রবিবার, ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে সেচযন্ত্র দোন

হারিয়ে যাচ্ছে সেচযন্ত্র দোন

শত শত বছর থেকে মানুষ কৃষি কাজে পানি সেচের জন্য কৌশল ব্যবহার করে আসছে। এর মধ্যে অন্যতম পদ্ধতি ছিলো ‘দোন’ এর সাহায্যে ফসলের ক্ষেতে পানি সরবরাহ করা। কালের বিবর্তণে আধুনিক প্রযুক্তির সেচযন্ত্রের ভিড়ে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রাচীন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেচযন্ত্র ‘দোন’।

পত্নীতলা উপজেলার প্রবীন কৃষকদের নিকট থেকে জানা যায়, আগেকার দিনে ফসলি জমিতে পানি সেচের জন্য টিন ও বাঁশের তৈরী অথবা টিন ও কাঠের তৈরী দোন ব্যবহার হতো। নদী, খালবিল বা জলাশয় থেকে কৃষকরা ফসলি জমি পানি সেচের জন্য এ দোন ব্যবহার করতো। উঁচু-নিচু জমিতে পানি সেচ দিতে দোন ছিলো অতুলনীয়। গ্রাম বাংলার কৃষকদের আবিষ্কার হলো এই দোন।

আম অথবা কাঁঠাল জাতীয় গাছের মাঝের অংশের কাঁঠ কেটে নিয়ে তার মাঝ খানে খোদাই করে ড্রেন তৈরী করে পানি সেচ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতো। কোনো কোনো স্থানে নারিকেল, তাল, সুপারি গাছ দিয়েও এ দোন তৈরী করা হতো। আবার কেউ কাঠের তক্তা দিয়েও এ দোন তৈরী করতো। এ দোন দিয়ে ফসলি জমিতে পানি সেচ করলে খরচা অনেক কম হয়। ক্রস আকারে দুটি বাঁশের শক্ত খুঁটি মাটিতে পুঁতে তার সঙ্গে লম্বা অন্য একটি বাঁশ বেঁধে দেওয়া হয়। এক অংশে দোনের মাথায় অন্য অংশে মাথায় মাটির ভরা ( ওজন ) তুলে দিয়ে পানিতে চুবিয়ে তুললে একসঙ্গে পানি উঠে আসে। এভাবে অনবরত পানি সেচ দিলে দ্রুত সেচের কাজ হয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটের ভাষা মেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত

বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির সেচযন্ত্র যেমন: শ্যালো, ডিপ, এলএলপিসহ বিভিন্ন ধরণের সেচযন্ত্র আসায় সেই প্রাচীন যুগের কৃষকদের তৈরী গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী দোন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কৃষকরা বলেন, দিন যাচ্ছে দেশ আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে। আমাদের বাপ (বাবা) – দাদারা এ টিন ও কাঁঠের তৈরী দোন ব্যবহার করে ফসলি জমিতে পানি সেচ করতো। এত খরচা অনেক কম হতো। আর এখন আধুনিকতার ছোয়ায় নতুন নতুন সেচযন্ত্র  তৈরী হয়েছে যার ফলে খরচাও অনেক বেড়ে গেছে।

এবিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ প্রকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, দেশে বর্তমানে সব জমি শতভাগ সেচের আওতায় আসায় দোন এর সাহায্যে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়না। ফলে কৃষকরা এখন আর দোন ব্যবহার করে না।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন