শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুদ্রা পাচার রোধে ট্র্যাকিং

মুদ্রা পাচার রোধে ট্র্যাকিং
  • বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্য স্ক্যানিং
  • বন্দরগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ

দেশে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচার রোধ এবং প্রণোদনার অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ঠেকাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে জাহাজ ও কন্টেনার ট্র্যাকিং এবং পণ্য স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত এই নতুন নির্দেশনা দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে বিরাজিত বেশ কিছু অনিয়ম রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

দেশের আমদানি বাণিজ্যে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের অনিয়ম চলে আসছে। বিশেষ করে মিথ্যা আমদানি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ বহু পুরানো। শুধু ওভারইনভয়েসিংই নয়, খালি কন্টেনার আনার ঘটনাও ঘটে। পাথর বালিসহ বিভিন্ন বর্জ্য ভর্তি কন্টেনারও বিভিন্ন সময় ধরা পড়েছে। এই ধরনের ঘটনায় বিদেশি রপ্তানিকারক যতটুকু না জালিয়াতি করে তার থেকে ঢের বেশি হয় আমদানিতে জালিয়াতি। বিদেশ থেকে পণ্য না এনে ডলার পাচার করে দেয়ার মাধ্যমে বহু ব্যবসায়ী শিল্পপতি কোটি কোটি ডলার বিদেশি ব্যাংকে জমা করেছে। কানাডার বেগমপাড়া কিংবা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমের শত শত কোটি ডলারের অধিকাংশই আমদানির আড়ালে পাচার করা হয়।

যে কোনো পণ্য আমদানির জন্য শুরুতে এলসি করতে হয়। ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি করা হয়। পরবর্তীতে দেশে পণ্য আসার পর ওই ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি মূল্য পরিশোধ করে টাকা বিদেশে রপ্তানিকারকের একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিদেশি রপ্তানিকারকের সঙ্গে যোগসাজস করে দেশীয় আমদানিকারকেরা টাকা পাচারের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দীর্ঘ সময়।

আরও পড়ুনঃ  ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পুঁজিবাজার

একইভাবে পণ্য রপ্তানি নিয়েও অভিযোগের পাহাড় রয়েছে। বিদেশে পণ্য রপ্তানি না করেই প্রণোদনার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে দেয়া কিংবা রপ্তানিমূল্যের নামে বিদেশ থেকে নিজের টাকা এনে কালো টাকা সাদা করার অভিযোগ রয়েছে। এগুলো ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সরকার নানাভাবে উদ্যোগ নিয়েছে। এবার নতুন একটি নির্দেশনা জারি করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকগুলো কোনো আমদানি পণ্যের মূল্য পরিশোধ করতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে জাহাজ ও কন্টেনার ট্র্যাক করে সেই পণ্য দেশে এসেছে কিনা স্ক্যানিং করে তা নিশ্চিত হতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্ট’ আমদানি মূল্য পরিশোধে ঝুঁকি কমাতে উপরোক্ত নির্দেশনা জারি করে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ওসব ব্যাংক থেকে প্রতিটি এডি শাখাকে বিষয়টি কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

অপরদিকে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বিশেষ দল বেশ কিছু রপ্তানিকারকের রপ্তানি করা পণ্য ও চালানের মধ্যে গড়মিল খুঁজে পেয়েছেন। ব্যাংকের কাছে তথ্য গোপনসহ বিভিন্ন গোঁজামিল দেয়ার ঘটনাও উদঘাটন করা হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ী চক্র ও পণ্য জাহাজীকরণে জড়িত একটি মহলের সহায়তায় বিদেশে পণ্য পাঠিয়ে বাড়তি আয় করেন। আর এই অপ্রদর্শিত বাড়তি আয় বিদেশে পাচার করা হয়।

আবার রপ্তানির প্রকৃত তথ্য গোপন করে বিদেশে অর্থ রেখে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। অর্থাৎ একশ’ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করে পঞ্চাশ কোটি টাকা দেশে এনে বাকি পঞ্চাশ কোটি টাকা বিদেশে ব্যাংকে রেখে দেয়ার মতো ঘটনাও ধরা পড়েছে। এভাবে অর্থ পাচার ঠেকাতে পণ্যবাহী যানসমূহ ট্র্যাকিং ও স্ক্যানিং করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রপ্তানি খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ এবং এ খাতকে সুরক্ষা দিতে পণ্যবাহী জাহাজ ও কন্টেনারের মালামালে ট্র্যাকিং করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে কোনো ধরনের অনিয়ম ধরা পড়লে আইন অনযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  দূষিত বায়ুর দিন বাড়ছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পাওয়ার কথা স্বীকার করে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম জোনাল হেড মোহাম্মদ আজম বলেন, কন্টেনারে আমদানিকৃত পণ্য স্ক্যানিং ও কন্টেনার ট্রাকিং করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে কোনো ধরনের গোঁজামিল ধরা পড়লে অর্থ ছাড় না করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ তৈরি হবে। বেআইনি মুদ্রা পাচার রোধে এটি একটি ভালো উদ্যোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বন্ধ হবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নতুন নির্দেশনা দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে বিরাজিত বেশ কিছু অনিয়ম রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন