নিঃস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে বিপদে পড়েছে নতুন প্রজন্মের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক (এনআরবিসিবি)। ৬টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৮৯ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে ৪ প্রতিষ্ঠানকে দেয়া প্রায় ৪৫ কোটি টাকাই মন্দমানের খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটা নতুন ব্যাংকের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ফেরত না আসা কঠিন ব্যাপার। কীসের ভিত্তিতে এসব দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হল এ প্রশ্ন এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কোনো প্রভাবশালীর অনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া এ ধরনের ঋণ দেয়ার কথা নয়। ব্যাংকের পরিচালকদের কেউ এর সঙ্গে জড়িত আছে কিনা তা বাংলাদেশ ব্যাংককে খতিয়ে দেখার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, টাকা আদায়ের চেষ্টা করছি। আমরা তো একা নয়, পুরো ইন্ডাস্ট্রি ভুক্তভোগী। বিশেষ করে ক্ষুদ্র আমানতকারীরা আরও বিপদে আছেন। পিপলস লিজিং এবং বিআইএফসির ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ চলমান। অপেক্ষায় আছি, দেখি কী হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেছেন, দুর্বল প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া ঠিক হয়নি। এটা তাদের তহবিল ব্যবস্থাপনায় সমস্যা। এখানে পিপলস লিজিং এবং বিআইএফসির টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা দেখে অন্য নতুন ব্যাংকগুলোও শিক্ষা নেয়া উচিত।
গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের কাছে ১৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) কাছে ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা, এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কাছে ১৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা এবং ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের কাছে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা পাওনা। এই ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ঋণের এক টাকাও আদায় হয়নি। এছাড়া বাংলাদেশ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডকে (বিএফআইসি) ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টকে ২৩ কোটি ১৬ লাখ টাকার ঋণ দিয়েছে এনআরবিসিবি।
এর মধ্যে ৬টি প্রতিষ্ঠান শুধু নামেই বেঁচে আছে। কোনো প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ ৯৬ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, খেলাপি ঋণের ভারে এমনিতেই চাপে আছে এনআরবিসি ব্যাংক। গত জুন শেষে ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪৯ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ৫ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি।
আনন্দবাজার/ইউএসএস