ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে পুরুষ বন্ধ্যাত্বের সমস্যা

আমাদের দেশে নারীদেরকেই শুধু দায়ী করা হয়ে থাকে বন্ধ্যাত্বের জন্য। কিন্তু এই সমস্যাটা যে পুরুষদেরও হয়ে থাকে সেটা আমরা মাথায় রাখি না। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে পুরুষদের মধ্যে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমশ কমে যাচ্ছে, এমনটাই দাবি করেছেন বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসকদের।

এই ব্যাপারে ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকশন (আইএসএআর) জানিয়েছে, সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মেয়েদের তুলনায় ১.৫% বেশি বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা যাচ্ছে পুরুষদের মধ্যে।

আসুন জেনে নেই কী কী কারণে পুরুষ বন্ধ্যাত্বের সমস্যা তৈরি হয়-

# নারীদের মত পুরুষদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ, এন্ডোমেট্রিওসিস, পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ ও জেনিটাল টিবির কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা যায়। কিন্তু পুরুষদের সমস্যা হলে মেল ইগোর কারণে চিকিৎসা করাতে গাফিলতি করেন।

# পুরুষত্বহীনতা হলো স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অক্ষমতা। এর ডাক্তারি নাম সেক্সুয়াল ডিজফাংশন। পুরুষের বন্ধ্যাত্বে অ্যাজোস্পার্মিয়া, অলিগোস্পার্মিয়া, অ্যাস্থেনোস্পার্মিয়া, টেরাটোস্পার্মিয়া বা স্পার্মের ইনফেকশন এ সকল চিকিৎসার সাহায্যে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ইরেকটাইল ডিজফাংশন বা ইজাকুলেশনের সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসাও ইনফার্টিলিটি ফিজিশিয়ানরা করেন। এক্ষেত্রে প্রথমে রোগের কারণ জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করে তারপরই চিকিৎসা শুরু করা হয়।

# শুক্রাণুর সংক্রমণ হলে পুরুষদের নড়াচড়ার ক্ষমতা লোপ পায়। ফলে বন্ধ্যাত্ব হওয়া নিশ্চিত। ওষুধের সাহায্যে শুক্রাণুর সংক্রমণ সারানো যায়। কিছু ক্ষেত্রে শুক্রাণুর কাউন্টও বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। তবে শুক্রথলি বা টেস্টিসের কার্যকারিতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে তার চিকিৎসা করা খুবই মুশকিল হয়ে পরে। কারণ ন্যূনতম ২ কোটি শুক্রাণু না থাকলে সন্তান উৎপাদনে সমস্যা হতে পারে।

# অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অবসাদ, অ্যাংজাইটি, আঁটোসাঁটো অন্তর্বাস, অতিরিক্ত গরম ইত্যাদি কারণে শুক্রাণুর কাউন্ট অনেক কমে যায়।

# পুরুষদের অতিরিক্ত ওজন এবং ভুঁড়ি থাকলেও শুক্রাণুর কাউন্ট অনেক কমে যেতে পারে। ধূমপান, মদ্যপানসহ বিভিন্ন নেশা সন্তান উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া আঘাত কিংবা কিছু ওষুধ ব্যবহারেও শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যেতে পারে। বেশি গরমে শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যায়। আবার কোলে ল্যাপটপ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করলেও শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যেতে পারে।

# আইটি সেক্টরে কর্মরত পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাতে ঘুম না হলে একদিকে মনের চাপ বৃদ্ধি পায়, অন্য দিকে ওজনও বেড়ে যায়। এর ফলে শুক্রাণু উৎপাদন কমে যাওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

# চিকিৎসকের পরামর্শ, বন্ধ্যাত্বের শুরুতেই চিকিৎসা শুরু করলে ভাল ফল আশা করা যায়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবারই বন্ধ্যাত্বের সুচিকিৎসা করতে পারেন একজন ইনফার্টিলিটি ফিজিশিয়ান বা বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ। তবে যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে, জটিলতা কম হবে।

# শুক্রাণুর সমস্যার চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাপনও পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ধূমপান এবং মদ্যপানের নেশা ছাড়তে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করে ওজন স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি খেতে হবে পুষ্টিকর খাবার।

# কাজের চাপে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক তৈরি না হলে এই সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। আঁটোসাঁটো অন্তর্বাস পরলে ও টানা বসে কাজ করলেও শুক্রাণু তৈরিতে ব্যাপক অসুবিধা হয়। ফলে কাজের ফাঁকে কয়েকবার উঠে হেঁটে নিতে হবে। পর্যাপ্ত জল পান এবং ঠিক সময়ে শৌচাগার যাওয়া দরকার। প্রস্রাব চেপে রাখলে সংক্রমণ ও তার থেকে শুক্রাণুর সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

আনন্দবাজার/এইচ এস কে

সংবাদটি শেয়ার করুন