শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে স্বপ্ন দেখছে রাজশাহী

বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে স্বপ্ন দেখছে রাজশাহী
  • ১৪ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান
  • আকৃষ্ট হবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী
  • রাজশাহী হবে প্রযুক্তি’র নগরী

রাজশাহী শিক্ষা নগরী। এর অর্থ এ নগরী শিক্ষিত মানুষ তৈরির কারখানা। শিক্ষা নগরীতে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মানুষ শিক্ষিত হয়ে বের হলেও ছিল না কর্মসংস্থান। নিজেদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার কোনো নির্ভরযোগ্য প্লাটফর্ম।

স্বপ্নের শুরুটা ২০১৬ সালে। ওই সালের ২২ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এই হাইটেক পার্ক নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন দেয়। এরপরের বছরের ১৩ জানুয়ারি সড়কবাতি, ভূমি উন্নয়ন এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণের কাজ উদ্বোধন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর হাইটেক পার্কের মূল অংশের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন স্বপ্ন দেখছে রাজশাহীবাসী। ১৪ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন।  

প্রকল্পটির মূল অংশ দুই ভাগে বিভক্ত। একটি হলো, শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার। অপরটি হলো, সজীব ওয়াজেদ জয় সিলিকন টাওয়ার। এর মধ্যে পাঁচ তলা বিশিষ্ট শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে ১০ তলা বিশিষ্ট জয় সিলিকন টাওয়ারের কাজও দ্রুত গতিতে চলছে।

প্রায় ৭২ হাজার বর্গফুট আয়তনের শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে ইতোমধ্যে অফিস স্থাপনের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে স্থান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অফিস স্থাপন করে পুরোদমে কার্যক্রমও শুরু করেছে।

এই ইনকিউবেশন সেন্টারটিতে অফিস স্পেস আর বাগান ছাড়াও চাইল্ড কেয়ার হোম, জিমনেশিয়াম, আইওটি ল্যাব এবং থিয়েটার করা হবে। এগুলোর কাজ প্রায় শেষ। করোনা পরিস্থিতিতে কাজ পিছিয়েছে। তবুও খুব তাড়াতাড়িই এগুলোর কাজ শেষ হবে।

আরও পড়ুনঃ  বেসিস-বিডিট্যাক্সের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

অন্যদিকে প্রায় দুই লাখ বর্গফুট আয়তনের ‘সজীব ওয়াজেদ জয় সিলিকন টাওয়ার’ এর নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে।

হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর জিয়ানগরে ৩১ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন ১২তলা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক নির্মাণের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল জুলাই ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। সেই সময় নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩৮ কোটি টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। ফলে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৮৭ কোটি ৭১ লাখ টাকায়। প্রথম দফায় নির্মাণ ব্যয় বাড়ে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা। প্রথম দফায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও একবছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয় দ্বিতীয় দফায়। এর ফলে আরও ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। করোনার কারণে নিদিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

রাজশাহীতে জ্ঞানভিত্তিক আইটি ইন্ডাস্ট্রি স্থাপন করা, জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীকে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে ব্যবসায়ীক পরিবেশ সৃষ্টি করা, নতুন আইটি উদ্যোক্তাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। এই পার্ক তৈরির পর এখানে ১৪ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

রাজশাহী পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভা এলাকার নওহাটা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উচ্চ বিদ্যালয়ের সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল হান্নান চৌধুরী জানান, রাজশাহীতে হাইটেক পার্ক অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার থেকে ট্রেনিং নিয়ে তরুণ-তরুণীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এখন থেকে আর চাকরির পেছনে ছুটতে হবে না, নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে মানুষকে চাকরি দিতে পারবে তরুণ–তরুণীরা।

আরও পড়ুনঃ  বাংলায় ব্যবহার করা যাবে হোয়াটসঅ্যাপ

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান এর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), রাজশাহী মেডিকেলসহ রাজশাহীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালে রাজশাহীতে এক জনসভায় এই অঞ্চলের জন্য একটি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন। আজ প্রায় শেষ পর্যায়ে এ পার্কের কাজ। রাজশাহী হবে প্রযুক্তি’র নগরী।

আনন্দবাজার/এম.আর

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন