েকটি জেব্রা মারা যায়। এভাবে পার্কে চারটি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক