শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুবাতাসের পর ফের সংকট

প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স

বিশ্বের সিংহভাগ উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির বড় শক্তি প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। দুই দশক ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভারসাম্য নির্ধারণ করছে প্রবাসী আয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব প্রবাসী আয়ে বদলে গেছে জিডিপির আকার। তবে করোনার শুরু থেকে ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় ভাটা পড়তে শুরু করেছে রেমিটেন্সে। ১৭ দিনের ব্যবধানে আয় কমে অর্ধেকে নেমে গেছে। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় রেমিটেন্স কমেছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৮ দিনে দেশে রেমিটেন্স এসেছে ১২৭ কো‌টি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে এসেছে ৬৮ কো‌টি ৫৪ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।

খাত সংশ্নিষ্টরা বল‌ছেন, কোভিডের কারণে প্রবাসীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে অনেকে জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছেন। অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে সব অর্থ পাঠিয়ে দেশে ফিরেছেন। অবৈধ চ্যানেলগুলো বন্ধ ছিল তাই বাধ্য হয়ে সবাই ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠিয়েছে। ফলে গত বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশি ছিল। এখন ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে। এক দেশের সঙ্গে অন্যদেশের যাতায়ত বাড়ছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া জমানো টাকা না পাঠিয়ে অনেকে আবার জমাতে শুরু করেছেন। আবার সশরীরে যাওয়া-আসা শুরু হওয়ায় অনেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসছেন। যে কারণে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি ফেব্রুয়ারির ১৭ দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ৩২ লাখ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৩ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৮ লাখ মার্কিন ডলার। দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছে এক কোটি ২৭ লাখ মার্কিন ডলার। গত বছরের ফেব্রুয়ারির ১৮ দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৯ কোটি ৫৬ লাথ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে ৯৫ কোটি ৬১ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার এবং দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছিল দুই কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলার।

চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে ১৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার এসেছে। গত বছরের একই মাসে ১৮ দিনে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছিল ৩৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নতুন বছ‌রের প্রথম মাস জানুয়া‌রি‌তে দেশে ১৭০ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের বছরের জানুয়ারির চেয়ে ২৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার বা ১৩ শতাংশ কম।

এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ১৯৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার প‌রিমাণ এক লাখ ২ হাজার ৭১৮ কো‌টি টাকা। রেমিট্যান্সের এ অংক আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯৬ কোটি ডলার বা প্রায় ২০ শতাংশ কম। এর আগের অর্থবছরের একই সময় এসেছিল এক হাজার ৪৯০ কোটি ডলার।

আরও পড়ুনঃ  আধিপত্যবাদে অপরিশোধিত তেল

২০২০-২১ অর্থবছরের অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। তার আগের বছর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন