সোমবার, ২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্যটনশিল্পে বিরূপ প্রভাব

পর্যটনশিল্পে বিরূপ প্রভাব
  • সীমান্তে চরম মানবিক বিপর্যয়
  • মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধে বিপযস্ত জান্তা সরকার

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরো দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যা ও সংকট তৈরি করেছে মায়ানমারের আভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধ। সাময়িকভাবে রাখাইন রাজ্যসহব ৭টি প্রদেশে মায়ানমার জান্তা সরকার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নারী ধর্ষণ, শিক্ষার্থীদের বোমা মেরে হত্যা করে চরম বেকাদায় পড়েছে জান্তা বাহিনী। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা আফগানিস্তান ও জম্মু কাশ্মীরের অবস্থার দিকে মায়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি। আর এ যুদ্ধের কারণে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে পড়েছে বিরূপ প্রভাব। সীমান্ত অঞ্চলে দেখা দিয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়।

ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু জান্তা সরকারের কাছে এখন খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। এমনিতেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মায়ানমারের কোনো সময় ইতিবাচক মনোভাব ছিল না। জান্তা সরকারের পৃষ্ঠপোষক জঙ্গি সংগঠন আরসার কর্ম পরিধি ও দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। ফলে টান পড়েছে তাদের অর্থ ও গোলা ভান্ডারে। তাই অস্থির আরসা ক্যাডাররা বাংলাদেশিদের একের পর এক ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আদায় করছে মুক্তি পণ। আর শরনার্থী শিবিরে চালিয়ে যাচ্ছে ধারাবাহিক হত্যাকান্ড। হত্যাকান্ডের পেছনে রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে অস্থির করে তোলা। ‘প্রত্যাবাসনে অনীহা’ শব্দটি মাত্র তিন অক্ষরের। কিন্তু এই ক্ষেত্রে এই শব্দটির কারণেই বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বের সীমান্ত অঞ্চল অস্থির। বাংলাদেশের উপর ভয়াবহ চাপ তৈরি হয়েছে ১২ লক্ষ রোহিঙ্গার ভারে।

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ২৭০ কিলোমিটার। উত্তরে রাঙ্গামাটির ধোপানীছড়া থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত দুর্গম পাহাড়, তারপর নাফ নদী ও সর্বশেষ দক্ষিণে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত সাগর সীমান্ত। পুরো সীমান্তই চ্যালেঞ্জিং। এক সময় এই সীমান্তের একটি বড় অংশ ছিল অরক্ষিত। ধাপে ধাপে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এসেছে। মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি’র অবস্থান আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে মজবুত ও সুসংহত করেছে।

আরও পড়ুনঃ  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে: আপিল বিভাগ

তবে সীমান্ত জুড়ে সাম্প্রতিক গোলাগুলি আর সংঘর্ষের সঙ্গে আগের ঘটনাগুলো মিলছে না। এই দফায় সীমান্ত পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। ২০২২ সালের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সীমান্ত বেশ অস্থির। ঘটছে নানা ঘটনা। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে দেশটির বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি। রাখাইন রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হচ্ছে তারা।

সম্প্রতি রাখাইনের মাইয়ু নদীর পাশে বাউলি বাজার অবস্থিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি ব্যাটেলিয়ন দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। সেখান থেকে লুট করেছে অস্ত্র। ৩২৫ ব্যাটেলিয়নের অবস্থান ভৌগলিক কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একটি ফেরি ঘাট রয়েছে। নদী ও সড়ক পথ বিবেচনায় কৌশলগত কারণে এই সেনা ক্যাম্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সেনা ক্যাম্প বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে বেশি দূরে নয়। এছাড়া এই ঘটনার মধ্য দিয়ে শক্তি অর্জন করে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি।

একের পর এক তারা দখল করছে দেশটির সেনা-বিজিপি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন এলাকা। সেই সংঘর্ষ কখনো কখনো ঘটছে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু-ঘুমদুম অঞ্চলের সীমান্তে দেড় মাস ধরে চলছে গোলাগুলি। মর্টারসহ আর্টিলারি শেল-এর বিকট শব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে পুরো এলাকা। সীমান্তের ওপাশের সংঘর্ষের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশ অংশেও।

শুরু থেকেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসছেন গনমাধ্যম কর্মীরা।  বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত ঘুরে এসেছি একাধিক বার। শুরুতে পরিস্থিতি ছিল চরম ভয়াবহ। এ অবস্থায় সীমান্তবাসীদের মনে এখনো আতংক কাটেনি। গোলার শব্দ তাদের এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেছেন  আমরা চরম আতংকের মধ্যে দিনাতিপাত করছি। যদিওবা যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরী  হয়নি এখনো। আগামী দিনে সীমান্তবাসীর ভাগ্যে কি লেখা আছে তা বলা মুশকিল।বিজিবি শক্ত অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়রা ও নানা ভাবে তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা হারিয়েছে

সম্প্রতি জিরো লাইনে একজন রোহিঙ্গা মর্টারশেলের আঘাতে নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। একজন বাংলাদেশি উপজাতীয় যুবক গোলার আঘাতে পা হারিয়েছেন। যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার একাধিকবার সীমানা অতিক্রম করেছে। ওড়ানো হচ্ছে ড্রোন। সীমান্তে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বিজিবি। সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ করেছে বিজিবি।

এদিকে বিজিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর আচরণের কড়া জবাব দেয়া হয়েছে। বিজিবি বিজিপির মধ্যে ইতোমধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে বলে জানান বিজিবির এ কর্মকর্তা। অন্যদিকে কূটনীতিক পর্যায়ে ও এ বিষয়ে চলছে দেন দরবার। মায়ানমার ভিত্তিক তাইল্যান্ডের গণমাধ্যম ইরাবতী প্রতিদিন মায়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতির খবর ছাপিয়ে যাচ্ছে। ইরাবতী জানাচ্ছে দিন দিন নতুন নতুন এলাকা জান্তা বাহিনীর হাত ছাড়া হচ্ছে।

রাখাইনের মন্ডু, বুচিডং, চীন রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার দখল নিতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে আরকান আর্মি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অর্ধেকের ও বেশি রাজ্যের দখল এখন আরকান আর্মির হাতে চলে গেছে। গত দেড় মাস ধরে চলা যুদ্ধে আরকান আর্মি খুবই দক্ষতার সাথে সফলতা অর্জন করেছে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করছেন আরকান আর্মি। তাদের মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে জান্তা বাহিনী। তবে মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতি সীমান্তে সংকট তৈরি করেছে।

নাইক্ষ্যছড়ি থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত সীমান্ত এলাকার লোকজনের সাথে কথা হয় শতাধিক ব্যক্তির সাথে। তারা খুবই আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। মায়ানমারের ওপারে ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ ঘটাচ্ছে মায়ানমার। বাংলাদেশ খুবই দক্ষতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। তার পর ও সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ।

সংবাদটি শেয়ার করুন