শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আনসার সদস্যরা পেলো পোকায় ধরা আতপ চাল

আনসার সদস্যরা পেলো পোকায় ধরা আতপ চাল

রংপুরে ঈদের আগে আনসার সদস্যদের মাঝে রেশনের সঙ্গে পোকা ধরা আতপ চাল বিতরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নষ্ট এ চাল বিতরণে প্রধান কার্যালয় থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। নতুন চাল কেনার শর্ত থাকলেও এক বছর ধরে রেশন স্টোরে পড়ে থাকা পোকা ধরা নষ্ট চাল তিনি চুপিসারে বিতরণ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংপুরে আনসার সদস্যদের জন্য এক বছরে (বার্ষিক) পাঁচ পর্বের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চাহিদা দেওয়ায় আনসার ভিডিপির নিজস্ব স্টোরেই পোকা ধরে নষ্ট হয়েছে ২ হাজার ১০০ কেজি আতপ চাল। নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও সম্প্রতি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর স্টোরে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা ওই চাল রেশনের সঙ্গে বিতরণ শুরু করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী বছরে পাঁচ উৎসব পর্বের আতপ চাল প্রতি বছর একেবারেই দেওয়ার কথা। অথচ এক বছরের পুরোনো এই আতপ চাল পোকা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে

আনসারের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চাহিদা অনুযায়ী ২০২১ সালে ২ হাজার ৬৮০ কেজি আতপ চাল আসে রংপুরে। নির্দেশনা অনুযায়ী বিতরণ করা হয় মাত্র ৫০০ কেজি চাল। নিয়মবহির্ভূত এক বছরের চাহিদায় প্রয়োজনের চেয়ে চার বছরের অতিরিক্ত চাল আসায় রংপুর জেলার রেশন ভান্ডারে রয়ে যায় ২ হাজার ১০০ কেজি চাল।

সূত্র বলছে, আনসার সদস্যের পারিবারিক রেশন সামগ্রীর মধ্যে পাঁচ পর্বে আতপ চালের প্রয়োজন ছিল ৫৩৩ কেজি। তবে রংপুর জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয় থেকে চাহিদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ২ হাজার ৬৬৮ কেজি। যা দিয়ে প্রায় পাঁচ বছরের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। জেলার চাহিদার প্রেক্ষিতে ২ হাজার ১৪৭ কেজি আতব চাল বেশি আসে। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি এই চাল পরে রেশন স্টোরে রাখা হয়।

আরও পড়ুনঃ  বৃষ্টি নিয়ে সুখবর দিলো আবহাওয়া অফিস

বিষয়টি জানাজানি হলে সঙ্গে সঙ্গেই প্রধান কার্যালয় থেকে শোকজ করা হয় জেলা কার্যালয়কে। এর জন্য ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাসেল আহমেদ। এ চাল বিক্রি করে নতুন চাল কেনার শর্তে ক্ষমা করা হয় তাকে। তবে ক্ষমার শর্ত ভঙ্গ করে দীর্ঘ এক বছর ফেলে রেখে সেই পুরোনা চালই বিতরণ শুরু করেন এ কর্মকর্তা।

এদিকে সুবিধাভোগীরা বলছেন, তাদেরকে না জানিয়ে এই নষ্ট চাল দেওয়া হয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে একজন বলেন, ঈদের আগে রেশনের সঙ্গে আতপ চাল পেয়েছি। কিন্তু চালে কালো পোকা ধরছে। এটা খাওয়ার উপযোগী মনে হচ্ছে না। এক বছরের পুরোনো ও বিনষ্ট এই চাল আমাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আরেকজন বলেন, ঈদ উপলক্ষে পাঁচ কেজি আতপ চাল পেয়েছি। কিন্তু চালের অবস্থা ভালো না। পোকা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চাহিদা দেওয়া হলে চাল বরাদ্দ আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ওই বছরে ঈদুল আজহার সময়ে আনসারে কর্মরত সকলের জন্য পরিবারের লোক সংখ্যা অনুযায়ী সবমিলিয়ে ৫০০ কেজি আতপ চাল বিতরণ করা হয়। অতিরিক্ত চাহিদা দিয়ে বরাদ্দ নেওয়া বাড়তি ২ হাজার ১০০ কেজি চালের ব্যাপারে প্রধান কার্যালয় থেকে কারণ দর্শানো হয়।

এ কারণে রংপুর জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রংপুর সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট রাসেল আহমেদ তখন নিঃশর্ত ক্ষমা চান। রয়ে যাওয়া ২ হাজার ১০০ কেজি আতপ চাল বিক্রি করে নতুন চাল ক্রয় করে তা বিতরণের জন্য তাকে শর্ত দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি তা না করে অতিরিক্ত চাল নিজ দায়িত্বে রেখে দেন। বর্তমান রংপুর জেলা কমান্ড্যান্টের সময়ে সেই চাল বিতরণ করা হবে- এমন তথ্য থাকায় তিনি গত ২৯ মার্চ সরেজমিনে দেখেন এবং উক্ত চাল বিতরণ করা যাবে না মর্মে নির্দেশ দেন। কিন্তু এরপরও সেই নষ্ট হওয়া আতপ চাল বিতরণ শুরু হয়।

আরও পড়ুনঃ  'সরকারের উন্নয়ন কাজকে অস্বীকার করা মানে দলকে অস্বীকার করা'

শর্ত ভঙ্গ করে পোকা ধরা চাল বিতরণের বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট রাসেল আহমেদ নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং ক্ষমা চান।

অন্যদিকে এ বিষয়ে  রংপুর জেলা কমান্ড্যান্ট (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হাফিজ মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।

তবে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রংপুর রেঞ্জের কমান্ডার আব্দুস সামাদ বলেন, অতিরিক্ত ২ হাজার ১০০ কেজি আতপ চালের বিষয়ে আবারও নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান কার্যালয়। এটা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ভুল, এর দায় তাকে নিতে হবে। নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন