ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধানের দাম কম পাওয়ায় আমড়া চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাটি ও পানি আমড়া চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। বিশেষ করে বরিশালের ঝালকাঠী-পিরোজপুরে সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু আমড়ার ফলন হয়। সারা দেশের ৬০-৭০ ভাগ চাহিদা মেটায় এ অঞ্চলের আমড়া চাষিরা। গেল কয়েক বছরে বাম্পার ফলনও হয়েছে। সুস্বাদু আর সুখ্যাতির কারণে কৃষকরা দামও পেয়েছেন বেশ। লাভজনক এ মৌসুমী ফল আমড়া গাছে রোগ বালাই খুবই কম। আমড়া গাছ রোপণের দু’বছর পরই তা ফল দেয় এবং কমপক্ষে ১০/১২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।

ভালো টাকা আয়ের সুযোগ থাকায় পিরোজপুরে আমড়া চাষির সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তবে গৃহস্থদের কাছ থেকে কেনা বস্তা প্রতি আট-নয়শ’ টাকার আমড়া হাত বদল হয়ে ঢাকায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ২২০০-২৫০০ টাকা ছাড়ায়। গত দু’বছর ধানের দাম কম পাওয়ায় এলাকার কৃষকরা আমড়া চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার স্থানীয় বাজারে পাইকারদের মাধ্যমে এসব আমড়া বিক্রি করে বাগানের মালিকরা কোটি কোটি টাকা আয় করছেন। তবে মধ্যস্বত্বভোগীদের অধিক মুনাফার কারণে আমড়া চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হেনা মো. জাফর জানান, চলতি মৌসুমে গত দু’তিন বছরের তুলনায় আমড়ার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। কৃষকরা তাদের চাহিদা মতো দামও পাচ্ছেন। জেলার কাউখালী, নাজিরপুর ও নেছারাবাদে এর চাষ বেশি হয়েছে। প্রায় সব বাড়িতেই অন্তত দু’তিনটি করে আমড়া গাছ আছে। এসব এলাকার রাস্তার পাশে, বাড়ির আঙিনায় আমড়া গাছ লাগানো প্রতিটি মানুষের নেশায় পরিণত হয়েছে।

এসব এলাকার আমড়া কেনা-বেচার জন্য রয়েছে একদল ব্যাপারী। শ্রাবণ থেকে কার্তিক- চারমাস পর্যন্ত স্থানীয় ব্যাপারীরা গৃহস্থদের কাছ থেকে আমড়া কিনেন। আবার কেউ কেউ গৃহস্থদের কাছ থেকে কেনা গাছ থেকে এসময়ে পর্যায়ক্রমে আমড়া সংগ্রহ করেন। তারপর সেগুলো বস্তা হিসেবে ব্যাপারীরা জেলার সবচেয়ে বড় আমড়ার মোকাম কাউখালীতে নিয়ে বিক্রি করেন। এরপর সেখান থেকে লঞ্চে করে ঢাকা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দ্বিগ বিজয় হালদার জানান, এখানে প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে আমড়া চাষ হয়। চাষিরা গত দু’তিন বছরের তুলনায় এবার আমড়ার দাম ভালো পেয়েছেন। এ উপজেলার কলারদোয়ানিয়া, দেউলবাড়ি ও মালিখালী ইউনিয়নে আমড়ার চাষ বেশি হচ্ছে। এসব এলাকা নিচু হওয়া সত্ত্বেও চাষিরা তাদের পতিত জমিতে কান্দি কেটে মাটি উঁচু করে আমড়ার চাষ করেছেন।

এ কৃষি কর্মকর্তা জানান, পিরোজপুর তথা বরিশালের আমড়া এখন দেশের ঐতিহ্য। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন ভারত, মালয়েশিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে তা পাঠানো হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যেও যাচ্ছে নিয়মিত।

আমড়া চাষি আছাদুজ্জামান শিকদার বলেন, ধানের দাম কম পাওয়ায় আমড়া চাষের দিকে ঝুঁকছি। আমড়া চাষ সহজ ও লাভজনক। এবছর প্রায় দুই একর জমিতে লাগানো আমড়া গাছ থেকে প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার টাকা পেয়েছি। কিন্তু সমপরিমাণ জমিতে ধানচাষ করলে মাত্র ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার বেশি পেতাম না।

আনন্দবাজার/ইউএসএস

সংবাদটি শেয়ার করুন