বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বসছে ১৬ হাজার সিসি ক্যামেরা

ঢাকা শহরের অলিগলি পর্যন্ত ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ফলে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বসানো হচ্ছে হচ্ছে উচ্চপ্রযুক্তির ১৬ হাজার সিসি ক্যামেরা। ‘ঢাকার ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের উন্নয়ন’ বা ‘ডেভেলপমেন্ট অব ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম অব ঢাকা প্রকল্প’-এর ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ আনুষঙ্গিক বেশকিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

পুলিশের ক্যামেরা প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘প্রকল্পটি ভালো। এটি শিগগিরই হয়তো একনেকে যাবে। পাশ হলে পরিচালক নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষে ক্যামেরা স্থাপনের কাজটিও শুরু হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে রাজধানীর একটি ক্ষুদ্র অংশ পুলিশের সিসি ক্যামেরা মনিটরিংয়ের আওতায় রয়েছে। এজন্য প্রায় ১২শ কামেরা দিয়ে গুলশানের কূটনৈতিক জোনসহ কয়েকটি এলাকায় নজরদারি করছে পুলিশ। এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশকিছু এলাকায় সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি করে। তবে এখনো রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা ক্যামেরা মনিটরিংয়ের আওতায় আসেনি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোটা রাজধানীকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে ঢাকা শহরে ১৬ হাজারেরও বেশি ক্যামেরা বসানো হবে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ক্যামেরা শুধু অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করবে পুলিশ। বাকি এক হাজারের মতো ক্যামেরা ব্যবহৃত হবে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজে। উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম, ফেস ডিটেকশন (চেহারা চিহ্নিতকরণ), গাড়ির নম্বর প্লেট চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি বা এএনপিআরসহ অন্তত ১১ ধরনের সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে।

আরও পড়ুনঃ  জাহাজ ভাঙায় শীর্ষে বাংলাদেশ

প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যামেরা প্রকল্পের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে ডিজিটাল টহল নিশ্চিত করা। অর্থাৎ গভীর রাতেও নির্জন রাস্তা থাকবে পুলিশের নজরদারিতে। ক্যামেরায় চেহারা শনাক্তের প্রযুক্তি থাকায় অপরাধী এবং পলাতক আসামিদের সহজেই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। চুরি এবং ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না।

এছাড়া থাকবে স্বয়ংক্রিয় শব্দ চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থা। রাজধানীর কোথাও কোনো শব্দ হলে তাৎক্ষণিকভাবে শব্দের বিস্তারিত তথ্যসহ কন্ট্রলরুমে সিগন্যাল চলে যাবে। ফলে পুলিশের ভাষায় ‘শুটিং ইনসিডেন্ট’ বা গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে দ্রুততম সময়ে তথ্য পাবে পুলিশ। এমনকি কতদূরে গুলি হয়েছে এবং কী ধরনের অস্ত্রের গুলি, তাও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। ক্যামেরায় থাকবে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা বস্তু ক্যামেরায় ধরা পড়ামাত্র সংকেত বেজে উঠবে।

পুলিশের ক্যামেরা প্রকল্পের সার্বিক বিষয় তদারকের দায়িত্বে আছেন পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক। প্রকল্পের সুবিধাগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস বা ট্রিপল নাইন নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ক্যামেরা প্রকল্প ট্রিপল নাইনের সঙ্গে যুক্ত হলে সেবার মান আরও বাড়বে। আক্রান্ত বা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি কোনোমতে ফোন তুলে একটি চিৎকার বা ‘হেল্প’ শব্দ উচ্চারণ করতে পারলেও পৌঁছে যাবে পুলিশ। কিন্তু বর্তমানে ট্রিপল নাইনে ফোন করে অভিযোগকারীকে তার নাম-ঠিকানাসহ অবস্থানের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হয়। কিন্তু ক্যামেরা প্রকল্প বাস্তবায়নের পর কাজটি হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এজন্য নিজস্ব ভৌগোলিক লোকেশন ব্যবস্থা বা পিজিআইএস ব্যবহার করবে পুলিশ।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় অসহায়দের পাশে জাহানারা

পুলিশের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিসি ক্যামেরা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বেশকিছু পুলিশিং সুবিধা মিলবে। যেমন: রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সুউচ্চ ভবন, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে থাকবে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে। এছাড়া ইংরেজি নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ, পূজা ও শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলে উচ্চমাত্রায় নিরাপত্তা দিতে পারবে পুলিশ। কোনো অঘটন ঘটলে অপরাধী শনাক্ত করা আরও হবে সহজ।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন