শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনার ধাক্কা সামলে সরগরম

  • উৎপাদনমুখর ৪১ কারাখানা
  • ৩৭ পোশাক শিল্পে বৈচিত্রময় পণ্য
  • কাজ করছেন ৪০ হাজার শ্রমিক

করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কুমিল্লা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। কারখানাগুলোতে দেখা দিয়েছে শ্রমিকদের প্রাণচাঞ্চল্য। কারাখানার চাক ঘুরছে পূর্ণোদ্যম। আরো বৈচিত্র্যময়, ব্যতিক্রমী ও বাহারি সব পণ্য উৎপাদনে সরগরম হয়ে উঠেছে ইপিজেড এলাকা। কারখানার কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে ইপিজেডে অনেক দিন ধরে কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। এ সময়ে শ্রমিকদের মধ্যে খানিকটা হতাশাও কাজ করতে শুরু করে। তবে করোনার দাপট করে আসায় বর্তমানে সবাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সবাই কাজে যোগ দিয়েছে। কাজের গতিও বেড়েছে আগের চেয়ে বহুগুণ।

জেলা শহরের পাশেই ২৬৭ একর জমির ওপর ২০০০ সালে স্থাপিত হয় কুমিল্লা ইপিজেড। সেখানে বর্তমানে রয়েছে ৪৮টি কারখানা। এর মধ্যে ২৭টি বিদেশি, ১৩টি যৌথ ও ৮টি দেশি মালিকানার কারাখানা। তবে এসব কারখানার মধ্যে সাতটির উৎপাদন বন্ধ থাকলেও বাকি ৪১টি উৎপাদনমুখর। যার মধ্যে ৩৭টি কারাখানাতেই তৈরি হয় পোশাক পণ্য। এর মধ্যে আবার চারটি কারখানায় বৈচিত্র্যময় রফতানিপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। করোনা মহামারির সময় কিছুটা থমকে গেলেও বর্তমানে সেই স্থবিরতা কেটে বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদনে কর্মমুখর গোটা ইপিজেড এলাকা। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৪০ হাজারের বেশি শ্রমিকের পদভারে মুখরিত গোটা এলাকা।

সূত্রমতে, কুমিল্লা ইপিজেডের প্রায় অর্ধশত কারখানা থেকে যত পণ্য রফতানি হয়, তার ৯৫ ভাগই হলো তৈরি পোশাক। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে বেশি পোশাক রফতানি হয়। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৭৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার মতো। এর আগের বছর রফতানি হয়েছিল ৫৬ কোটি ডলারের পণ্য। গত এক বছরে রফতানি বেড়েছে ৩৩ ভাগ বা ১৯ কোটি ডলার।

আরও পড়ুনঃ  স্বাস্থ্য বিধি না মানায় সাভারে সকল মার্কেট ও বিপণী বিতান বন্ধ ঘোষণা

তবে তৈরি পোশাকের বাইরে এখানে বাচ্চাদের খাবার প্লেট, মগ, পানির বোতল, শোপিস ও নানা ধরনের পুতুল তৈরি হয় হাসি টাইগার নামের একটি কারখানায়। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কারাখানাটি প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখ ডলারের পুতুল রফতানি করে থাকে। তবে করোনার কারণে গত এক বছরে রফতানি কমে ১০ লাখ ডলারের নিচে নেমে এসেছে। তবে সুখবর হলো, দুই-তিন মাস ধরে আবার ক্রয়াদেশ বাড়ছে।

তিনতলা জুড়ে হাসি টাইগার কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৬০০ কর্মী। প্রতিদিন গড়ে ক্যামেরার তিন হাজার বেল্ট বানানোর সক্ষমতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বছরে ১৪-১৫ লাখ ডলারের বেল্ট রফতানি করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক বলেন, করোনার ধাক্কা সামালে আবার আগের মতো ক্রয়াদেশ আসছে। সব মেশিন পুরোদমে চলছে। তাদের তৈরি খেলনার ৮০ শতাংশই জাপানে রফতানি হয়। বাকি ২০ শতাংশ কোরিয়া ও তাইওয়ানে যায়। ব্যবস্থাপক বললেন, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে জাপানে পুতুলের চাহিদা কম থাকে। কিন্তু এবারে অবশ্য চাহিদা বেশ। আশা করি, আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রতি মাসে আগের মতো দুই লাখ ডলারের পুতুল রফতানি করতে পারব।

ইপিজেডের আরেকটি কারখানায় চীনা সৌন্দর্য সচেতন নারীদের ব্যবহার্য চিরুনি, ক্লিপ, রিবন, ফিতা বানানো হয়। চারতলা ভবনের প্রতিটি তলায় নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা পুর্ণোদ্যমে কাজ করছেন। কাজের পরিবেশও বেশ ছিমছাম। মেশিনেও খুব বেশি শব্দ হয় না। এক তলায় ডাইস থেকে প্লাস্টিকের পুতুলের অবয়ব বানানো হয়। অন্য ইউনিট জোড়া লাগায়। আরেক তলায় চলে রঙের কাজ। প্যাকেজিং করা হয় আরেক জায়গায়। এই কারখানায় সব মিলিয়ে দেড় শর মতো শ্রমিক কাজ করেন।

আরও পড়ুনঃ  দরপতনের দিনেও বেড়েছে পুঁজিবাজারের সূচক

সূত্রমতে, ক্যামেরার জন্য বিশ্বখ্যাত নাইকন ও প্যানাসনিক দুটি কোম্পানি রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ হয় কুমিল্লার জেবি নেটওয়ার্কস নামে একটি কারখানায়। শুধু নাইকন ও প্যানাসনিক ক্যামেরাই নয় ক্যামেরার বেল্ট এবং ল্যান্স রাখার ব্যাগও তৈরি হয় এই ইপিজেড থেকে। বলা চলে, ফটোগ্রাফার তথা চিত্রগ্রাহকের গলায় যে বেল্টের সাহায্যে ক্যামেরা ঝুলে থাকে, সেটি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। এই কারখানায় সুতা থেকে বুননসহ ক্যামেরার বেল্ট তৈরির সব কাজই হয় যন্ত্রের সাহায্যে। একই সঙ্গে কারখানাটিতে ক্যামেরার ব্যাগ আর লেন্স রাখার ব্যাগও বানায় জাপানের এই কোম্পানি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন