বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উৎপাদন হ্রাসের শঙ্কায় বাড়লো দাম

উৎপাদন হ্রাসের শঙ্কায় বাড়লো দাম

ওপেকের বৈঠকের আগেই বাড়লো জ্বালানি তেলের দাম

তেল উৎপাদনকারী দেশের সংস্থা ওপেক প্লাসের বৈঠককে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এক ডলারের বেশি বেড়ে গেছে। সংস্থাটি তেলের উৎপাদন কমাতে পারে এমন ধারণা থেকেই গতকাল সোমবার তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী।

গতকাল সোমবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ৮৮ ডলার বা দুই শতাংশ বেড়ে ৯৪ দশমিক ৯০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তার আগে গত শুক্রবার মূল্য বাড়ে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টামিডিয়েটের মূল্য ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ৭৩ ডলার বা দুই শতাংশ বেড়ে ৮৮ দশমিক ৬০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগের সেশনে এটির দাম বাড়ে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠক শেষে ওপেক ও তার মিত্ররা তেলের উৎপাদন কমাতে পারে। জ্বালানি তেলের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী রাখতেই এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। যদিও সরবরাহ এখনো স্বাভাবিক নেই। সিএমসি মার্কেটসের বিশ্লেষক টিনা টেং বলেছেন, চাহিদায় কমায় মূল্য ধরে রাখতে উৎপাদন কমাতে পারে ওপেক প্লাস। কারণ চীনের কিছু অংশে নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে।

এদিকে, ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওপেকের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও বিশ্বের দ্বিতীয় বড় তেল উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া এই মুহূর্তে ওপেকের সঙ্গে একমত নয়। ফলে সংস্থাটি উৎপাদন একই রকম রাখতে পারে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি এবং চীনের করোনা নিয়ন্ত্রণ নীতিমালাও প্রভাব ফেলেছে। আগের সেশনে উভয় বেঞ্চমার্ক জ্বালানি তেলের দামই ৩ শতাংশ বা দুই সপ্তাহের নিচে নেমে এসেছিল। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রেন্টের দাম ৭ শতাংশ এবং ডব্লিউটিআইয়ের দাম ৫ শতাংশ কমেছিল।

আরও পড়ুনঃ  বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের জন্য ইসির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

আইএনজির কমোডিটি রিসার্চের প্রধান ওয়ারেন প্যাটারসন বলেন, জ্বালানি উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে বলেই মনে করি। প্রত্যাশিত বাজার চাহিদার চেয়ে তাদের উত্তোলন কম এবং ইরানের সরবরাহ ইস্যুতে তাদের উত্তোলন নিয়ে বড় কোনো পরিবর্তন আনবে কিনা এ বিষয়ে হয়তো স্পষ্ট সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

চলতি সপ্তাহে বাজার চাহিদা প্রাক্কলন কমিয়েছে ওপেক প্লাস। ২০২২ সালে চাহিদার চেয়ে বাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ দিন প্রতি চার লাখ ব্যারেল কম। ২০২৩ সালের জন্য বাজারে দৈনিক তিন লাখ ব্যারেল ঘাটতির পূর্বাভাস তাদের। রাশিয়ার জ্বালানি তেল রফতানিতে সম্ভাব্য মূল্যনির্ধারণ করে দেয়ার কথাও ভাবছেন ওপেক প্লাসের নীতিনির্ধারকরা।

রাশিয়ার জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করে দিতে জি৭-এর অর্থমন্ত্রীরা চাপ দিতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জবাবে মস্কোর জ্বালানি আয় কমাতে গতকাল কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে জি৭। তবে দাম যাতে না বাড়ে, এজন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিতের পক্ষে তারা।

এদিকে, চীনে নতুন করে করোনা বিধিনিষেধের শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা। চেংদু শহরে গত বৃহস্পতিবার লকডাউন আরোপ করে স্থানীয় নগর কর্তৃপক্ষ। ভলভোসহ বিভিন্ন বড় কোম্পানির কারখানা থাকায় বিশ্ববাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে সাংহাই, কুনশান ও বেইজিংয়ে কয়েক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনে পুরো সরবরাহ চেইন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এতে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চীনের অর্থনীতিতে যেমন শ্লথগতি নেমে এসেছে, তেমনি বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়েছে।

আইজির মার্কেট স্ট্র্যাটেজিস্ট ইয়াপ জুন রং জানান, সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দামে পতন দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি চীনে করোনা লকডাউনের কারণে চাহিদায় সম্ভাব্য শ্লথগতিতে দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী থাকতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  ইউক্রেন বন্দরে ৭৬ জাহাজ

চীনের সরকারি উপাত্তে দেখা গিয়েছে, চাহিদা হ্রাসের কারণে আগস্টে চীনের কারখানা কার্যক্রম তিন মাসের মধ্যে প্রথম সংকুচিত হয়েছে। বিদ্যুৎস্বল্পতা ও করোনার প্রাদুর্ভাব উৎপাদন ব্যাহত করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন