প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িগুলোতে দক্ষ চালক নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশনের গাড়িতে প্রাণহাণির ঘটনাকে ইঙ্গিত করে এমন ঘটনা আর দেখতে চান না বলেও সতর্ক করে দেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সরকারপ্রধান এ নির্দেশনা দেন। ১০টি সিটি কর্পোরেশনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সভায় অংশ নেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
এ অর্থবছরের ১০ম এই একনেক সভায় প্রায় ৩৭ হাজার ৫০৭ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩৬ হাজার ২৩ কোটি লাখ টাকা এবং বৈদেশিক অর্থায়ন ১ হাজার ৪৪৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। তাছাড়া সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন রয়েছে ৩৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
উৎকট গন্ধ ও পরিবেশ দূষণরোধে শহরের বাইরে এবং মহাসড়ক থেকে দূরে বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এসব শোধনাগার শহরের বাইরে স্থাপন করতে হবে। সেগুলোতে মডার্ন টেকনোলজি যোগ করতে হবে। কেমিক্যাল এবং ফিজিক্যাল দুই ক্ষেত্রেই সর্বশেষ টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সিটি করপোরেশনের বর্জ্য শোধনাগার লোকালয়ের বাইরে স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িগুলোতে দক্ষ চালক নিয়োগের নির্দেশনা দেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির ময়লার গাড়ি চালকরা বেশকিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। এতে আমরা সবাই দুঃখ পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো অবগত। এজন্য তিনি বলেছেন, নতুন প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ সিটিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যেসব গাড়ি কেনা হয়েছে সেগুলোতে যেন দক্ষ লোক নিশ্চিত করা হয়। যেসব গাড়ি কেনা হয়েছে সেগুলোর চালকদের বিশেষ ট্রেনিং দিতে হবে। এসব ঘটনা (দুর্ঘটনা) আর দেখতে চাই না।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প রয়েছে। এগুলো হলো- ‘মোংলা কমান্ডার ফ্লোটিলা ওয়েন্ট (কমফ্লোট ওয়েন্ট) এর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, এবং ‘চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহ (ত্রিশাল) মিলিটারি ফার্ম আধুনিকায়ন’ প্রকল্প।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ‘আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্প যথাক্রমে ‘বাংলাদেশের ১০টি অগ্রাধিকারভিত্তিক শহরে সমন্বিত স্যানিটেশন ও হাইজিন (সমন্বিত কঠিন ও মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা)’ প্রকল্প; ‘ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প; ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধিভুক্ত এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা, সড়ক মেরামত ব্যবহৃত আধুনিক যান যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং ম্যাকানাইজড় পার্কিং স্থাপনের মাধ্যমে যানজট নিরসনকরণ’ প্রকল্প এবং ‘গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্প।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘ঢাকার আজিমপুরস্থ মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে’ প্রকল্প এবং ‘৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (চর্র এইচপিএনএসপি) (১ম সংশোধিত)’। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রনটিয়ার টেকনোলজি এর প্রাথমকি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘স্মার্ট কৃষি কার্ড ও ডিজিটাল কৃষি (পাইলট)’ প্রকল্প।
আনন্দবাজার/শহক