রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তোলনে সম্ভাবনা থাকলেও কেন গ্যাস আমদানি

উত্তোলনে সম্ভাবনা থাকলেও কেন গ্যাস আমদানি

প্রশ্ন জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের—

  • দাম বাড়লে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হ্রাসের শঙ্কা
  • দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে মূল্যস্ফিতি-অশান্তি বাড়বে
  • গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার আশ্বাস

দেশে উৎপাদিত গ্যাসের থেকে ২৪ গুণ বেশি দাম পড়ছে আমদানি করা গ্যাসে। তাছাড়া বিদেশি কোম্পানির মূল্যও দেশের উৎপাদন মূল্য থেকে ১১ গুণ বেশি। তাই দেশের গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ সিপিডির।

ডেল্টা এরিয়া বা বদ্বীপ দেশ হিসেবে পরিচিত নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ায় প্রচুর গ্যাস পাওয়া যায়। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ বদ্বীপ রাষ্ট্র বাংলাদেশের গ্যাস সংকট খুবই দুঃখজনক বলা হচ্ছে। দেশের বর্তমান এ গ্যাসের অভাবকে অবহেলাজনিত সংকট মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া দেশে গ্যাসের বড়  সম্ভাবনা থাকলেও আমদানি নির্ভরশীলতা বাড়ছে কেন সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জ্বালানি বিশ্লেষকরা।

দেশের চলমান গ্যাস সংকট ও এনএনজি আমদানি নিয়ে গতকাল রবিবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত এক আলোচনায় এসব মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল এ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও মো. আব্দুল্লাহ ফাহাদ।

সিপিডির প্রবন্ধে বলা হয়, দেশের বর্তমান জ্বালানি চাহিদার ৪৬ শতাংশ মেটাতে হয় গ্যাস দিয়ে। যেখানে ৫২ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করা হয় দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে। আন্তর্জাতিক বাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির মূল্য প্রতি কিউবেক মিটারে ৫ ডলার থেকে সম্প্রতি ৩৫-৩৬ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ায় দেশে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দেশের ৬৬টি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ভিন্ন কোনো জ্বালানি সরবরাহ করে গ্যাস সংকট সাময়িকভাবে কমানো যায় বলে অভিমত সংস্থাটির।

আরও পড়ুনঃ  কৃত্রিম সুতার বাজার ধরতে দরকার নীতি সহায়তা

দেখা যাচ্ছে দেশে উৎপাদিত গ্যাসের থেকে ২৪ গুণ বেশি দাম পড়ছে আমদানি করা গ্যাসে। তাছাড়া বিদেশি কোম্পানির মূল্যও দেশের উৎপাদন মূল্য থেকে ১১ গুণ বেশি। তাই দেশের গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ সিপিডির।

আলোচনায় বিশেষ অতিথি বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জানান, দেশে এলএনজি আমদানিতে ১০ ভাগ পর্যন্ত সিস্টেম লস হচ্ছে। এটা বিশ্বের অন্য দেশে হয় ১ শতাংশের কম। এটা দ্রুত কমাতে হবে। নতুন করে গ্যাসের ১১৭ ভাগ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হলেও অবশ্যই তা সহনশীল রাখা হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।

সভার সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন সরকারের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ৯০ ভাগ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেও এখন তা ৫১ ভাগে নেমে এসেছে। এখনো গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ৪২ ভাগ গ্যাস সংকট রয়েছে বলেনও জানান তিনি। খনি থেকে গ্যাস উত্তোলনের চেয়ে গ্যাস আমদানিতে দূষণ কম হবে বলে মনে করেন এ সরকারি কর্মকর্তা। ক্যাপাসিটি কস্ট হিসেবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে টাকা না দিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রয়োজনে রপ্তানির কথা ভাবার কথা জানান তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. বদরূল ইমাম বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বদ্বীপ হয়েও আমাদের এ গ্যাস সংকট নিজস্ব অবহেলাজনিত সংকট। গত ২ দশকে মাত্র ২২টি ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে। প্রতি বছরে একটা করে গ্যাস ক্ষেত্র হিসেব করলে এটা কোনো অনুসন্ধানের পর্যায়েই পড়ে না। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে এখনো কোনো অনুসন্ধান করা হয়নি। এখন ৩ দশক পর এসে বলা হচ্ছে আমাদের গ্যাস কোথায়? এই সময়ে এসে যে এমন হবে এটা নিয়ে ভাবেনি কেউ।

আরও পড়ুনঃ  মৃত্যু বাড়লেও কমেছে শনাক্ত

কোনো গোষ্ঠী হয়তো চায়নি গ্যাস অনুসন্ধান হোক। তাই এটা হয়নি বলেও মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক। ‘তারা হয়তো চায় গ্যাস আমদানি হোক’ যুক্ত করেন তিনি। দেশে এলএনজি আমদানি নিয়ে যতো কথা হয় গ্যাস উত্তোলন নিয়ে তা হয় না বলে অভিযোগ করেন ড. ইমাম।

আরেক জ্বালানি বিশ্লেষক ড. ম তামিম বলেন, আমাদের নিজেদের গ্যাস নিয়ে না ভাবায় এ পরিস্থিতি আসছি আমরা। পেট্রেবাংলার নিজস্ব স্টাডিতেও গ্যাস সংকট হবে জানা থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিশ্ববাজারে জ্বালানি আমদানিতে বাংলাদেশকে শিশু আখ্যা দিয়ে সাময়িক দাম বাড়ার ধাক্কা সমলানোর সক্ষমতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তিনি। নয়তো সামনে আরো দুর্ভোগ পোহাতে হবে বলে শঙ্কা জানিয়ে উন্নয়ন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ জ্বালানি উপদেষ্টা।

পোশাক খাতের সংকট তুলে ধরেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) প্রতিনিধি রাজিব হায়দার। গত ১০ বছরে ক্যাপটিভে গ্যাস সরবরাহে তাদের কাছে ৩৬১ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে সামনে দাম বাড়লে প্রতিযোগিতার বাজারে ভিয়েতনামের সঙ্গে টিকতে পারবে না বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন