ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিনি ঘুরপাক খাওয়া বিদ্যালয়

তিনি ঘুরপাক খাওয়া বিদ্যালয়

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র—ছাত্রীর মোট সংখ্যা তিন জন, পরীক্ষা দিয়েছে তিন জন, পরীক্ষা থেকে ফেল করেছে তিন জন। আর তাদের পড়ানোর জন্য আছেন তিন শিক্ষিকা আর এক জন প্রধান শিক্ষক মোট চার জন। মানসম্মত পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পোষাইদ গ্রামের ছাহেদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পঞ্চম শ্রেণিতে মোট তিন জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে চার জন শিক্ষক । শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শ্রেণির বানানও করতে পারছে না ইংরেজিতে। এ অবস্থায় বিদ্যালয়টি শিক্ষার মান ভালো করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি স্থানীয়দের। উপজেলার পোষাইদ গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে রাতুল, জসিম মিয়ার কন্যা জুই, বাদল মিয়ার কন্যা স্বর্ণা তাদের মধ্যে রাতুল পঞ্চম শ্রেণির রোল রোল (১)।

স্থানীয়রা বলেন, শিক্ষকরা বলে শিক্ষার্থী থাকলেও বেতন পাব, না থাকলেও পাব। এমনিতেই কিন্ডারগার্ডেন স্কুল হওয়াতে শিক্ষার্থী কম। এরপরেও যা ছিল তাদেরও যদি ভালোভাবে পড়াতো তাহলে এই অবস্থা হতো না। উপস্থিতি সংখ্যাসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, পরবর্তীতে দেখব কেন এরকম হলো। পরবর্তীতে পাস করিয়ে দেয়া হবে,তিনি আরও বলেন,পঞ্চম শ্রেণিতে তিন জন পরিক্ষা দিয়েছে তারা তিন জনই ফেল করেছে তবে তাদের মধ্যে রোল ১ রাতুল নামের শিক্ষার্থীকে পাস করিয়ে দেওয়া হবে,বাকী দুই শিক্ষার্থী জুই ও স্বর্ণা ফেল থাকবে। ছাহেদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির এর কাছে স্কুলে মোট কত জন শিক্ষর্থী রয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন প্রতিদিন কতজন আসে বা আসেনা, তা আমার খেয়াল থাকে না।

স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অমনোযোগী ও মোবাইল আসক্ত হওয়ায় এমনটি হতে পারে। তবে স্থানীয়রা ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন, নিয়মিত ক্লাস না নেওয়া ও শিক্ষকদের গাফিলতির কারণে এমন ফলাফল এসেছে। ছাহেদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককেরা ঠিক মতো স্কুলে আসেনা,স্কুল রেখে বাড়িতে ধানের কাজসহ বিভিন্ন কাজ করে। ছাত্র/ছাত্রী স্কুলে আসলো কি আসলো না,পড়লো কি পড়লো না তার কোন খেয়াল রাখে না শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলে শিক্ষার্থী থাকলেও বেতন পাব, না থাকলেও পাব।

ওই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা দশটায় থাকলেও শিক্ষকরা আসেন সাড়ে ১১টায়। আবার আড়াইটা বাজলেই ছুটি দিয়ে দেন তিনটার মধ্যে তারা বিদ্যালয় বন্ধ করে চলে যান। এলাকার লোকজন এ বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলেন না, কারণ এলাকা ও স্কুলটির বদনাম হবে তাই। কোনো শিক্ষকই ২০ থেকে ২৫ মিনিট এর বেশি ক্লাস নেন না।

কথা হয় ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাতুল এর সঙ্গে। সে বলেন,স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে সাত জন শিক্ষর্থী ছিলো,পড়া লেখা না হওয়ায় চার জন শিক্ষার্থী অন্য স্কুলে চলে গেছে। এবার পরীক্ষায় আমরা ৩ জন অংশগ্রহণ করে সকলেই ফেল করেছি। কিছু সময় পর জুই এর বাবা জসিম মিয়ার সঙ্গে দেখা হলে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি অন্যতম কারণ হলো বরমী,মাওনাসহ বিভিন্ন জায়গাতে ভালো মেধা স¤পন্ন বিদ্যালয় রয়েছে শিক্ষার্থীগুলো সেখানেই চলে যায়। কম মেধাবী শিক্ষার্থীগুলো এখানেই ভর্তি হয়। তাছাড়া আমাদের এখানকার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অবহেলা রয়েছে। তারা জানে না তার শিক্ষার্থী কখন কোথায় যাচ্ছে ঠিকমতো লেখাপড়া করছে কিনা কোনো খোঁজ খবর রাখে না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নামে এর আগেও এলাবাসি মিলে জেলা শিক্ষা অফিস উপজেলা শিক্ষা অফিস বরাবর শিক্ষকদের গাফিলতির বিষয়ে অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সেই থেকে শিক্ষকরা ছাত্র/ছাত্রীদের ঠিক মতো পড়ায়না, না হলে একটি স্কুল থেকে তিন শিক্ষার্থী ফেল করে কীভাবে? সারা বছর শিক্ষকরা ঠিকমতো পড়াশোনা করায় নাই। শিক্ষার্থীদের ওপর ঠিকমতো নজরদারি নেই শিক্ষকদের। তাই এমন ফলাফল এসেছে। আমার সন্তানের একটি বছর লস হয়ে গেল। এ দায়ভার আমরা নাকি স্কুল কর্তৃপক্ষ নেবে? ।

ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বিদ্যালয় থেকে তিন জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। একজনও পাস করতে পারল না। তবে এটা খুবই দুঃখজনক। সেই সঙ্গে বলব কিছুটা ব্যর্থতা আমাদেরও আছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির এর সঙ্গে ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, তিন জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একজনও পাস করতে পারেনি, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি কারও সামনেই কথা বলতে পারছি না। আসলে আমাদের কোথায় দুর্বলতা এ বিষয়গুলো আমি খুঁজে পাচ্ছি না। এজন্য আগামী রোববার বিদ্যালয়ে সভা আহ্বান করা হয়েছে।

এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা নাসরিন বলেন, স্কুলটির পঞ্চম শ্রেণি থেকে তিন জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিল। তারা সবাই ফেল করেছে। এটি দুঃখজনক। বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। তবে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। সেই সঙ্গে নীতিমালা অনুযায়ী স্কুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন