ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২০১৯-২০ অর্থবছরে মোংলা বন্দরের আয় ১১৫ কোটি টাকা

মোংলা বন্দরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট আয়ের পরিমাণ ১১৫ কোটি টাকা। দেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর মোংলা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১১৫ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে কাস্টম হাউজের। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে করোনার প্রভাব পড়ায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোংলা কাস্টমস হাউজের আয় কমেছে বলে জানান কাস্টমস কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোংলা কাস্টমস হাউজে ৪ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা টার্গেটের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। তবে আগের রাজস্ব আদায়ের চেয়ে কিছুটা কম হলেও ৯১ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১১৫ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারি ও স্বায়িত্বশাসিত এই দুটি প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব আয় এবং মুনাফা নির্ভর করছে সমুদ্র পথে আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের ওপর। কিন্তু করোনা মহামারির কিছুটা প্রভাব পড়লেও আয়ের ক্ষেত্রে বিগত বছরের তুলনায় তেমন একটা পরিবর্তন দেখা যায়নি।

মোংলা কাস্টমস হাউজ ও বন্দর সূত্র জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উৎপাদিত পাটজাত পণ্য রপ্তানির উপর ভর করে ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর মোংলা সমুদ্র বন্দরের যাত্রা শুরু হয়। কালের পরিক্রমায় এবং চাহিদার প্রয়োজনে এক সময় আমদানি ও রপ্তানি পণ্যের প্রসার ঘটে এ বন্দরে। বিভিন্ন সময় নানা প্রতিবন্ধকতা মধ্যেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে মোংলা বন্দর। বন্দরের চলমান কর্মযজ্ঞে আঘাত হানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনার প্রাদুর্ভাব। এ মহামারি ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় নানা দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে মোংলা কাস্টমস হাউজ ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর ব্যবহারকারীদের সার্বিক সুবিধাদি প্রদানে করোনার ঝুঁকি নিয়ে কর্মতৎপরতায় পিছু হটেননি সংশ্লিষ্ট দপ্তর সমূহের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তাদের নিরলস পরিশ্রমে এখনও কর্মচাঞ্চল্য রয়েছে বন্দরের কার্যক্রম।

বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এই বন্দরে ৯১২টি দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ এই বন্দরে আসে। হ্যান্ডিলিং হয় ১ কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন বাল্ক কার্গো এবং ৫৭ হাজার ৭৩২ টিইউজ কন্টেইনার জাত পণ্য। আর ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ৯০৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ বন্দরে ভেড়ে এবং ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়। একই সঙ্গে ৫৯ হাজার ৪৫৭ টিইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে।

এদিকে বন্দরে আসা আমাদানি-রপ্তানিপণ্যে (বাল্ব কার্গো) সিমেন্ট, কিংকার এলপিজি গ্যাসের কাঁচামাল ও রিকন্ডিশন গাড়ি এবং কন্টেইনার জাত পণ্যের ওপর নির্ভর করে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে কাস্টমসের রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এ আয় ছিল ৩ হাজার ২৩৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বিগত অর্থ বছরের তুলনায় গেলো অর্থ বছরে শতকরা ২ দশমিক ৪৭ ভাগ কমেছে রাজস্ব আয়। আর বছরের শুরুতে রাজস্ব আয়ের টার্গেট নির্ধারণ ছিল ৪ হাজার ৬৯২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

এ দিকে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি খাতের পণ্য হ্যান্ডলিং করে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় হয়েছে ৩২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজে ২০৫ কোটি টাকা ব্যয় হওয়ার পরও (৯১ কোটি ৯৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে) ১১৫ কোটি টাকা মুনাফা (লাভ) অর্জন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৩২৯ কোটি ১২ লাখ টাকা আয় এবং ১৯৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় হওয়ার পরও বিগত ওই বছরে ১৩৩ কোটি টাকা বন্দরের মুনফা অর্জন হয়। রাজস্ব আদায়ে মোংলা কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মাদ সেলিম শেখ বলেন, করোনা প্রভাব পড়েছে বিশ্ব বাজারে। যে কারণে চীন নির্ভর আমদানি-রপ্তানি কমেছে। এছাড়া আমদানি করা রিকন্ডিশন গাড়ী রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত। গাড়ীর এ খাতে ভাটা পড়ায় রাজস্ব কমেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রাজস্ব আয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বিগত বছরের তুলনায় বিদেশ নির্ভর খাদ্যশস্য আমদানি হ্রাস এবং করোনাকালীন সময় বেশির ভাগ (অধিক ড্রাফটের) বাণিজ্যিক জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ঘুরে যথা সময় মোংলা পৌঁছাতে পারেনি। তাই বন্দরের আয় গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গেত অর্থ বছরে বেশি মুনাফা অর্জন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরও বলেন, সমুদ্র এ বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ইতিমধ্যে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামীতে বছরে প্রায় ১০ লাখ টিইউজ কন্টেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। চলমান বিশ্বব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে উঠলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের আয় আরও বৃদ্ধি পাবে।

আনন্দবাজার/সুজন

সংবাদটি শেয়ার করুন