শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোগলহাট শুল্ক ও স্থলবন্দর চালুর দাবি

লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট শুল্ক ও স্থলবন্দর চালু হলে বাংলাদেশ, ভারত, ভূটানের সাথে ত্রি-দেশীয় ব্যবসা বানিজ্য, আমদানি-রপ্তানীতে প্রসার, যোগাযোগ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পুঁজি বিনিয়োগ এবং নতুন নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি এ অঞ্চলে অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভাবনাময় বলে দাবি তুলেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জেলা শহর থেকে উত্তর দিকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে মোগলহাট ইউনিয়ন। এখানে রেল স্টেশন, পাকা সড়ক, বিডিআর চেকপোস্ট, আবগারি শুল্ক দপ্তরসহ প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র আছে। মোগলহাট থেকে মাত্র হাফ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের গিতালদহ ইউনিয়ন, যেখানে ধরলা নদীর উপর তিস্তা রেলসেতুর ন্যায় অপর একটি সেতু আছে। যার নাম গিতালদহ সেতু।

এক সময় রেলপথ দিয়ে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কুচবিহার, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আসামের গৌহাটি, দার্জিলিং জেলাসহ অরুণাচল, হিমাচল, মেঘালয় থেকে কাঠ, কয়লা, পাথর, চুন, সার ইত্যাদি আসতো। কিন্তু ১৯৮৮ সালের প্রবল বন্যায় ধরলা নদীর তীব্র ¯্রােতে ভারত ও বাংলাদেশ অংশের প্রায় দু’কিলোমিটার রেলপথ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে ১৯৯১ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে লালমনিরহাট থেকে মোগলহাট পর্যন্ত রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে পাসপোর্টধারীরা উভয় দেশে যাতায়াতের জন্য দীর্ঘ দিন এ রুট ব্যবহার করে আসলেও ২০০২ সালের জুলাই মাস থেকে তাও বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৯৬ সালে লালমনিরহাটে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোগলহাট রেলওয়ে স্টেশন, চেকপোস্ট ও ইমিগ্রেশন চালুসহ শুল্ক স্টেশন স্থাপনের প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন। তৎপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালের ২৮ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে (যাহার এসআর নম্বর ২৬২/২০০৯ শুল্ক, ১১-০৬-২০০৯ অনুযায়ী) মোগলহাটকে রেলরুট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অপরদিকে ২০১১ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মোগলহাটে শুল্ক ষ্টেশন স্থাপনে অবকাঠামো, নিরাপত্তা, বাণিজ্য সম্ভবনা, লোকবল ও যোগাযোগ বিষয়ে পর্যালোচনা পূর্বক মতামত প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃক্ষের কাছে পত্র প্রেরন করেন। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছর অতিক্রম হলেও স্থলবন্দরটি আজও চালু হয়নি।

আরও পড়ুনঃ  মাদকের অভিযানকে ব্যাহত করতে ওসির বিরুদ্ধে মানববন্ধন

বাংলাদেশ রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট থেকে মোগলহাট পর্যন্ত বিদ্যমান রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করে মোগলহাট শুল্ক ও স্থলবন্দর চালু করলে প্রতিবছর সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে। তবে এ জন্য মোগলহাট রেলগেট সংলগ্ন রেলের জায়গাগুলো উদ্ধার করে রেলপথ প্রশস্ত এবং চালু করতে হবে।

লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ সূত্রে জানা যায়, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এর উদ্যোগে ২০১৬ সালের ১৫ থেকে ১৭ জুলাই ভারতের কলকাতা ও শিলিগুড়িতে ৪ দেশীয় বিজনেস ডেলিগেশন (বিবিআইএন) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ও নেপালের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহণ করেন। এ সময় লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রীজের প্রতিনিধি দলের সাথে ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের এক দ্বি-পাক্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সভায় ভারতের পশ্চিম বঙ্গের উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্র ঘোষ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধি দলের নেতারা মোগলহাট চেকপোষ্ট ও স্থলবন্দর চালু করনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। মন্ত্রী সভায় অবহিত করেন যে, ভারতের পক্ষ থেকে ধরলা নদী শাসন ও রাস্তা নির্মাণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সর্বপরি ভারত সরকার মোগলহাট এর মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। এই যোগাযোগের পথটি চালু করার জন্য পশ্চিম বঙ্গ ও আসাম প্রদেশের মানুষজন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন।

মোগলহাট স্থলবন্দর বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির আহŸায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন জানান, মোগলহাট স্থলবন্দরটি পুনরায় চালু হলে জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠাসহ বেকারত্ব অনেকটা কমে আসবে। শুধু তাই নয়, পাল্টে যেতে পারে সীমান্তবর্তী মোগলহাট শুল্ক স্থলবন্দরের চিত্র। মোগলহাট স্থলবন্দরে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সার্বিক বিষয়ের উন্নতি ঘটবে, বাড়বে সরকারি রাজস্ব।

আরও পড়ুনঃ  তিন বছরেই ফলন তিনগুণ

লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সিরাজুল হক জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা মোগলহাট স্থলবন্দরটি চালু এ অঞ্চলের মানুষের গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই আবারও এটি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এ জেলার মানুষ বিভিন্নভাবে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক দিয়েও এগিয়ে যাবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন