শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সরকারের সহযোগিতা চায় পরিবার

সরকারের সহযোগিতা চায় পরিবার
  • রনির টাকায় চলতো সংসার

সরকার যদি এই পরিবারের দিকে না তাকায় তবে তাদের সংসার চালনো খুব মুশকিল হয়ে পড়বে। সংসারটা রনির টাকায় চলতো, এখন সংসার কিভাবে চলবে আমরা জানি না। সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। কথাগুলো বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত ফায়ার সার্ভিসকর্মী রমজানুল ইসলাম রনির স্বজনরা। এদিকে রনি বাবা আকরাম হোসেন আঙ্গুর তার ছোট ছেলে তারিকুল ইসলামের জন্য ও রনির স্ত্রী রূপা আক্তার যোগ্যতা অনুসারে নিজের জন্য সরকারের কাছে চাকরির আবেদন জানিয়েছেন ।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, দেড় বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন রনি। সর্বশেষ বদলি হন  চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনে। সেখানে তিনি ছয় মাসে আগে বিয়ে হওয়া স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন ।

গত ৪ জুন রাতে অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে দায়িত্ব পালনে বাসা থেকে গেঞ্জি পরেই বেরিয়ে যায় রনি। এরপর থেকে রবিবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত তার মোবাইল ফোন বন্ধ পায়। পরে রনির বউ কয়েকবার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ও চট্টগ্রামে মেডিক্যালেরনিকে খুঁজতে যায়। কিন্তু বার বার গেলেও রনির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে বিকৃত লাশের মাঝে গেঞ্জি দেখে তার লাশ শনাক্ত করেন স্ত্রী রূপা আক্তার।

রনির চাচা আবুল কাশেম বলেন, চার ভাইবোনের মধ্যে বড় রনি। প্রায় দেড় বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে চাকরি হয় রনির । ছোট ভাই তারিকুল ইসলাম চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা পাস করে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চেষ্টা করছেন। রনির ছোট বোন আশামণি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে নবম ও আঁখিমণি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে । তাদের লেখাপড়াসহ পরিবারের সব খরচ চালাতো রনি। ছয় মাস আগে শেরপুরের শ্রীবরদী থানার জালকাটা গ্রামের রুপা আক্তারের সঙ্গে রনির বিয়ে হয়। তিন মাস আগে সীতাকুণ্ডে বদলি হয়ে সেখানেই স্ত্রীসহ বসবাস  করছিল।

আরও পড়ুনঃ  স্থগিত করা হলো সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ ব্যয়ের ৫০ শতাংশ

রনির দাদা ইউনুস আলী (৭০) বলেন, ‘আমার বড় নাতি রনি। তার টাকায় চলতো তাদের সংসার। ছোট নাতীর পড়াশোনাসহ সকল খরচ দিতো রনি। সেই রনি এখন আর নেই, আগুনে পুড়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মারা গেছে। নাতিটা ছুটি নিয়ে বাড়ি আসতে চাইলো, পরে আমরা না করছি। আজ যদি ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে আসতো,তাহলে আগুনে পুড়ে মরতে হতো না’।

রনির চাচা চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য মো. জামান মিয়া বলেন, রনির টাকা দিয়েই সংসারটা চলতো। এখন সংসার কিভাবে চলবে আমরা   জানি না।

রনির স্ত্রী রূপা আক্তার বলেন, আমি কৃষি ডিপ্লোমা পাস করেছি। মাত্র ছয় মাস আগে রনির সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল। আমরা সুখে সংসার করছিলাম। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন সইল না। অসময়ে স্বামীকে হারালাম। আমার তো কোনো সন্তানও নেই। তাহলে আমি কী নিয়ে বাঁচব ? তাই আমার বাঁচার জন্য যোগ্যতা অনুসারে সরকারের কাছে একটি চাকরির আবেদন জানাই।

এদিকে বিচারাধীন একটি মামলায় কারাগার থেকে জামিনে থাকা রনির বাবা আকরাম হোসেন আঙ্গুর বলেন, অনেক শখ ছিল বড় ছেলে রনি ডিফেন্সে চাকরি করবে। চাকরিও পেয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনায় সব তছনছ হয়ে গেলে। আমি অসুস্থ, মিথ্যা মামলায় জেল খাটছি। এখন আমি কিভাবে সংসার চালাবো। সরকারের কাছে আবেদন জানাই, আমার ছোট ছেলে তারিকুল ইসলামকে যেন একটা সরকারি চাকরি দেয়া হয় ।

চরশেরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.সেলিম মিয়া অসহায় রনির পরিবারকে প্রয়োজনীয় অর্থসহায়তা দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।

আরও পড়ুনঃ  রাত নামলেই অশান্ত

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স শেরপুরের উপপরিচালক মো. জাবেদ হোসেন বলেন, সরকারি দায়িত্ব পালনকালে নিহত ফায়ার ফাইটার রনির পরিবারকে অর্থসহায়তাসহ সরকারি নিয়মানুযায়ী সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন