ঢাকা | মঙ্গলবার
১১ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৬শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাহাজে মালবহনে রেকর্ড মুনাফা

করোনার ধাক্কা সামলে ওঠার পর বিশ্বের প্রধান প্রধান বন্দরে পণ্য ও জাহাজজটে কন্টেইনারের যেমন স্তূপ জমে উঠেছে, তেমনি চাহিদাও বেড়ে গেছে। এতে বৈশ্বিক শিপিং কোম্পানিগুলোর সামনে বড় সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে। বিশ্বব্যাপী জাহাজে মালবহনে রেকর্ড মুনাফা আসতে শুরু করেছে। কোনো কোনো কোম্পানি ১১৭ বছরের রেকর্ড ভেঙে মুনাফা করছে। কেউ আবার লাভের বিচারে অ্যাপল ইংকেও ছাড়িয়ে গেছে। এমনকি বিশ্বের বৃহত্তম কন্টেইনার শিপিং লাইন- এপি মোলার মায়েরস্ক এ/এস চলতি বছর তিনগুণ মুনাফার আশা করছে। যা তাদের দু’বছর আগে ২০১৯ সালে হওয়া আয়ের চেয়েও ১৫ গুণ বেশি। জার্মানির আরেক জায়ান্ট হ্যাপাগ-লয়েড এজি ছয় মাসে যত মুনাফা করেছে, কোম্পানির বিগত ১০ বছরের মোট লাভের চেয়েও তা বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক সরবরাহ চক্রে বিচ্ছিন্নতার কারণেই জাহাজে পণ্য বহন বা ফ্রেইট খরচ বেড়েছে। এতে একদিকে ব্যবসায়ী, উৎপাদক আর ভোক্তাদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠলেও সমুদ্রগামী পণ্যবাহী জাহাজ সংস্থাগুলো করে চলেছে রেকর্ড মুনাফা। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও। দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ীরা এখন জাহাজখাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। মূলত, মহামারির অভিঘাতে বৈশ্বিক সরবরাহ চক্রে বিচ্ছিন্নতার কারণে জাহাজে মালবহন ভাড়া বেড়েছে বহুগুণ। এতে বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে এ খাতে। সেই বাড়তি আয়ের জন্যই এ খাতে নতুন বিনিয়োগ এসেছে ৫০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০ কোটি ডলারে।

জাহাজ খাতে ব্যবসা করতে আসা বড় শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম মেঘনা গ্রুপ। যাদের বর্তমানে মালবাহী জাহাজের সংখ্যা ১৫টি। এছাড়া আকিজ গ্রুপের রয়েছে ১০টি জাহাজ, কর্ণফুলী গ্রুপের ৬টি, বসুন্ধরা গ্রুপের ৪টি এবং ওরিয়ন গ্রুপের একটি। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে অধীনে আরো ৮টি জাহাজ থাকার কথা। সূত্রমতে, করোনার মহামারিকালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জাহাজ চালু করেছে মেঘনা গ্রুপ। করোনাকালে বাংলাদেশ থেকে যে ৩২টি সমুদ্রগামী জাহাজ যাত্রা শুরু করে, তার মধ্যে ১০টিই মেঘনা গ্রুপের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেঘনা গ্রুপের ১৫টি জাহাজ মাসে সাত লাখ ৫০ হাজার টন পণ্য পরিবহন করে। সে হিসাবে বছরে বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে ৯০ লাখ টন পণ্য পরিবহন করে মেঘনা গ্রুপের জাহাজগুলো। তাদের জাহাজগুলো ধারণ ক্ষমতার ৬০ শতাংশ কোম্পানির নিজস্ব পণ্য বহন করে। বাকি ৪০ শতাংশ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির জন্য বরাদ্দ থাকে।

সূত্রমতে, ২০১৩ সালের দিকে বাংলাদেশি মালিকানায় কার্গো জাহাজের সংখ্যা ছিল ৮৫টি। পরে জাহাজ পরিচালনা ব্যয় বেড়ে যাওয়া, জাহাজ তৈরি ও আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ প্রত্যাহার করার কারণে জাহাজের সংখ্যা কমে আসতে থাকে। বিশেষ করে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ, ভাবমূর্তি সংকট, নিবন্ধনে দীর্ঘসূত্রিতা, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বন্দরের দ্বিগুণ করারোপ এবং জাতীয় পতাকাবাহী জাহাজ সুরক্ষার অভাবের মতো অনুঘটক দেশে বাণিজ্যিক জাহাজের সংখ্যা দ্রুত কমে আসতে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১৮ সালে এসে দেশে মালবাহি জাহাজের সংখ্যা কমে গিয়ে ঠেকে ৩৫টিতে।

কার্গো জাহাজের মন্দা ব্যবসার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পরে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (সুরক্ষা) আইন ২০১৯ প্রণয়ন করে। এতে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা, বন্দরে জাহাজের বার্থিং পেতে অগ্রাধিকার, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে পণ্যের ৫০ শতাংশ দেশীয় জাহাজে পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়। যা আগে ছিল ৪০ শতাংশ।

জাহাজ নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও জটিলতা দূর হয়। ফলে মালবাহি জাহাজ পরিচালনাখাতে পুনঃবিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠেন দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তারা। গত বছরে ১১৬ কোটি টাকায় দুটি কন্টেইনার জাহাজ কিনে এ খাতে ব্যবসা শুরু করেছে কর্ণফুলী লিমিটেড। গ্রুপটির বহরে এখন জাহাজের সংখ্যা ৬টি। বসুন্ধরা গ্রুপ নতুন করে বিনিয়োগ করেছে এলপিজি জাহাজ খাতে। এলপিজি পরিবহনের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের বহরে বর্তমানে আছে ৩টি জাহাজ। এই গ্রুপটির মলিকানায় রয়েছে সাধারণ পণ্যবাহী আরো একটি জাহাজ।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন