ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সফল উদ্যোক্তা ড চিং চিংয়ের ফিনারি গাঁথা

হস্তশিল্প নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন। গহনারও অনেক দোকান আছে। কিন্তু কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কেউ কাজ করছেন না। যেহেতু রিকসা পেইন্ট দেশীয় ঐতিহ্য আর এদিকে আদিবাসীদের গহনাও বিলুপ্তির পথে, তাই এ দুটি জিনিস নিয়ে কাজ করলে একদিকে যেমন দেশীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করা যাবে, অন্যদিকে ব্যবসাও হবে।

বলছিলাম একজন সফল আদিবাসী নারী উদ্যোক্তা ড চিং চিং মারমা’র কথা। যিনি মাত্র ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে জীবন সংগ্রামে নেমেছিলেন। ড চিং চিং-এর জন্ম বান্দরবানের মধ্যমপাড়ায়। তাঁর বাবা ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা। বান্দরবান থেকে ২০০৩ সালে এসএসসি, ২০০৫ সালে এইচএসসি পাস করার পর ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে ইতিহাসে স্নাতক এবং ২০১৪ সালে স্নাতকোত্তর অর্জন করেন।

ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী হলেও ছোটবেলা থেকে আগ্রহ ছিল রংতুলিতে। নিজে নিজেই শিখেছেন আঁকাআঁকি। রিকশাচিত্রের ঢঙে ছবি আঁকেন। তাঁর ক্যানভাস কখনো কাচের বোতল, কখনো কেটলি, টি-পট, কখনোবা পানদানি। ২০১৫ সালে ‘ফিনারি’ নামে নিজের ব্যবসায় উদ্যোগ শুরু করেন ড চিং চিং। আঁকা পণ্য ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রি শুরু করেন।

ফিনারির দুই বছরের যাত্রায় অনেক বাধা বিপত্তিও পার হতে হয়েছে ড চিং চিং মারমাকে। প্রথমে পুঁজির সমস্যা, পরে ঘর থেকে পুরোপুরি সহযোগিতা পেলেও বাইরে থেকে আসে নানান প্রতিবন্ধকতা। এসব কারণে কিছুদিন কাজ থেমে থাকলেও গৃহকর্তার অনুপ্রেরণায় আবারও শুরু করে ফিনারি যাত্রা।

প্রথমদিকে পানির বোতলে রিকসা পেইন্ট দিয়ে অনলাইনে বাজারজাত করার পর বেশ সাড়া পায়। এরপর একটি পণ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি আরও পণ্য তৈরি করার জন্য সাহস পান। ক্রেতাদের থেকে আসতে একের পর এক অর্ডার।

এক পর্যায়ে বোতল, এলুমিনিয়ামের কেটলি, অফিসের জন্য ফাইল কেবিনেট, শাড়ি, বাসন, মাটির কাপ-পিরিচ, কাচের গ্লাস, ল্যাম্প ইত্যাদিতে বাংলাদেশের ঐতিহ্য রিকশা পেইন্ট করা শুরু করেন।

এমনকি আর্টিফিশিয়াল লেদারের উপর, চাবির গোছা, কার্ড হোল্ডার, ওয়ালেট, অফিস ক্লিক বক্স, মাউশপেট, টিস্যু বক্স, গ্লাস পোস্টারেও রিকশা পেইন্ট করছেন। শীতে খাদি কাপড় ও শালের উপর পেইন্ট নিয়েও কাজ করছেন ড চিং চিং।

এরই মধ্যে ফিনারি তিনটি জেলায় ডিলারশিপ দিয়েছে। আরও কয়েকটি জেলায় দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ফিনারি শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের এই ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দিতে চায় আদিবাসী এ নারী।

ফিনারি কেবল ব্যবসা নয় এটি একটি প্রচেষ্টার নাম।

আনন্দবাজার/ইউএসএস

সংবাদটি শেয়ার করুন