শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মাল্টা চাষ

তিন বছরেই ফলন তিনগুণ

তিন বছরেই ফলন তিনগুণ

ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে সাড়ে তিনবিঘা জমিজুড়ে মাল্টার বাগান। প্রায় প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় মাল্টা ঝুলছে। তিন বছরেই তিনগুণ ফলন বেড়েছে বাগানে।

স্থানীয় নির্মল রায় এ বাগানের মালিক। ২০১৯ সালে উদ্যোগ নেন মাল্টা চাষের। বগুড়া থেকে চারা এনে এক হাজার মাল্টার চারা রোপন করেন। মাত্র কয়েক বছরেই চারাগাছ থেকে ভালো ফলন হয়েছে মালটার।

নির্মল রায় জানান, চারা রোপনের পর স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করে এসেছেন চারা বড় করতে। এখন প্রতিদিনই গড়ে ১০ জন করে শ্রমিক সে মাল্টা বাগানে পরিচর্যার কাজ করছেন। তিনি বলেন, সবুজ জাতের বারি-১ জাতের মাল্টা বাণিজ্যিক ভাবে চাষ শুরু করি। ২০১৯ সালে  চারা রোপনের পর থেকে ফলন বেড়েছে তিনগুণ। এর আগে মাত্র দুই লাখ টাকার মালটা বিক্রি করেছি। যে হারে ফলন এসেছে এবারে কমপক্ষে ৮ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির প্রত্যাশা করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রত্যাশা পূরণ হতে পারে।

এছাড়াও বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে কিছু মানুষের। যারা বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শুধু তাই নয় কাজের জন্য শ্রমিকদের শেখানো হয় মাল্টার চারা পরিচর্যা বিষয়ে।

শ্রমিক বিমল কুমার বলেন, আমরা শ্রমিকরা কয়েক বছর ধরে এ বাগান পরিচর্যা করে আসতেছি। বাগানে ফলন ভালো এসেছে খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হয়। নতুন যারা আসছে তাদের শিখিয়ে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। যেহেতু এটি লাভজনক ফসল। সেক্ষেত্রে শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। কারণ অনেক নতুন উদ্যোক্তাও আগ্রহ নিয়ে আসছেন জানছেন।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে নানা কর্মসূচিতে ‘শেখ রাসেল দিবস’ পালিত

শ্রমিক শ্রী রায় বলেন, কয়েকমাস ধরে এসব কাজ করছি। খুব একটা যে কঠিন তা নয়। তবে মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে যেন ফলের কোন ক্ষতি না হয়। ফল বেড়ে উঠতে সাহায্য করে ডাল কাটিং এর কারণে। এখন এ কাজই করছি। ধীরে ধীরে এসব কাজে শ্রমিক বাড়ছে।

বাগান পরিদর্শনে এসে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাহমিদ আহমেদ বলেন, পড়ালেখার পাশাপাশি গ্রামে এসব বাগান করার শখ আমার। যা ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হয়ে ফলে চাহিদাও পূরণ হবে। এটি গ্রামে করা সম্ভব। আমি আপাতত জানতে এসেছি। যেসব বেকার বন্ধু থাকেন গ্রামে তাদের উদ্যোক্তা হতে আহ্বান করবো।

বাগান মালিক নির্মল রায় বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে মালটা চাষে সবারই ভাগ্যবদল হতে পারে। সেক্ষেত্রে উদ্যোক্তা গড়ে তুলতে অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ সরকারের। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এ চাষের প্রতি আহ্বান করতে হবে। আমরা যারা ফল চাষি রয়েছি তারা যদি ফল সংরক্ষণের জন্য সরকারের কোন ব্যবস্থা পাই তাহলে অনেকেই এ চাষ থেকে মুখ ফেরাবেনা।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, হরিপুর, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী ও সদর উপজেলার প্রায় ৬৫ হেক্টর এবং প্রায় তিন হেক্টর বসতবাড়ির জমিতে মাল্টার চাষ হচ্ছে। মার্চ-এপ্রিলে এসব গাছে ফুল আসে।

আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মাল্টার ফল পাকে। পাঁচ-ছয়টা মাল্টা ওজনে এক কেজি হয়। ঠিকভাবে পরিচর্যা করলে একটি পরিণত গাছে গড়ে ১৫০-৩০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। এছাড়া প্রায় দেড় শতাধিক কৃষক মাল্টা চাষ করছেন।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে শেখ কামাল আন্ত: স্কুল ও মাদ্রাসা অ্যাটলেটিক্স প্রতিযোগিতা শুরু

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, মাল্টা একটি লাভজনক ফসল। জেলাতে দিন দিন এ চাষ বাড়ছে। আমরা কৃষি অফিস থেকে  আরও দক্ষ করে তুলতে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সাথে পরামর্শ করছি। যে কোন প্রয়োজনে কৃষকরা আমাদের সাথে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন