- উৎপাদন কমিয়ে দাম বাড়ানোর কৌশলে ওপেক
- পর্যবেক্ষণে রাশিয়া, উৎসে বৈচিত্র্য আনতে তৎপর ভারত
যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অপরিশোধিত তেল উৎপাদন দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শীর্ষ তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের জোট ওপেক প্লাস। গত বুধবার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জোটের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিজেদের আধিপত্য ও দাম ধরে রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি।
অপরিশোধিত তেল উৎপাদন কমানোর বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বলে আসছিল ওপেক প্লাসের সদস্যরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্ররা বারবার উৎপাদন না কমাতে অনুরোধ জানিয়েছে। তাতে মত পাল্টায়নি ওপেক। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও এই সংস্থার অন্যতম সদস্য এখন রাশিয়া। বুধবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক।
তবে সেই সিদ্ধান্তের আগেই গত মঙ্গলবার প্রতি ব্যারেলে ৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৩ ডলারের মতো বেড়ে প্রায় ৯২ ডলার হয়েছে। বিশ্ববাজারে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দামও ৩ ডলারের মতো বেড়ে সাড়ে ৮৬ ডলার হয়েছে।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পরিবর্তে এখন নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তির ওপর বেশি জোর দিচ্ছে ভারত। দেশটির আশঙ্কা, রাশিয়ার তেল কেনার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে ভবিষ্যতে সরবরাহ আটকে যেতে পারে। এ জন্য সরবরাহ ঠিক রাখা ও আর্থিক ক্ষতি এড়াতে নির্দিষ্ট মেয়াদি চুক্তি করতে চাচ্ছে ভারত। শুধু রাশিয়া নয়, ভারতের রাষ্ট্রীয় দুই তেল শোধনাগার কোম্পানি ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন (আইওসি) ও ভারত পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিএলসি) এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশের সঙ্গেই নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি করতে চাইছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত মার্চ থেকে রাশিয়ার তেল নেওয়া কমিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা জোট। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানির ওপর ইইউর বিশেষ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। ফলে প্রয়োজন মেটাতে এখন মধ্যপ্রাচ্যের অপরিশোধিত তেল কেনার পথে হাঁটছে ইউরোপ। এতে ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়েছে ভারতসহ এশীয় দেশগুলো। এ জন্যই মেয়াদি চুক্তিতে বিভিন্ন উৎস থেকে তেল কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে ভারত।
নির্দিষ্ট মেয়াদে তেল চুক্তি করতে ও আমদানির উৎসে বৈচিত্র্য আনতে ইতোমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে ভারত। ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন গত মাসে ব্রাজিলের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোব্রাসের সঙ্গে ১ কোটি ২০ লাখ ব্যারেল ও কলম্বিয়ার বৃহৎ তেল উৎপাদক ইকোপেট্রোলের সঙ্গে ৬০ লাখ ব্যারেল তেল আমদানির চুক্তি করে। প্রথম ধাপে এই চুক্তির মেয়াদ হবে ৬ মাস।
অবশ্য স্পট ক্রয়ের মাধ্যমে চলতি বছরে লাভবান হয়েছে ভারত।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে চলতি বছরের শুরুর দিকে রাশিয়ার তেলের বাজার সংকুচিত হয়ে যায়। এ সময় নতুন বাজার ধরতে বিশেষ মূল্য ছাড় দিয়ে তেল বিক্রি শুরু করে রাশিয়া। এই সুযোগে কম দামে বিপুল পরিমাণে অপরিশোধিত তেল কেনে ভারত। কয়েক মাসের ব্যবধানে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রাহকে পরিণত হয় দেশটি। তবে এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন থাকবে না। আবার যেকোনো সময় নতুন করে কোনো বৈশ্বিক সংকট তৈরি হতে পারে। এ জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তিতে তেল কেনা সুবিধাজনক বলে মনে করছে ভারত।