শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শঙ্কা নি‌য়ে সুন্দরব‌নে যাচ্ছে জে‌লেরা

দ্বার খুললেও হা‌সি নেই

দ্বার খুললেও হা‌সি নেই

কেউ নৌকায় জাল, কাঠ ও বরফ উঠা‌চ্ছেন, কেউ নৌকার পাটা সংস্কার কর‌ছেন। কেউ পাশ না পে‌য়ে অ‌ফি‌সের আ‌শপা‌শে ঘুরাঘুরি কর‌ছেন। আবার কেউ পাশ নি‌য়ে সুন্দরব‌নে মাছ ধরার উ‌দ্যেশ্যে রওনা দি‌চ্ছেন।

স‌রেজ‌মিন শুক্রবার সকা‌লে এমন চিত্রের দেখা মে‌লে সুন্দরব‌ন প‌শ্চিম বন‌বিভা‌গের খুলনা রে‌ঞ্জের আওতাধীন কা‌শিয়াবাদ ফ‌রেস্ট অ‌ফি‌স প্রাঙ্গ‌নে।

দীর্ঘ তিন মাস নি‌ষেধাজ্ঞা শে‌ষে শুক্রবার (১ সে‌প্টেম্বর) সুন্দরব‌নে মাছ ধর‌তে যা‌চ্ছেন জে‌লেরা। সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা, অভয়ারণ্য প্রবেশ করে বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধের জন্য পাশ ইস্যু করার ক্ষেত্রে এবার নি‌র্দিষ্ট খা‌লের নাম উ‌ল্লেখসহ বেশ ক‌য়েক‌টি শর্ত আ‌রোপ করা হ‌য়ে‌ছে। শ‌র্তের কার‌ণে ভালো মাছ পাওয়া নি‌য়ে জেলে‌দের ম‌ধ্যে শঙ্কা বিরাজ কর‌ছে।

কা‌শিয়াবাদ ফ‌রেস্ট স্টেশ‌নের আওতায় শাকবা‌ড়িয়া, বজবজা, খা‌সিটানা, আন্ধারমা‌নিক এই চার‌টি ফাঁড়ি র‌য়ে‌ছে। এবার এখান থে‌কে পাশ নেয়া জে‌লেরা ওই স্টেশ‌নের আওতাধীন সুন্দরব‌নের বাই‌রের খা‌লে মাছ ধর‌তে পার‌বে না। জে‌লে‌দের পা‌শপার‌মি‌টে এবারই প্রথম নি‌র্দিষ্ট ক‌রে খা‌লের নাম উ‌ল্লেখ ক‌রে দেয়া হ‌চ্ছে। এ বিষ‌য়ে গত ২৮ আগস্ট সুন্দরবন প‌শ্চিম বন‌বিভা‌গের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (‌ডিএফও) ড. আবু না‌সের মোহ‌সিন হো‌সেন এক‌টি লি‌খিত নি‌র্দেশনা দি‌য়ে‌ছেন। নি‌র্দিষ্ট খা‌লে মাছ ধরার এই নি‌র্দেশনায় জে‌লে‌দের মু‌খের হা‌সি বিলীন হ‌য়ে‌ছে। ভা‌লো মাছ পাওয়া নি‌য়ে তারা শঙ্কায় র‌য়ে‌ছেন। খাল বিভাজন নি‌য়ে সকা‌লে কর্মকর্তা ও জে‌লেরা বাক‌বিতন্ডে জ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে।

সেখা‌নে কথা হয় শফিকুল, সা‌হেব আলী, আয়ুব আলীসহ বেশ ক‌য়েকজন জে‌লের সা‌থে। তারা ব‌লেন, আমরা সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। অন্য কোন কাজ কর‌তে পা‌রি না। তিনটি মাস পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে। সরকার যে চাল দেয় তা‌তে কিছু হয়না। ধার দেনা ও সমিতি থেকে লোন করে সংসার চালাতে হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ডুবলো চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ

তারা আরও ব‌লেন, আমা‌দের সুন্দরবন খু‌লে দেওয়ার আনন্দ বিলীন হ‌য়ে গে‌ছে। আ‌গে এক‌টি খা‌লে মাছ না পড়‌লে অন‌্য খা‌লে যে‌তে পারতাম। এবার সে সু‌যোগ বন্ধ ক‌রে দেয়া হ‌য়ে‌ছে। এজন‌্য মাছ পাওয়া নি‌য়ে আমরা চি‌ন্তিত।

নাম প্রকা‌শে অ‌নিচ্ছুক এক বিএল‌সিধারী জানান, কা‌শিয়াবা‌দের আওতায় সুন্দরব‌নে মাছ ধরার এলাকা কম। এজন‌্য এবার এখান থে‌কে পাশ নিব না। কোপাদক স্টেশ‌ন থে‌কে পাশ নি‌য়ে মাছ ধর‌তে যা‌বো।

কা‌শিয়াবাদ ফ‌রেস্ট স্টেশ‌নের স্টেশন কর্মকর্তা শ‌্যামা প্রসাদ রায় ব‌লেন, এ স্টেশ‌নের আওতায় ৯৪৩ বিএল‌সি র‌য়ে‌ছে। ত‌বে পাশ দেওয়ার সময় খাল নি‌র্দিষ্ট ক‌রতে যে‌য়ে কিছুটা জ‌টিলতা সৃ‌ষ্টি হ‌চ্ছে। বিএল‌সির তুলনায় জায়গা কম হওয়ায় জে‌লেরা এ স্টেশন থে‌কে পাশ নি‌তে চা‌চ্ছেন না। প্রথম‌দি‌নে অর্ধশতা‌ধিক বিএল‌সিধারী পাশ নি‌য়ে সুন্দরব‌নে প্রবেশ ক‌রে‌ছেন।

‌তি‌নি আরও ব‌লেন, আ‌গে কোম্পানীর আওতাধীন জে‌লেরা এক স্টেশন থে‌কে পাশ নি‌য়ে অন‌্য স্টেশ‌নের আওতাধীন ব‌নের নি‌ষিদ্ধ এলাকা অভয়ার‌ণ্যে চ‌লে যেত। খাল নি‌র্দিষ্ট ক‌রে দেওয়ায় তারা আর এ সু‌যোগ পা‌বেন না। কোম্পানীগু‌লো বি‌নি‌য়োগ ক‌রে ব‌সে আ‌ছে। খা‌লে মাছ না পে‌লে তা‌দের ক্ষ‌তি হ‌বে। এসব নি‌য়ে কোম্পানীর জে‌লেরা বে‌শি জ‌টিলতা সৃ‌ষ্টি কর‌ছে

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন